ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সারাদেশে করোনাভাইরাসে স্ক্রীনিংয়ের সংখ্যা ১ লাখ ছাড়িয়ে গেছে, এখনও কেউ আক্রান্ত হননি

শাহজালালে আগত যাত্রী বিশাল মনিটরে দেখতে পাচ্ছেন দেহের তাপমাত্রা

প্রকাশিত: ১১:১৩, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

শাহজালালে আগত যাত্রী বিশাল মনিটরে দেখতে পাচ্ছেন দেহের তাপমাত্রা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এখন থেকে আগত যাত্রী সরাসরি তার দেহের তাপমাত্রা নিজেই দেখতে পাবেন বিশাল মনিটরে। এজন্য স্বাস্থ্যকর্মীর সাহায্য লাগবে না। বিমানবন্দরে থামার্ল স্ক্যানারের পাশে লাগানো হয়েছে বিশাল মনিটর। এদিকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সারাদেশে স্ক্রিনিং করার সংখ্যা ১ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে শুধু হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই স্ক্রিনিং করা হয়েছে ৪০ হাজার ১২৩ জনকে। এছাড়া সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাস আক্রান্ত বাংলাদেশীর মোট ১৯ রুমমেটকে কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, চীন থেকে সরকারী উদ্যোগে আনার বিষয়ে কোন সুরাহা না হলেও কেউ যদি নিজ দায়িত্বে ফিরতে চান- সেটা পারবেন। হুবেই প্রদেশ থেকে ফিরতে আরও ১৭১ বাংলাদেশী আবেদন জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি মঙ্গলবার এ কথা বলেন। একই দিন আইইডিসিআর জানিয়েছে এখনও বাংলাদেশে কেউ করোনায় আক্রান্ত হননি। এদিকে বিমানবন্দরের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান জানিয়েছেন, বিমানবন্দরে চীন থেকে আগত ফ্লাইট বোডিং ব্রিজের পরিবর্তে আউটার বে-তে রেখে যাত্রী নামানো হচ্ছে। ওদের আলাদাভাবে নিচের বিশেষ গেট দিয়ে সরাসরি ইমিগ্রেশনে নিয়ে বের করা হচ্ছে। মঙ্গলবার সকালে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিভিন্ন ফ্লাইটের যাত্রীরা এখন টিভি স্ক্রিনে থার্মাল স্ক্যানারে পরীক্ষার ফলাফল নিজেরাই দেখতে পাচ্ছেন। এতদিন ফলাফল শুধুমাত্র বিমানবন্দরে কর্মরত স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা দেখতে পারতেন। প্রত্যেক যাত্রী যেন থার্মাল ও হ্যান্ডহেল্ড স্ক্যানারে (জ্বরমাপার যন্ত্র) পরীক্ষার ফলাফল সচক্ষে দেখতে পারেন সেজন্য ৫৫ ইঞ্চি মনিটর বসানো হয়েছে। ১০০ ডিগ্রী ফারেনহাইটের বেশি জ্বর হলে যাত্রীর চেহারায় (বাইরের অংশ) লাল বাতি ও জ্বর না থাকলে সবুজ বাতি জ্বলে উঠবে। এছাড়া আগত যাত্রীদের স্বাস্থ্য ডেস্কে এসে দ্রুত স্ক্রিনিং সম্পন্ন করার অনুরোধ জানিয়ে অডিও বার্তাও প্রচার করা হবে। বিমানবন্দর স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে- দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে অধিকতর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে আগত সব ফ্লাইটের যাত্রীদের থার্মাল স্ক্যানারে স্ক্রিনিং করার কারণে যাত্রীজট তৈরি হচ্ছে। ফ্লাইট থেকে নামার পর স্ক্রিনিং ও ইমিগ্রেশন শেষ করতে আগের চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগছে। দু-তিনটি ফ্লাইট একযোগে আসলেই শত শত যাত্রীর উপস্থিতিতে ইমিগ্রেশন এলাকা হাটবাজারে পরিণত হয়। যাত্রীদের অভিযোগ, তারা সুস্থ থাকলেও স্ক্রিনিং ও ইমিগ্রেশন অহেতুক বিলম্ব ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। জানতে চাইলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, বর্তমানে সব ফ্লাইটের যাত্রীদের স্বাস্থ্য স্ক্রিনিং করতে হচ্ছে বলে সময় বেশি লাগছে। শতকরা ৯৮ শতাংশ যাত্রী নরমাল জোন দিয়ে স্ক্রিনিং করায় সময় বেশি লাগছে। এতে যাত্রীদের অনেকে অধৈর্য হয়ে পড়ছেন। তিনি পাল্টা প্রশ্ন রাখেন, বর্তমান করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি মোকাবেলায় দেশের স্বার্থ নাকি যাত্রীদের স্বার্থ বড়? শত শত যাত্রীর প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষায় সময় বেশি লাগছে বলে স্বীকার করে দেশের স্বার্থে সময় বেশি লাগলেও স্ক্রিনিংয়ে সহায়তা করার জন্য যাত্রীদের অনুরোধ জানান তিনি। এতদিন থার্মাল