ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আকবরদের এক নজর দেখতে বিমানবন্দর থেকে মিরপুর পর্যন্ত ক্রিকেটপ্রেমীদের ভিড়- উৎসব

ফুলের মালায় বরণ করা হলো বিশ্বজয়ীদের

প্রকাশিত: ১১:৪৯, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ফুলের মালায় বরণ করা হলো বিশ্বজয়ীদের

মিথুন আশরাফ ॥ বিশ্বকাপ জয় করে বুধবার দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশ যুবারা। বিমানবন্দরে বিশ্বকাপ জয়ী যুব ক্রিকেটারদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলসহ বিসিবির কর্মকর্তারা ফুলের শুভেচ্ছায় বরণ করে নেন আকবরবাহিনীকে। বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে করে দেশে ফিরেন যুব ক্রিকেটাররা। তাদের বরণ করে নিতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উপচেপড়া ভিড় ছিল। লাখ লাখ মানুষ বিমানবন্দরে হাজির হন। রাস্তায় ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে ক্রিকেটারদের বরণ করে নেন। বারবার একটাই স্লোগান শোনা যায়, ‘বিশ্বকাপ জিতেছে কে, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’। বিমানবন্দরের পথে এবং বিমানবন্দরের ভেতর এত মানুষ ছিল যে পরিস্থিতি সামাল দিতে নিরাপত্তাকর্মীরাও হিমশিম খান। বাঁধভাঙ্গা উল্লাস হয়েছে। মানুষের ঢল নামে। দেশের মাটিতে পা রাখার পর বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিক কাজ শেষে বেরিয়ে আসেন ক্রিকেটাররা। এরপর ক্রিকেটারদের জন্য থাকা ‘বিশ্বচ্যাম্পিয়ন’ লেখা বাসে করে ক্রিকেটারদের মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে নিয়ে আসা হয়। স্টেডিয়ামের ভেতরের মাঠে ছোট্ট একটি জায়গা তৈরি করে ক্রিকেটারদের সংবর্ধনাও দেয়া হয়। সংবর্ধনা শেষে সাংবাদিক সম্মেলনও হয়। এরপর ঢাকায় যারা থাকেন তারা বাসায় চলে যান। ঢাকার বাইরে থাকা ক্রিকেটাররা মিরপুর স্টেডিয়ামের একাডেমি ভবনে রাতে থাকেন। আজ সকালেই তারা নিজ নিজ বাড়িতে পরিবারের কাছে চলে যাবেন। অনেক পথ পেরিয়ে, অনেক কষ্টের পর বিশ্বকাপ জিতেন যুব ক্রিকেটাররা। ২০১৮ সালের যুব বিশ্বকাপের পর থেকেই এই দলটিকে নিয়ে বিশেষ অনুশীলনে রাখা হয়। বিদেশের মাটিতে টানা খেলানো হয়। যেন আত্মবিশ্বাস বাড়ে। সেই আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর কাজ হয়েছেও। ফাইনালে ভারত যুব দলকে বৃষ্টি আইনে ৩ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়নও হয় বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৯ ক্রিকেট দল। ইতিহাস গড়ে। এর আগে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে এ রকম সাফল্য ছিল না। এবার যুব ক্রিকেটাররা ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় সাফল্যটিই এনে দিয়েছেন। এ সাফল্য পাওয়ার পর অধিনায়ক আকবর আলী, যিনি ফাইনালে অপরাজিত ৪৩ রানের ইনিংস খেলে দলকে চ্যাম্পিয়ন করান তিনি বলেন, ‘এটি স্বপ্ন বাস্তব হওয়ার মতো। আমরা সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। এটা গত দেড়-দুই বছরে আমাদের কঠোর পরিশ্রমের ফল। আমরা এতদিন একটা দল হয়ে খেলেছি। ম্যাচে সেটার প্রভাবই পড়েছে। আশা করছি এই জয় আমাদের ক্রিকেটকে এগিয়ে যেতে সহায়ক হবে।’ যুব ক্রিকেটারদের বরণ করে নিতে কোন রকমের ছাড় দেয়নি বিসিবি। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শুধু যুবা ক্রিকেটারদেরই ছবি টাঙ্গানো হয়েছে। শত শত বাইক সকাল থেকেই হাজির। ক্রিকেটারদের বাসও প্রস্তুত। সেই বাস দিয়ে যখন ক্রিকেটাররা বিমানবন্দর থেকে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আসেন তখন লাখ লাখ মানুষ হাজির থাকেন। শত শত বাইক বাসের সামনে এগিয়ে যেতে থাকে। সবার হাতে থাকে পতাকা। এমনকি ট্রাকে করেও অনেক সমর্থক ক্রিকেটারদের বাস লক্ষ্য করে এগিয়ে যেতে থাকে। তাদের হাতেও বাংলাদেশের পতাকা থাকে। ঢোল বাজিয়ে আনন্দ উদযাপনও করেন। বিশ্বকাপ জয়, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। এই প্রাপ্তি এনে দিয়েছেন যুব ক্রিকেটাররা। তবে নেপথ্যের নায়ক যারা তাদের অবদান অনস্বীকার্য। প্রধান কোচ শ্রীলঙ্কান নাভেদ নাওয়াজই যেমন আছেন। রয়েছেন ট্রেনিং এ্যান্ড স্ট্রেংথ কোচ ইংল্যান্ডের রিচার্ড স্টোনিয়ের। ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি মিলেছে। যুব ক্রিকেটারদের হাত ধরেই এই প্রাপ্তি এসেছে। আর তাই জাতীয় দলের মুশফিকুর রহিম মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে যুব ক্রিকেটারদের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে ‘স্যালুট’ও জানিয়েছেন। মুহূর্ত উদ্?যাপন করলেন ছোট ভাইদের সম্মান জানিয়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে সে ছবি পোস্টও করেছেন দেশের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান। এর আগে যুব বিশ্বকাপে শিরোপা জয়ের পর জাতীয় দলের শীর্ষ তারকাদের অনেকেই সামাজিক ফেসবুকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন আকবর আলীর দলকে। ফাইনালের দিনই যুবাদের প্রেরণা জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তিনি জানান, ‘মাঠে তোমাদের সেরাটা দাও। পুরো দেশ তোমাদের সঙ্গেই আছে। আজকের (রবিবার) ম্যাচটাকে ঐতিহাসিক ম্যাচ বানিয়ে ফেলো। আমরা তোমাদের নিয়ে গর্বিত।’ বাংলাদেশ সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও শুভেচ্ছা জানান। এমনদিন বাংলাদেশ আর কখনও দেখেনি। ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশ ক্রিকেটে ঐতিহাসিক দিন। বিশ্বজয়ের দিন। এদিনে যুবা ক্রিকেটাররা বিশ্বকাপ জিতে দেশের মানুষকে আনন্দে ভাসিয়েছেন। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয়ের পরও আনন্দে আত্মহারা হয়েছেন দেশের মানুষ। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানোর পরও উৎসব হয়েছে। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করার পরও ক্রিকেটারদের বরণ করে নেয়া হয়েছে।
×