ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বেড়েই চলেছে বাস্তুচ্যুত লোকের সংখ্যা, কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর সারাকিব আসাদ বাহিনীর দখলে

ইদলিবে মানবিক বিপর্যয়

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ইদলিবে মানবিক বিপর্যয়

রুশ সেনাবাহিনী ও ইরানের মিলিশিয়া সমর্থিত সিরিয়ার সরকারী বাহিনী ইদলিবে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সামরিক অভিযান শুরু করেছে। ত্রাণ ও নাগরিক অধিকার কর্মীরা সেখানে নজিরবিহীন বিপর্যয়ের বিষয়ে সতর্ক করেছেন। রবিবার তারা বলেছেন গত দুই সপ্তাহের অবনতিশীল অবস্থার ফলে উত্তর ও পশ্চিম ইদলিব এবং আলেপ্পো প্রদেশে আসা উদ্বাস্তুদের সামাল দিতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। আলজাজিরা ও গার্ডিয়ান। এনজিও কর্মী দানদাউস বলেন, অবস্থা বিগত বছরগুলোর তুলনায় ২০ গুণ বেশি খারাপ। এবং গত এক বছরের মধ্যে আমরা ১২ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষ গ্রহণ করেছি। ২০১৮ সালের গ্রীষ্ম থেকে সিরিয়ার সরকারী বাহিনী উত্তর-পশ্চিমে বিরোধীদের সর্বশেষ শক্তিশালী ঘাঁটি দখলে নিতে অভিযানে নেমেছে। ওই এলাকায় ৩০ লাখেরও বেশি লোক বাস করে। জাতিসংঘের মতে, সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে ওই এলকায় লড়াই তীব্র হওয়ার পর থেকে প্রায় ৫ লাখ ৮৬ হাজার লোক পালিয়ে গেছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। শুধুমাত্র ২৬ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই ২ লাখ লোক তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। জাতিসংঘ সতর্ক করেছে যে, ইদলিবে আকাশ ও ভূমি থেকে আক্রমণের কারণে বিপুলসংখ্যক লোক বাস্তুচ্যুত হচ্ছে এবং ব্যাপক মাত্রায় সাধারণ নাগরিকদের প্রাণহানি ঘটছে। এখনও অবধি, বাস্তুচ্যুতদের প্রয়োজনের তুলনায় মানবিক সাড়া অপ্রতুল এবং খারাপ আবহাওয়ার কারণে ইতোমধ্যে চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। তুরস্কের ত্রাণ সংস্থা আইএইচএইচয়ের গণমাধ্যম কর্মী সাইদ এজ আল-দিন বলেছেন যে, সেখানে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ, উষ্ণ কাপড়, জ্বালানি ও তাঁবুসহ মৌলিক প্রয়োজনের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। তিনি আরও বলেন, কম তাপমাত্রার কারণে সেখানে ইতোমধ্যে শিশুসহ কয়েক জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বিদ্যমান ক্যাম্পগুলোতে নতুন আসাদের জন্য যথেষ্ট জায়গা না থাকায় জরুরীভিত্তিতে অস্থায়ী আবাসনের প্রয়োজন বলে জানান আল-দিন। তিনি আরও বলেন, আইএইচএইচ এবং কয়েকটি তুর্কী দল নতুন নতুন ক্যাম্প খুলতে কাজ করছে। এগুলোতে হাজারও লোক থাকতে পারবে। ইদলিব প্রদেশে ডক্টরস ইউনিয়নের সদস্য হাবিব কাশফ নিশ্চত করেছেন যে, অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত অনেক লোক কোন আশ্রয় ছাড়াই খোলা জায়গায় ঘুমাতে বাধ্য হচ্ছে। তার মতে, পশ্চিম ইদলিব প্রদেশের জিসর আল-শুগৌর অঞ্চলে ২ হাজারেরও বেশি পরিবার এসেছে। তবে তাদের উদ্দেশ্য কেবল কোন বড় সংস্থার খাদ্য বা আশ্রয় কেন্দ্রে থাকার সুযোগ পাওয়া নয়। সম্প্রত বছরগুলোতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী ধীরে ধীরে সিরিয়া থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কারণে নতুন করে বাস্তুচ্যুতি শুরু হওয়ার আগেই ওই অঞ্চলের কয়েকটি শিবিরে সাহায্য আসা বন্ধ হয়ে গেছে। সিরিয়া রিলিফ এ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের কর্মী দানদাউসের মতে, মানবিক সহায়তার ঘাটতি সিরীয়দের জীবন হুমকিতে ফেলছে। যদি উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় সাহায্য পাঠানো শুরু না হয় তবে তিনি ভয় পাচ্ছেন যে, সেখানে ইয়েমেনের মতো দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। ইয়েমেনের সঙ্কটকে জাতিসংঘ বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবিক সঙ্কট হিসেবে বর্ণনা করেছে। এদিকে উত্তর-পশ্চিমাষ্ণলের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর সারাকিব বাশার আল-আসাদ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এটি তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহে প্রাথমিক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পরিণত হয়েছিল। সেখানকার দেয়ালগুলো বিদ্রোহী স্লোগান ও নিহত প্রিয়জনদের উদ্দেশ্য করে লেখা বার্তায় সজ্জিত। শহরটির ৩০ হাজার সদস্য ২০১৭ সালের স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। অপরদিকে, পোপ ফ্রান্সিস উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় সঙ্কটে নিমজ্জিত লোকদের রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
×