স্ক্যানারে কী ফলাফল আসল তা শুধুমাত্র চিকিৎসক ও নার্সরা দেখতে পারতেন। যাত্রীরা যেন নিজেদের স্ক্রিনিং ফলাফল নিজেরাই দেখতে পারেন সেজন্য থার্মাল স্ক্যানারের পাশে ৫৫ ইঞ্চি মনিটরে ফলাফল দেখানোর ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এতে করে যাত্রীরা নিরাপদ কি-না তা নিজেরাই জানতে পারবেন। গত ২১ জানুয়ারি থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে ৪০ হাজার ১২৩ জনের স্ক্রিনিং হয়। তাদের মধ্যে কয়েকজনের ১০০ ডিগ্রী ফারেনহাইটের বেশি জ্বর ধরা পড়লেও সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) ল্যাব টেস্টে কারও শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বাংলাদেশী শ্রমিকের রুমমেট ও সহকর্মীসহ মোট ১৯ জনকে কোয়ারেন্টাইন (বিচ্ছিন্ন) করে রাখা হয়েছে সিঙ্গাপুরে। দ্রুত সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কায় এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত দুই দিনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ মোট ১৯ জনকে বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ জারি করেছে। কেউ আক্রান্ত হননি ॥ বাংলাদেশে এখনও কোন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি। একজন সন্দেহজনক রোগীকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও মূল্যায়ন চলছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। বিশ্বে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০১৬ জনে এবং আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৪২ হাজার ৬৩৮ জন। একদিনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ১০৮ জন এবং নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪৭৮ জন। তাদের বেশিরভাগই হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা। সাংবাদিকদের নিয়মিত অবহিতকরণের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার দুপুরে আইইডিসিআর মিলনায়তনে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিতকরণ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আইইডিসসিঅর। আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, চীন থেকে ফেরা বাংলাদেশী নাগরিকদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ জনের নমুনা নেয়া হয়েছে। এভাবে এ পর্যন্ত ৫৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিটে রাখা ১১ জন এবং আশাকোনা কোয়ারান্টাইন কেন্দ্রে উহান ফেরত ৩০১ যাত্রীরা সুস্থ আছেন। সিঙ্গাপুরেও বাড়তি সতর্কতা ॥ জানা গেছে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস আতঙ্ক ব্যাপক হারে ছড়ানোর পরিপেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রায় সব দেশ। বিশেষ করে যেসব দেশে ইতোমধ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি পাওয়া গেছে সেসব দেশ আরও বেশি মাত্রায় সতর্কতা অবলম্বন করছে। এরই ধারাবাহিকতায় সত্যায়িত করার জন্য কাগজপত্র সরাসরি হাতে জমা না দিতে সংশিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন। এমনকি এসব কার্যক্রমের ফিও ব্যাংকের মাধ্যমে দিতে বলা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রীর শোক ॥ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে সহ¯্রাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি এ শোক জানান। মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনাভাইরাসের আক্রমণকে সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে পারায় চীন সরকারের প্রশংসাও করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিশ্ব পরিস্থিতি ॥ চীনে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০১৬ জনে। আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৪২ হাজার ৬৩৮ জন। মঙ্গলবার চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছে, সোমবার চীনে মারা গেছে ১০৮ জন এবং নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪৭৮ জন। তাদের বেশিরভাগই হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা।
×