ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বজয়ী আকবরদের নিয়ে নানা পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ১১:৫৯, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বিশ্বজয়ী আকবরদের নিয়ে নানা পরিকল্পনা

মিথুন আশরাফ ॥ বিশ্বকাপ জিতে দেশে ফিরে বুধবারই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছ থেকে পেয়েছেন লালগালিচা সংবর্ধনা। সেই সঙ্গে ক্রিকেটপ্রেমীদের ভালবাসা তো আছেই। এর মাঝেও একটা অপেক্ষা যেন বিশ্বকাপ জয়ী যুব ক্রিকেটারদের মনের মধ্যে লুকিয়ে ছিলই। কখন যাবেন গ্রামের বাড়ি। যখন নিজ বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সবার সঙ্গে দেখা করবেন। দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় ধরে জমানো কত কথা আছে। কখন তা বলবেন বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনদের। বৃহস্পতিবার সেই অপেক্ষা ফুরালো। বিশ্বজয়ীরা নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন। সেখানে পরিবারের কাছে যাওয়ার আগেই ভালবাসায় সিক্ত হয়েছেন। সোনালি ট্রফি নিয়ে দেশের মাটিতে পা রেখেই বাড়ি ফেরার তাড়া ছিল। বিসিবি প্রত্যেক ক্রিকেটার ও কোচদের জন্য বাড়ি ফেরার ব্যবস্থাও করেছেন। গ্রামের বাড়িতে কেউ বিমানে গিয়েছেন। কেউ গিয়েছেন বাসে করে। ক্রিকেটারদের স্বজনরা অবশ্য বুধবারই ঢাকায় এসে ক্রিকেটারদের সঙ্গে দেখা করেছেন। কিন্তু নিজ বাড়িয়ে গিয়ে শান্তিমতো বসে, মার হাতের রান্না করা খাবার খাওয়ার অপেক্ষা বৃহস্পতিবারই মিটেছে ক্রিকেটারদের। ফাইনাল জেতানো অধিনায়ক আকবর আলী, পেসার শরিফুল ইসলাম ও শাহিন আলমের বাড়ি সৈয়দপুরে। তারা প্রথমে বিমানে করে যান। এরপর গাড়িতে করে বাড়িতে পৌঁছান। বুধবার যখন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখেন ক্রিকেটাররা সেখানে তাদের দেখতে যে উপচেপড়া ভিড় ছিল তা মিলেনি। তবে নিজ গ্রামের মানুষজন হাজির হন। তাতে জোয়ার তৈরি হয়। বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে করে প্রচুর ভিড় ঠেলে এগিয়ে যেতে হয়েছে আকবর, শরিফুল, শাহিনের। আকবর ফাইনাল ম্যাচটি যেভাবে ধৈর্য ধরে, দৃঢ়তা দেখিয়ে জিতিয়েছেন তাতে তাকেই বেশি মনে রাখা হয়েছে। আর তাই আকবরকে নিয়েই বেশি উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। বিমানবন্দর থেকে রাস্তায় আসতেই হাজার হাজার ভক্ত ‘আকবর ভাই, আকবর ভাই’ বলে ধ্বনি তোলেন। বিমানবন্দরের ভেতরে ও বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার দর্শককে হাত নেড়ে অভিনন্দন জানান আকবর। ভিড় ঠেলে গাড়িতে ওঠার আগে সবার উদ্দেশে তিনি বলেন- ‘আবার দেখা হবে, কথা হবে’। আকবরের নেতৃত্বেই প্রথমবারের মতো কোন বিশ্ব আসরে শিরোপা জেতে বাংলাদেশ। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে তার করা অপরাজিত ৪৩ রানেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। ম্যাচসেরার পুরস্কারও ওঠে তার হাতে। তাই আকবরকে নিয়ে উচ্ছ্বাস বেশি থাকে। তবে বাকিরাও নিজ নিজ গ্রামে বিশেষ সম্মান পান। সংবর্ধনা পান। বাসে করে বগুড়া যান তানজিদ হাসান তামিম এবং তৌহিদ হৃদয়। বিমানে গেলে তাদের সৈয়দপুর নেমে আবার গাড়িতে করে যেতে হবে। তাই বাসেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা। বাস থেকে নামতেই ফুলেল শুভেচ্ছা দেয়া হয় তাদের। সামনে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে পুলিশী নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে তাদের নিয়ে আসা হয় বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায়। সংবর্ধনা দেয়া হয়। বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদ যখন বিমানে করে কক্সবাজার পৌঁছান তখনও প্রচুর মানুষের ভিড় থাকে। বিমানে করে চট্টগ্রামে যান পারভেজ হোসেন ইমন এবং শাহাদাত হোসেন। ইমন ফাইনালে চোট