ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো...

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো...

ফিরোজ মান্না ॥ কবি শহীদুল্লা কায়সার ‘শহীদের মাকে’ কবিতায় লিখেছেন- ‘যে ছেলে তোমার গানের পাগল/ কেমন করে রুখবে তাকে/ঘরে দিয়ে আগল?’ কবিতা গান গল্প উপন্যাসে মায়ের ভাষা বাংলা নিয়ে এভাবেই আবেগ প্রকাশ হয়েছে বাংলা শিল্প সাহিত্যে। ’৫২ ভাষা আন্দোলনে বীর বাঙালীকে প্রেরণা জুগিয়েছে ’৭১ সালের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম। বীর বাঙালী পাকি শাসকগোষ্ঠীকে ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধে পরাজিত করে। দীর্ঘ ১৯ বছরের লড়াই সংগ্রামের পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্থান পেয়েছে। তাই ভাষা আন্দোলনই বীর বাঙালীর প্রেরণার উৎস। ইতোমধ্যে ঢাকায় এসে পৌঁছান পাকিস্তানের কায়েদ-ই-আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। তাদের কখনই ক্ষমা করা হবে না। জিন্নাহর এই বিরূপ মন্তব্যে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ প্রদর্শন ভারত ভাগের পর এটাই ছিল তার প্রথম পূর্ব পাকিস্তান সফর। ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, সেখানে তিনি ভাষণ দেন। তার ভাষণে তিনি ভাষা আন্দোলনকে পাকিস্তানের মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি উল্লেখ করেন এ আন্দোলন সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির বহির্প্রকাশ। কিছু লোকের মাধ্যমে তাদের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে চাইছে। যখন তিনি উর্দুর বিষয়ে তার অবস্থানের কথা পুনরুল্লেখ করেন, উপস্থিত ছাত্রজনতা সমস্বরে ‘নো নো’ বলে চিৎকার করে ওঠেন। এদিন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের একটি প্রতিনিধিদল জিন্নাহর সঙ্গে সাক্ষাত করে। তারা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়ে একটি স্মারকলিপি দেয়। প্রতিনিধি দলে ছিলেন শামসুল হক, কামরুদ্দীন আহমদ, আবুল কাশেম, তাজউদ্দীন আহমদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, আজিজ আহমদ, অলি আহাদ, নঈমুদ্দিন আহমদ, শামসুল আলম ও সৈয়দ নজরুল ইসলাম। কিন্তু জিন্নাহ্ ও খাজা নাজিমুদ্দীনের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিকে একপেশে ও চাপের মুখে সম্পাদিত বলে প্রত্যাখ্যান করেন। অনেক তর্ক-বিতর্ক ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে সভা হয়। ছাত্ররা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য জিন্নাহর কাছে স্মারকলিপি পেশ করে। ২৮ মার্চ জিন্নাহ ঢাকা ত্যাগ করেন, সন্ধ্যায় রেডিওতে দেয়া ভাষণে তার পূর্বেকার অবস্থানের কথাই পুনর্ব্যক্ত হয়। জিন্নাহর ঢাকা ত্যাগের পর ছাত্রলীগ ও তমদ্দুন মজলিশের এক সভা হয়। যেখানে তমদ্দুন মজলিশের আহ্বায়ক শামসুল আলম দায়িত্ব মোহাম্মদ তোয়াহার কাছে হস্তান্তর করেন। পরে তমদ্দুন মজলিশের আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ার জন্য কমিউনিস্টদের দায়ী করে একটি বিবৃতি দেয়। পরে তারা আস্তে আস্তে আন্দোলনের পথ থেকে সরে আসে।
×