ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভুয়া নিরীক্ষা দিয়ে মিরা এ্যাগ্রোর বিরুদ্ধে টাকা তোলার অভিযোগ

প্রকাশিত: ১১:৫২, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ভুয়া নিরীক্ষা দিয়ে মিরা এ্যাগ্রোর বিরুদ্ধে টাকা তোলার অভিযোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভুয়া নিরীক্ষকের নিরীক্ষা প্রতিবেদন দিয়ে শেয়ারবাজার থেকে টাকা উত্তোলনের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে চেষ্টা করেছে মিরা এ্যাগ্রো ইনপুটসের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তদন্তে ভুয়া নিরীক্ষার বিষয়টি উঠে আসে। কোম্পানিটির ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছে এএএ ফাইন্যান্স এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট। কোম্পানিটির শেয়ারবাজার থেকে ৫ কোটি টাকা উত্তোলনের আবেদন করেছিল। মিরা এ্যাগ্রো ইনপুটস ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর ১৯) আর্থিক হিসাব দিয়ে শেয়ারবাজার থেকে ৫ কোটি টাকা উত্তোলনের আবেদন করে। যে আর্থিক হিসাব ‘পিনাকি এ্যান্ড কোম্পানি’ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দিয়ে নিরীক্ষার কথা জানানো হয় ড্রাফট প্রসপেক্টাসে। কিন্তু ডিএসইর তদন্তে মিরা এ্যাগ্রোর আর্থিক হিসাব নিরীক্ষা করেনি বলে জানিয়েছে পিনাকি এ্যান্ড কোম্পানি। এমন প্রতারণার দায়ে ইস্যু ম্যানেজারসহ মিরা এ্যাগ্রোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার কথা ভাবছে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ। সম্প্রতি আয়োজিত এক পর্ষদ সভায় মিরা এ্যাগ্রোর ভুয়া নিরীক্ষা নিয়ে পরিচালকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। নিরীক্ষকের উপরে আস্থা রেখে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করলেও তারাই প্রতারণার বড় হাতিয়ার হয়ে উঠেছে বলে সভায় অনেকে অভিযোগ করে। এ সমস্যা কাটিয়ে তুলতে ভবিষ্যতে কঠোর ভূমিকা পালন করবে ডিএসই। আর মিরা এ্যাগ্রো ও তার ইস্যু ম্যানেজারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) বিষদভাবে অবহিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ওই সভায়। ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) চেয়ারম্যান সি কিউ কে মোস্তাক আহমেদ বলেন, সোমবার এফআরসির কাউন্সিল মিটিংয়ে পিনাকি এ্যান্ড কোম্পানির সাবেক পার্টনার নারায়ণ রায়ের মিরা এ্যাগ্রোর আর্থিক হিসাব নিরীক্ষার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সভায় আইসিএবি সভাপতি জানিয়েছেন, নারায়ণ রায় নিরীক্ষা কার্যক্রম করার কথা না। সে এখন নিরীক্ষা কাজে নিষিদ্ধ এবং আপীলের সমাধান হয়নি। তারপরেও আমরা আইসিএবি সভাপতিকে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেছি। গত ২১ জানুয়ারি নিরীক্ষার সত্যতা জানতে চেয়ে ডিএসই কর্তৃপক্ষ পিনাকি এ্যান্ড কোম্পানিকে চিঠি দেয়। এর উত্তরে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটি গত ২৮ জানুয়ারি ডিএসইকে জানায়, তারা মিরা এ্যাগ্রোর আর্থিক হিসাব নিরীক্ষা করেনি। ডিএসইর এজিএম মোঃ আব্দুল লতিফকে লেখা চিঠিতে সাক্ষর করেছেন পিনাকি এ্যান্ড কোম্পানির সিনিয়র পার্টনার পিনাকি দাস। চিঠিতে পিনাকি এ্যান্ড কোম্পানি জানিয়েছে, মিরা এ্যাগ্রোর ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের আর্থিক হিসাব আমাদের ফার্ম দ্বারা নিরীক্ষা করা হয়নি। এ কোম্পানিটির আর্থিক হিসাব নিরীক্ষায় সাবেক চট্টগ্রাম অফিসের পেড ব্যবহার ও সাবেক পার্টনার নারায়ণ রায় সাক্ষর করেছে। যে শাখাটি ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে বন্ধ হয়ে যায় এবং আইসিএবির নির্দেশনায় ওই শাখাটির দায়িত্বরত পার্টনার নারায়ণ রায়কে ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর পিনাকি এ্যান্ড কোম্পানি থেকে ইস্তফা দেয়া হয়। ফলে নারায়ণ রায় ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বরের পরে পিনাকি এ্যান্ড কোম্পানির নামে নিরীক্ষা কাজ করতে পারেন না। যা করলে আইসিএবির নির্দেশনা ভঙ্গ হবে। চিঠিতে আরও জানানো হয়েছে, নারায়ণ রায়ের নিরীক্ষার বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে জানাচ্ছি। এ বিষয়ে ডিএসই কর্তৃপক্ষও নারায়ণ রায়ের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে এবং আইসিএবিকে অবহিত করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোঃ সাইফুর রহমান বলেন, অতালিকাভুক্ত হওয়ায় মিরা এ্যাগ্রো কমিশনের আইনের আওতায় নেই। তাই নিরীক্ষা নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই। প্রকৃতপক্ষে জনবলের অভাবে তালিকাভুক্ত কোম্পানি নিয়ে কাজ করতেই কমিশনকে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে অতালিকাভুক্ত কোম্পানি নিয়ে কাজ করার সুযোগ কোথায়। এ বিষয়ে ইস্যু ম্যানেজার এএএ ফাইন্যান্স এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান বলেন, নারায়ণ রায় পিনাকি এ্যান্ড কোম্পানির পার্টনার না থাকার বিষয়টি জানার সুযোগ ছিল না। নারায়ণ রায় এখনও মিরা এ্যাগ্রোর ন্যায় অসংখ্য কোম্পানির আর্থিক হিসাব পিনাকির নামে নিরীক্ষা করছে। এ নিয়ে আইসিএবি এবং পিনাকির কোন পদক্ষেপ নেই। কিন্তু আমরা শেয়ারবাজারে আসার জন্য ডিএসইতে ফাইল দাখিল করায় তা উন্মোচন হয়েছে। তবে সম্প্রতি বিএসইসি প্যানেল নিরীক্ষা ফার্মের নামের পাশাপাশি পার্টনারের তালিকা প্রকাশ করায়, সামনে এমনটি হওয়ার সুযোগ থাকবে না।
×