পেয়েও আবার দলের স্বার্থে মাঠে নামেন। ২৫ রান করার পর মাঠ ছাড়েন। এরপর আবার নেমে ৪৭ রান করে আউট হন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস উপহার দেন। আর শাহাদাত তো আইসিসির ঘোষিত বিশ্বকাপের সেরা একাদশেই সুযোগ করে নেন। এ দুইজন চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে নামার পর বাইরে আসতেই দেখেন মানুষের ঢল নেমেছে। তানজিম হাসান সাকিব বিমানে করে সিলেটে যেতেও একই অবস্থা দেখেন। মেহরাব হোসেন যান রাজশাহী। আর অভিষেক দাস বিমানে যান যশোর। সবারই একই অবস্থা হয়। বাসে করে চাঁদপুরে যেতেই শামিম হোসেন ও সেমিফাইনালের সেঞ্চুরিয়ান মাহমুদুল হাসান জয় দেখেন এত মানুষ তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। দুই ক্রিকেটারকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। সংবর্ধনাও দেয়া হয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৩তম অনুর্ধ-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলতে গত ৩ জানুয়ারি দেশ ছাড়েন যুব ক্রিকেটাররা। পরেরদিন দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছান। সেখানে গিয়ে শুরুতে পোচেফস্ট্রুমের সেনওয়েস পার্কে ৭ জানুয়ারি আফগানিস্তান অনুর্ধ-১৯ ও ৯ জানুয়ারি পোচেফস্ট্রুমের অনুর্ধ-১৯ ক্রিকেট দলের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেন। এরপর বিশ্বকাপের প্রস্তুতিপর্বে ১৩ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়া ও ১৫ জানুয়ারি নিউজিল্যান্ড অনুর্ধ-১৯ দলের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেন। প্রস্তুতি ম্যাচেই অসাধারণ পারফর্মেন্স করে বুঝিয়ে দেন এবার কিছু একটা করে দেখাবেন। ফাইনালে খেলার স্বপ্ন নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়ে যে দল বিশ্বচ্যাম্পিয়নই হয়ে যাবে তা শুরুতে আসলে কেউই ভাবেনি। কিন্তু যতই দিন যেতে থাকে যুব ক্রিকেটারদের নিয়ে আশা ততই বাড়তে থাকে। গ্রুপপর্বে জিম্বাবুইয়ে, স্কটল্যান্ড যুব দলকে উড়িয়ে দেয়ার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। তাতেও বাংলাদেশ যুব দলকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া থেকে দূরে রাখা যায়নি। অপরাজিত থেকেই কোয়ার্টার ফাইনালে খেলে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা যুব দলকেও পাত্তা দেয়নি। সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ড অনুর্ধ-১৯ দলকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো যখন ফাইনালে উঠে যায় আকবরবাহিনী, তখনই প্রতিপক্ষ ভারত যুব দল থাকলেও শিরোপা জয়ের প্রত্যাশা বেড়ে যায়। সেই প্রত্যাশা পূরণও করেন আকবর, ইমন, মাহমুদুল, রকিবুল, শরিফুল, অভিষেকরা। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ভারত যুব দলকে বৃষ্টি আইনে ৩ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয় করে নেন বাংলাদেশ যুবারা। দেশের মানুষকে বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দ দেন। উল্লাসে ফেটে পড়েন দেশের জনগণ। ক্রিকেটপ্রেমীরা বাঁধভাঙ্গা উল্লাস করেন। ৯ ফেব্রুয়ারি দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে উজ্জ্বল দিন হয়ে থাকে। ক্রিকেটে ইতিহাস গড়া দিনে পরিণত হয়। এর আগে ক্রীড়াঙ্গনে যে কখনাই এত বড় অর্জন মিলেনি। এখন দেশবাসি বলতে পারেন, আমরা বিশ্বকাপ জয়ী দেশ। সেই প্রাপ্তি এনে দিয়েছেন বাংলাদেশ যুবারা। তাদের বিশেষ সংবর্ধনা প্রাপ্যই ছিল। সংবর্ধনা দেশের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিসিবির কাছে মিলেছেও। এখন অপেক্ষা কখন গণসংবর্ধনা দেয়া হবে। সেই সংবর্ধনা আগামী সপ্তাহে যে কোন একদিন মিলেও যাবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থেকে সেই গণসংবর্ধনা দিবেন। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তা বলেছেন।
×