ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করায় ৩৭১ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল

প্রকাশিত: ১১:৩৫, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করায় ৩৭১ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করায় গত বছর ৩৭১টি প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স সাসপেন্ড ও বিন লক করেছে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। একইসঙ্গে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে ১০২ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে ১০২টি বিভাগীয় মামলা ও ১১টি ফৌজদারি মামলাও করেছে সংস্থাটি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। এনবিআর থেকে জানা গেছে, ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের অধীনে সক্রিয় বন্ড লাইসেন্স রয়েছে ৩ হাজার ৮৩০টি। নিষ্ক্রিয় লাইসেন্স রয়েছে ২ হাজার ৯৮৩টি আর মোট বন্ড লাইসেন্স রয়েছে ৬ হাজার ৮১৩টি। বিভিন্ন সময়ে কাস্টমস কর্মকর্তাদের অভিযান, প্রিভেনটিভ অভিযান ও নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের বন্ড অনিয়ম ও রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটিত হয়। সে অনুযায়ী অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বন্ড লাইসেন্স সাসপেন্ড ও বিন লক করে দেয় ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। ফলে কোন লাইসেন্স সাসপেন্ড বা বিন লক করা হলে এসব লাইসেন্স ব্যবহার করে আর কেউ বন্ড সুবিধায় পণ্য আমদানি বা রফতানি করতে পারে না। আরও জানা গেছে, রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বন্ড সুবিধার আওতায় পণ্য তৈরি ও রফতানির পরিবর্তে কাঁচামাল এনে খোলা বাজারে বিক্রি করে দেয়। এতে একদিকে সরকার যেমন বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে অন্যদিকে দেশীয় শিল্প কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি প্রকৃত শুল্ককর পরিশোধ করে যেসব ব্যবসায়ী বাণিজ্যিকভাবে পণ্য আমদানি করে তারা বাজারে অসমপ্রতিযোগিতার কারণে ঝরে পড়ছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, কাস্টমস কর্মকর্তাদের দুর্বল মনিটরিংয়ের কারণে আগে নিষ্ক্রিয় ছিল ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। সম্প্রতি নতুন এনবিআর চেয়ারম্যানের নির্দেশে আবার বিশেষ অভিযান শুরু করেছে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট সূত্রে জানা যায়, গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ৩৭১ প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স সাসপেন্ড এবং বিন লক করা হয়েছে। একইসঙ্গে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের কারণে ১০২টি বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। যেখানে রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ ১০২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ফাঁকি দেয়া রাজস্ব ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে আদায় হয়েছে ৪৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। একইসঙ্গে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট ১১টি ফৌজদারি মামলা করেছে। যেখানে আটক পণ্য রয়েছে ৩২০ দশমিক ৯৬ মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য ২৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। জড়িত আসামির সংখ্যা ৫৬ জন। এর মধ্যে কয়েকজন আসামিকে আটকও করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আরও জানা গেছে, ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট সম্প্রতি ইসলামপুরে অভিযান চালিয়ে ২৪৭ দশমিক ৪২ মেট্রিক টন ফেব্রিক্স আটক করেছে। যার বাজার মূল্য ১৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। সিরাজগঞ্জে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় ৩৮ দশমিক ২৫ মেট্রিক টন সুতা। যার বাজার মূল্য ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। নারায়ণগঞ্জে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় ৩৫ দশমিক ২৯ মেট্রিক টন সুতা। যার বাজার মূল্য ৪ কোটি টাকা। এছাড়া গত ৯ ফেব্রুয়ারি দিনভর রাজধানীর নয়ানগরে অভিযান চালিয়ে ১০০ মেট্রিক টন কাগজ আটক করা হয়। যার বাজার মূল্য ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ৬৯৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। যার মধ্যে অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে প্রতিষ্ঠানটি আদায় করেছে ১ হাজার ৭৫৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আর গত অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১ হাজার ৩৯৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরের চেয়ে রাজস্ব আহরণে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের সহকারী কমিশনার (প্রিভেনটিভ) মোঃ আল-আমিন বলেন, ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের প্রিভেনটিভ তদারকি বাড়িয়ে দেয়ার কারণে সাম্প্রতি বন্ডে অপব্যবহার কমে এসেছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দিনে ও রাতে সমান তালে আমরা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। একইসঙ্গে আমাদের ধারাবাহিকতা বজায় থাকায় রাজস্ব আহরণও বেড়েছে আমাদের। অর্থাৎ আমরা সর্বাত্মকভাবে আমাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, অবৈধ সকল বন্ডেড পণ্যের ব্যবসার উৎস, গন্তব্য ও মাধ্যম চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা এরইমধ্যে অনেক ফৌজদারি মামলা করেছি। মামলায় আসামিরাও আটক হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য দেশীয় ব্যবসার সম্প্রসারণ করা এবং দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। আমরা সেই কাজটি যথারীতি করে যাচ্ছি।
×