ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুর্দান্ত রাহুলে স্বস্তি খুঁজছে ভারত

প্রকাশিত: ১১:৫০, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

দুর্দান্ত রাহুলে স্বস্তি খুঁজছে ভারত

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ নিউজিল্যান্ড সফরে মুদ্রার দুই পিঠই দেখা হয়ে গেল ভারতের। প্রথমে ৫-০ ব্যবধানে টি২০ সিরিজ জিতে ইতিহাসগড়া বিরাট কোহলির দল ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ ৩-০ ব্যবধানে। টানা দুই হারে সিরিজ খোয়ানোর পরই অধিনায়ক জানিয়েছিলেন, টি২০ বিশ্বকাপের বছরে টি২০তে দাপুটে নৈপুন্যে খুশি তিনি, ওয়ানডের ফল নিয়ে অতটা ভাবছেন না। কিন্তু ভাবনাটা আসতে বাধ্য। বিশ্বকাপে এই কিউইদের কাছে হেরেই সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল। এরপর ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জিতলেও দুটি সিরিজেই একটি করে ম্যাচ হারতে হয়েছিল। এবার দীর্ঘ ৩১ বছরে তিন বা তার বেশি ম্যাচের সিরিজে হোয়াইটওয়াশ। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে পরশু হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর শেষ ওয়ানডেতে ৫ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরে গেছে মোড়ল দেশটি। এত কিছুর মাঝে ভারতের প্রাপ্তি লোকেশ রাহুলের ফর্ম। ওপেনিংয়ে, চার নম্বরে কিংবা পাঁচ নম্বরে। ওয়ানডে কিংবা টি২০, উইকেটের সামনে-পেছনে সমানে ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়েছেন কর্নাটক থেকে উঠে আসা ২৭ বছর বয়সী এ ক্রিকেটার। ‘এটা ঠিক টি২০’র পর ওয়ানডেতে আমরা ছন্দ ধরে রাখতে পারিনি। প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ডও দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছে। তবে সফরে এ পর্যন্ত আমাদের প্রাপ্তি কম নয়। সংক্ষিপ্ত ফারমেটে দীর্ঘদিন ধরে আমরা ব্যাটিংয়ে চার-পাঁচ নম্বরে কার্যকর কাউকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। লোকেশ সেটা পূরণ করেছে। সঙ্গে শ্রেয়াস আইয়ারও ভরসা দিচ্ছে। এতে বড় একটা সমস্যার সমাধান হয়েছে। আগেও বলেছি, টি২০ বিশ্বকাপের বছরে টি২০’র পারফর্মেন্স নিয়ে আমরা খুশি। কিন্তু ওয়ানডেতে আরও ভাল হওয়া উচিত ছিল। ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ সামনে রেখে টেস্ট সিরিজটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এখন সেদিকে নজর দিতে চাই’ বলেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। ২১ ফেব্রুয়ারি শুরু দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট। সফরে পাঁচ ম্যাচের টি২০ সিরিজের দুটি সুপার ওভার জিতেছিল সফরকারীরা, একটিতে জয় ৭ রানে। সুতরাং ফল ৫-০ দেখালেও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল কোহলিদের। অবশ্য টি২০ ইতিহাসে এতবড় ব্যবধানে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশের দ্বিতীয় উদহারণ আর নেই। সেই তাদেরই ওয়ানডেতে হার ৩-০ ব্যবধানে। ৩১ বছর পর কোন ওয়ানডে সিরিজে সব ম্যাচ হারল ভারত। ১৯৮৮-১৯৮৯ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ৫-০ ব্যবধানে হেরেছিল তারা। ২০০৬-২০০৭এ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে অবশ্য ৪-০ ব্যবধানে সিরিজ হেরেছিল, সেবার একটি ম্যাচ ভেসে যায় বৃষ্টিতে। সেই ম্যাচে অবশ্য টসও সম্ভব হয়নি। এছাড়া ২০১৪ সালে এই নিউজিল্যান্ডে ৫ ম্যাচের সিরিজ হেরেছিল ৪-০ ব্যবধানে, অন্যটি হয়েছিল টাই। সফরে এত উত্থান-পতনের মাঝে রাহুল-আইয়ারের পারফর্মেন্স মুগ্ধ করার মতো। দুটি হাফ সেঞ্চুরির সাহায্যে ৫৬ গড়ে ২২৪ রান করেন রাহুল। দ্বিপক্ষীয় কোন টি২০ সিরিজে যা রেকর্ড। একটি করে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরিতে ওয়ানডে সিরিজে ১০২ গড়ে রান ২০৪। এতটুকুতে রাহুলের মর্ম বোঝা যাবে না। ঋষভ পন্থ ইনজুরিতে পড়ায় সেই অস্ট্রেলিয়া সিরিজ থেকেই নিয়মিত উইকেটকিপিং করছেন তিনি। সেখানেও দারুণ পারফর্মেন্স করে চলেছেন। আর গত দুই মৌসুম ধরে ব্যাটিংয়ে চার ও পাঁচ নম্বর নিয়ে বেশ কঠিন সময় পার করছে ভারত। কেদার যাদব, মহেন্দ্র সিং ধোনি, পন্থ, মানীষ পা-েসহ আরও অনেককে দিয়ে চেষ্টা করা হয়েছে, কেউই সফল হননি। সাম্প্রতিক সিরিজগুলোয় রাহুল সেখানে ভরসার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। পন্থের পর দুই ওপেনার শিখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মার ইনজুরির কারণে ওপেনিংয়ে, তিন, চার ও পাঁচ নম্বরেÑ প্রতিটি পজিশনে জাত চিনিয়েছেন রাহুল। দারুণ ধারাবাহিকতায় একাধিক ম্যাচ বের করে এনেছেন স্টাইলিশ এই ব্যাটসম্যান। অনেকের মতে, রাহুলের যতœ নেয়া উচিত, তাকে দিয়ে কিপিং করানো ঠিক হচ্ছে না। তিনি নিজে অবশ্য বলেছেন ভিন্ন কথা, ‘জাতীয় দলে এটি নতুন অভিজ্ঞতা হলেও আইপিএল এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে আমি কিন্তু দীর্ঘদিন কিপিং করেছি। এটা আমাকে ব্যাটিংয়ে ভাল করতে সাহায্য করছে। কাছ থেকে প্রতিপক্ষ বোলারদের দেখছি। অধিনায়কের সঙ্গে শেয়ার করছি। সর্বোপরি উপভোগ করছি।’
×