ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উহানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কোটি ছাড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কা

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

উহানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কোটি ছাড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ব্রিটেনের বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লন্ডন স্কুল অব হাইজিন এ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চীনের মধ্যাঞ্চলের হুবেই প্রদেশের উহান শহরেই প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা কমপক্ষে পাঁচ লাখ হয়ে থাকতে পারে। প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা বলছেন, নতুন এই করোনা ভাইরাসের প্রাণকেন্দ্র উহানের অনেক বাসিন্দা সংক্রমিত হলেও তারা তা জানেন না। ফলে আগামী দিনগুলোতে উহানে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে। খবর ব্লুমবার্গ ও সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের। চীনের ওই মেগাসিটিতে গত বছরের শেষদিকে ২০১৯-এনকভ ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হন দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। সংক্রমণ ব্যাপক আকার ধারণ করায় গত ২৩ জানুয়ারি অবরুদ্ধ ঘোষণা করে উহানের এক কোটি ১০ লাখ মানুষের চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়। প্রত্যেক দিন যে গতিতে ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, মহামারিসংক্রান্ত বিদ্যার গাণিতিক মডেলের ওপর ভিত্তি করে সেই সংখ্যা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বিশাল আকার ধারণ করতে পারে বলে আভাস দিয়েছে লন্ডন স্কুল অব হাইজিন এ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন। লন্ডন স্কুলের সংক্রামক ব্যাধি মহামারী বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক এ্যাডাম কুচারস্কি বলেছেন, বর্তমান প্রবণতা ধরে নিয়ে আমরা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে শেষের দিকে উহানে কতসংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন, সে ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন তৈরিতে এখনও কাজ করছি। তিনি বলেন, এই সংক্রমণ যখন মহামারী আকার ধারণ করবে তখন প্রতি ২০ জনের মধ্যে একজন নতুন করে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে থাকবেন। তবে সামনের দিনগুলোতে সংক্রমিত হওয়ার ধরন বদলে যেতে পারে বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন লন্ডন স্কুল অব হাইজিন এ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের এই অধ্যাপক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ কোয়ারেন্টাইন পয়েন্ট উহান এবং ৬ কোটি মানুষের হুবেই প্রদেশের অন্যান্য শহরে এই ভাইরাসের বিস্তারের লাগাম টানতে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সেসবের ফল জানতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। অধ্যাপক এ্যাডাম কুচারস্কি ও তার সহকর্মীরা গবেষণা সংক্রামক ব্যাধির গতিশীলতা নিয়ে কাজ করেন। তারা করোনা ভাইরাস সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের অনুমানের ওপর ভিত্তি করে একটি মডেল দাঁড় করিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, এই ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর রোগীর ইনকিউবেশন সময়কাল ৫ দশমিক ২ দিন এবং সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য সময় লাগবে আরও ৬ দশমিক ১ একদিন। তারা বলছেন, করোনা ভাইরাসের উৎসস্থল উহানের প্রায় এক কোটি মানুষ প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন। এই গবেষকরা তাদের গবেষণা মডেলের ওপর ভিত্তি করে বলেছেন, সেই হিসেবে উহানের প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ ইতোমধ্যে সংক্রমিত হয়েছেন। যদিও রবিবার মধ্যরাতে উহান স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, উহানে এখন পর্যন্ত ১৬ হাজার ৯০২ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। কর্তৃপক্ষের ওই পরিসংখ্যানের সঙ্গে লন্ডন স্কুল অব হাইজিন এ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রকাশিত তথ্যের ব্যবধান আকাশ-পাতাল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডেপুটি ডিরেক্টর ইয়ান বার বলেন, তুলনামূলকভাবে ভয়াবহ মহামারীর সময় সাধারণত উৎস্থলের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ সংক্রমিত হন। এদিকে, সোমবার সকালের দিকে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন বলেছে, রবিবার মধ্যরাত পর্যন্ত চীনে নতুন করে ৩ হাজার ৬২ জন করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৪০ হাজার ১৭১ জনে। এদের মধ্যে ৬ হাজার ৫০০ জনের অবস্থা গুরুতর। এছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণহানি ঘটেছে এখন পর্যন্ত ৯১০ জনের।
×