ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শেয়ারবাজারে একদিনে বাজার মূলধন বাড়ল ৫ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ১১:১০, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

শেয়ারবাজারে একদিনে বাজার মূলধন বাড়ল ৫ হাজার কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ স্থিতিশীলতা ফেরাতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে তফসিলী ব্যাংককে বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়ায় মঙ্গলবার বড় ধরনের উত্থান হয়েছে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। দুই বাজারেই সব ধরনের সূচক বেড়েছে প্রায় দুই শতাংশ করে। এতে একদিনেই সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ওপরে বাজার মূলধন ফিরে পেয়েছে প্রধান শেয়ারবাজার। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজার নিয়ে সরকারের ওপর মহল থেকে উদ্যোগ নেয়ায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। তাদের মতে, স্টেকহোল্ডারদের একটি পক্ষ দীর্ঘদিন ধরেই পুঁজিবাজারের জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের দাবি জানাচ্ছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে শেয়ারবাজার উন্নয়নে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপের ঘোষণা দেয়া হয়। তবে তহবিল গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসছিল না। এখন তহবিল গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসায় বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর আগে গত ৫ -১৪ জানুয়ারি শেয়ারবাজারে বড় দরপতন ঘটে। এ সময় লেনদেন হওয়া আট কার্যদিবসের মধ্যে সাত কার্যদিবসেই বড় পতন হয়। এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্য সূচক ৪২৩ পয়েন্ট কমে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন বিএসইসির শীর্ষ কর্তারা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ফিরে বিএসইসি ঘোষণা দেয়, প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে শেয়ারবাজার উন্নয়নে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ নেয়া হবে। এরপর ১৯ জানুয়ারি শেয়াবাজারে বড় উত্থান হয়। এতে একদিনেই ডিএসইতে ১৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে বাজার মূলধন বাড়ে। আর প্রধান মূল্য সূচক বাড়ে সাড়ে পাঁচ শতাংশের ওপরে। তবে চলতি মাসের শুরু থেকে আবার পতন ঘটে শেয়ারবাজারে। সোমবার পর্যন্ত টানা পাঁচ কার্যদিবস পতন হলে বিকেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য প্রত্যেক ব্যাংক ২০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করতে পারবে। নিজস্ব উৎস অথবা ট্রেজারি বিল বন্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তহবিলের এ অর্থ সংগ্রহ করতে পারবে ব্যাংকগুলো যা পরিশোধের সময় হবে পাঁচ বছর। আর ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে ঋণ দিতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ সুবিধা দেয়ায় মঙ্গলবার লেনদেনের শুরুতেই শেয়ারবাজারে বড় উত্থানের আভাস পাওয়া যায়, যা দিনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধান দাঁড়ায় তিন লাখ ৪১ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। যা আগের দিন ছিল তিন লাখ ৩৫ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ একদিনেই ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে পাঁচ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা। মূলধন বাড়ার অর্থ হলো তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে। বড় অঙ্কের বাজার মূলধন বাড়ার পাশাপাশি সবকটি মূল্য সূচকের বড় উত্থান হয়েছে। এদিন লেনদেনের শুরুতেই সূচকের বড় উত্থান ঘটে। মাত্র পাঁচ মিনিটের লেনদেনে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ১০৮ পয়েন্ট বেড়ে যায়। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক আগের দিনের তুলনায় ৮৫ পয়েন্ট বেড়ে চার হাজার ৪৭১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ২৫ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৫১৭ পয়েন্টে উঠে এসেছে। আর ডিএসইর শরিয়াহ্ সূচক ১৩ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৩০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সূচক এমন হু হু করে বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ২৯৬ প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪০টির। আর ২০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মূল্য সূচক ও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে বেড়েছে লেনদেনের গতি। দিনভর বাজারে লেনদেন হয়েছে ৫০৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। যা আগের দিন ছিল ৩৪০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এ হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৬৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই ২৫১ পয়েন্ট বেড়ে ১৩ হাজার ৬৩২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৩০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৫২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০২টির দাম বেড়েছে। কমেছে ৩০টির এবং ২০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
×