ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের চসিক মেয়র প্রার্থী

প্রকাশিত: ১১:১৭, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের চসিক মেয়র প্রার্থী

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থিতায় কি আসতে পারে নাটকীয় পরিবর্তন? কার ভাগ্যে যাচ্ছে দলের মনোনয়নের টিকেট। মনোনয়ন প্রশ্নে বর্তমান মেয়র আশাবাদী। এরপরও বিবেচনায় রয়েছে একাধিক নতুন মুখ। কেন্দ্রের ভাবনায় রয়েছে আওয়ামী রাজনীতিতে ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক উত্তরাধিকারের পাশাপাশি বিজনেস কমিউনিটির নেতাও। শেষ পর্যন্ত এমন কেউ কি মেয়র পদে মনোনয়ন পেতে পারেন? এ নিয়ে নানা আভাস ইঙ্গিত মিলছে নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন সূত্রে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যেটুকু ইঙ্গিত মিলেছে, তাতে করে চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থিতায় পরিবর্তনের বিষয়টিও চাউর হয়ে আছে। বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনসহ সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ বলয়ে চেষ্টা তদবির-লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। চলছে কেন্দ্রের মন পাওয়ার তৎপরতা। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এ ব্যাপারে তাঁর সিদ্ধান্ত অনেকটাই চূড়ান্ত। কিন্তু আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগ পর্যন্ত আগ্রহী সকলেই মনোনয়ন লাভে আশাবাদী। আগামীকাল শনিবার দলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর পরিষ্কার হয়ে যেতে পারে, কে পাচ্ছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সেই জনপ্রিয় নৌকা প্রতীক। পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে দলীয় সভানেত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর। এমনকি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদান পিছিয়েও যেতে পারে। চসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশন থেকে এ তথ্য জানিয়ে দেয়ার পরই শুরু হয়েছে মেয়র এবং কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে আগ্রহীদের দৌড়ঝাঁপ। এরই মধ্যে ইচ্ছুক প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার মনোনয়ন ফরম গ্রহণ ও জমাদানের শেষদিন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মেয়র পদে প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ১৪ জন। তারা হলেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, সাবেক প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, তাঁর পুত্র মুজিবুর রহমান, সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচর জহুর আহমদ চৌধুরীর পুত্র হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী, চউকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, প্রয়াত সংসদ সদস্য জাসদ নেতা মইনউদ্দিন খান বাদলের স্ত্রী সেলিনা খান, সাবেক প্যানেল মেয়র রেখা আলম চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা পরিষদের মহাসচিব মোঃ ইউনূস, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব) এমদাদুল ইসলাম ও মোঃ ইনসান আলী। আর কাউন্সিলর পদে ফরম সংগ্রম করেছেন প্রায় সাড়ে ৩শ’ জন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার মেয়র পদের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন সাবেক মেয়র এম মনজুর আলম। তিনি বিএনপির সমর্থনে এক মেয়াদে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম নিয়েছি। নেত্রী বিবেচনা করলে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি রয়েছে। এবারের চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়নের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের পরবর্তী কমিটির নেতৃত্বের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে বলে জানা যায়। মহানগর কমিটির মেয়াদ এর মধ্যে শেষ হয়েছে। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর থেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। চসিক নির্বাচনের পরই কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠিত হবে নতুন কমিটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি দল থেকে মেয়র পদকে পৃথক করতে চান তাহলে নিশ্চিতভাবেই কপাল পুড়বে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের। তাছাড়া বর্তমান মেয়রের সময়ে মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গ্রুপিং মাথাচাড়া হওয়ার বিষয়টিও কেন্দ্রকে ভাবাচ্ছে। মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের বাইরে ছিলেন। তবে তাঁর ছিল অনেক কর্মী ও সমর্থকগোষ্ঠী। কিন্তু মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সিটি মেয়র হওয়ার পরও তিনি তাঁর সেই পুরনো গ-ি থেকে বেরিয়ে সকলের হতে পারেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের একটি অংশ তাঁকে চান না, যা অবগত আছে কেন্দ্র। সব মিলিয়ে তিনি রয়েছেন চ্যালেঞ্জের মুখে। চসিক মেয়র পদে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে এখন চলছে একেবারে শেষ সময়ের বিবেচনা। সর্বশেষ সমীকরণে বর্তমান মেয়রের আবারও নৌকা প্রতীক পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত নয়। বরং বিবেচনায় এসেছে একাধিক নতুন মুখ, যারা এর আগে কখনও নির্বাচন করেননি। বৃহস্পতিবার দলীয় বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, নতুন মুখ আসছে চসিকের আওয়ামী লীগের মেয়র পদে। এক্ষেত্রে পারিবারিক ঐতিহ্য যেমন বিবেচনায় আছে, তেমনিভাবে রয়েছে ঢাকা উত্তরের মতো বিজনেস কমিউনিটির কোন নেতাকে টেনে আনা। চসিক নির্বাচনে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ছাড়াও কেন্দ্রের ভাবনায় ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং চট্টগ্রাম বন্দর-পতেঙ্গা আসনের এমপি এমএ লতিফ। বিশেষ করে এমপি লতিফের বিষয়টি ভাবা হচ্ছিল বেশ জোরালোভাবে। কিন্তু দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর, কাস্টমস, ইপিজেড, জ¦ালানি স্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরগুলোর কারণে ওই আসনটি বেশ স্পর্শকাতর হওয়ায় বর্তমান এমপিকে সরিয়ে আনার বিষয়টি আর ভাবছে না কেন্দ্র। সর্বশেষ আওয়ামী লীগের সম্ভাবনাময় প্রার্থী হিসেবে উঁকি দিচ্ছে তিনটি নাম। তারা হলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচর জহুর আহমদ চৌধুরীর পুত্র হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম চেম্বার কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম এবং মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী। চট্টগ্রামে আওয়ামী রাজনীতিতে বিশাল ঐতিহ্য বহন করে জহুর আহমদ চৌধুরীর পরিবার। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সহচর ও বঙ্গবন্ধু সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী। তাঁর পুত্র মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। জহুর আহমদ চৌধুরীর আরেক পুত্র হেলাল উদ্দিন চৌধুরীকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হিসেবে ভাবা হচ্ছে বলে জানাচ্ছে একাধিক সূত্র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণত পরীক্ষিত ও ঐতিহ্যবাহী আওয়ামী পরিবারগুলোকে মূল্যায়ন করে থাকেন। কিন্তু রাজনীতিতে জহুর আহমদ চৌধুরীর অনেক অবদান থাকা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু হত্যার পরবর্তী সময়ে এই পরিবারটি আর সেভাবে মূল্যায়িত হয়নি। বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন যদি কোন কারণে দলীয় মনোনয়ন না পান সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জহুর আহমদ চৌধুরীর পারিবারিক উত্তরাধিকারকে নিয়ে বিশেষভাবে ভাবছেন বলে আভাস রয়েছে। এছাড়া বিবেচনায় আছেন চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী। মনোনয়ন পেতে ইচ্ছুক সকলেই এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন।
×