ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আজি এ বসন্তে-

প্রকাশিত: ১০:৪১, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

আজি এ বসন্তে-

আজ ফাল্গুনের প্রথম দিন। শুরু হলো বসন্ত। শীতের স্থবিরতা-জড়তা কাটিয়ে উত্তুরে হাওয়ার বদলে আসে দখিনা মলয়। শীতের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে আসে কোকিল। সে এসে তার কুহু কুহু ডাকের ভেতর দিয়ে জানিয়ে দেয় ঋতুরাজের আগমন বার্তা। মানুষ প্রকৃতি রাজ্যের সবচেয়ে সচেতন, সর্বাধিক অনুভূতিসম্পন্ন প্রাণী। আমরা প্রকৃতির রূপ বদল বুঝতে পারি, বুঝতে পারি তারতম্য। অন্য প্রাণীরাও তারতম্য অনেকখানি বুঝতে পারে নিশ্চয়ই। তাই তারাও প্রকৃতির রূপ বদলের সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দেয়। মানুষ বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে আজ প্রবল উচ্ছ্বাস ও আনন্দ। প্রকৃতির অনেক কাছে আসবে মানুষ। আমাদের দেশে আবহমানকাল ধরে আসছে বসন্ত। এবারও এসেছে। শীতের জড়তা কাটিয়ে গাছপালা নতুন পুষ্প-পল্লবে নবরূপে সেজেছে, ফুটেছে ফুল, ডেকেছে কোকিল। এখন মাঝে-মধ্যেই শোনা যায় কোকিলের ডাক। বাংলার গ্রামে গ্রামে ও নগর জনপদে এখনও যেখানে যতটুকু প্রকৃতির শোভা রয়েছে, সেখানে দেখা যাবে নতুন রূপ, নতুন পাতা, নতুন কুঁড়ি, পাখির ওড়াউড়ি ও কলকাকলি। রাজধানীতে আজ অনেকেই সাজবেন নতুন রঙিন বাহারি পোশাকে। বিশেষ করে শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীরা আপ্লুত হবে বসন্ত আবাহনে। নানা অনুষ্ঠান হবে এই নগরীতে। এখনও এই ধারা টিকে আছে অনেকখানি। তবে এসব আরও ব্যাপ্ত করা দরকার। আমরা অনেক বিদেশী পালাপার্বণ অনুষ্ঠানে মেতে উঠি। কিন্তু আমাদের নিজেদেরও অনেক অনুষ্ঠান রয়েছে। সেগুলোর অন্যতম একটি এই বসন্তবরণ। এতে প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের চেনাজানা আরও ঘনিষ্ঠ হবে। প্রকৃতিকে আমরা আরও ভালবাসতে শিখব। কবির কথায়- ‘ফাল্গুনে বিকশিত কাঞ্চন ফুল/ডালে ডালে পুঞ্জিত আম্রমুকুল। চঞ্চল মৌমাছি গুঞ্জরি গায়/ বেণুবনে মর্মরে দক্ষিণ বায়।’ এটা আমাদের বাংলাদেশের চিরায়ত রূপ। আমরা গাই- ‘ওমা ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে।’ এটাও কিন্তু বাংলাদেশের আরেক রূপ। এটাই সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশের নিসর্গ প্রকৃতি। শহরে তুলনামূলকভাবে গাছপালা কম, ফুলগাছও কম। তবু যা আছে সেগুলোই নতুন রূপে সেজে ওঠে। যে কটি ফুলগাছ এখানে-ওখানে আছে তাতে ফুল ফুটবে। ফুল যদি নাও ফোটে তবুও ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। তব অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে/করো না বিড়ম্বিত তারে।’ প্রকৃতির যা-ই আমাদের অবশিষ্ট আছে সেটাই সাজবে বসন্তে। এখন এই বসন্তে ফুল ফুটবে, গাছ কম আর বেশি যা-ই থাক। প্রকৃতির এই অনন্য উপহার মানুষ বরণ করে নেবে মনপ্রাণ দিয়ে। কেননা, এর সঙ্গে জড়িত আমাদের হৃদয়মন, জড়িত আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি। আমাদের জীবনযাপনের ধারা এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সংযুক্ত। আমরা চলেছি এরই ধারাবাহিকতায়। এবার ফাল্গুনের প্রথম দিনেই পড়েছে ভালবাসা দিবস, ভ্যালেন্টাইনস ডে। এটিও ঘটনা। পরস্পরকে ভালবাসার দাবি চিরন্তন। সর্বজনীন। বিশ্বব্যাপী। তদুপরি বসন্তের সঙ্গে ভালবাসার সম্পর্কও অত্যন্ত সুনিবিড়, মধুর ও আবেদনময়। আর তাই বসন্ত ও ভালবাসা একে অপরের পরিপূরক। জয় হোক বসন্তের, জয় হোক ভালবাসার।
×