ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ফেসবুক ব্যবহারকারী ৩ কোটিরও বেশি

সাইবার ক্রাইম ঠেকাতে পুলিশের হিমশিম, বাড়ছে অপরাধ

প্রকাশিত: ১০:১৯, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 সাইবার ক্রাইম ঠেকাতে পুলিশের হিমশিম, বাড়ছে অপরাধ

শংকর কুমার দে ॥ সাইবার অপরাধ ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। একদিকে সাইবার ক্রাইম সাধারণ ঘটনায় পরিণত হচ্ছে। অন্যদিকে ইন্টারনেট ব্যাবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে সাইবার অপরাধ ও অপরাধী। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুককেন্দ্রিক অপরাধের সংখ্যা বাড়ছে বেশি। ফেসবুক আইডি হ্যাকের শিকার হচ্ছেন অনেকেই। ই-মেল আইডি হ্যাক, ফেক আইডি তৈরি করে ব্ল্যাকমেল করা, সেক্সটোরেশন, মোবাইল ব্যাংকিং জালিয়াতি ও অন্যান্য হ্যারাজমেন্টের শিকার হওয়ার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক খুবই জনপ্রিয় হওয়ায় এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩ কোটিরও বেশি। আগে সাইবার ক্রাইম বিষয়ক বেশি অভিযোগ আসত নারীদের কাছ থেকে। এখন পুরুষরাও সমান্তরালভাবে সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছে। ২০১৯ সালে মোট অভিযোগের ৫৩ শতাংশ এসেছে পুরুষের কাছ থেকে, বাকি ৪৭ শতাংশ এসেছে নারীর কাছ থেকে। পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি এ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি এ্যান্ড ক্রাইম বিভাগে সাইবার অপরাধের অভিযোগ জমা পড়েছে ৯ হাজার ২২৭। অথচ এর আগের বছর ২০১৮ সালে এই ধরনের অভিযোগ জমা পড়েছিল ৬ হাজার ৩০০। অর্থাৎ, এক বছরে অভিযোগ বেড়েছে ২ হাজার ৯২৭। আগে সাইবার ক্রাইম বিষয়ক বেশি অভিযোগ আসত নারীর কাছ থেকে। কিন্তু এখন সমান্তরালভাবে পুরুষও সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছেন। ২০১৯ সালে পুরুষের কাছ থেকে অভিযোগ এসেছে ৫৩ শতাংশ। নারীর কাছ থেকে এসেছে ৪৭ শতাংশ। এখন অভিযোগ বিশ্লেষণ করলে নারীর চেয়ে পুরুষ বেশি সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছেন। পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন সাইটের মধ্যে ফেসবুক সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। একারণে ফেসবুককেন্দ্রিক অপরাধের সংখ্যা বেশি। ২০১৯ সালে ঢাকার সাইবার ক্রাইম বিভাগে মোট ১২০১ অভিযোগ এসেছে ফেসবুক আইডি হ্যাক নিয়ে, যা মোট অভিযোগের ৪১ শতাংশ। আইডি হ্যাকের ক্ষেত্রে নারীর চেয়ে পুরুষের অভিযোগ বেশি। এ বছর ৫০৫ নারী ও ৬৯৬ পুরুষ ফেসবুক আইডি হ্যাকিংয়ের অভিযোগ করেছেন। ফেক আইডি, সেক্সটোরেশনের ক্ষেত্রে নারীরা শিকার হন বেশি। তবে মোবাইল ব্যাংকিং, ই-মেল আইডি হ্যাকের ঘটনা পুরুষের ক্ষেত্রে বেশি ঘটে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সাইবার ক্রাইমের সঙ্গে জড়িত অপরাধীর মধ্যে তরুণের সংখ্যাই বেশি। গত দুই বছরে শতাধিক সাইবার ক্রিমিনালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের অনেকেই তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন করার পর শখেরবশে হ্যাকিং শিখেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩ কোটির বেশি। বেশিরভাগ লোকজনই ফেসবুকে নিজের আইডি খুললেও তা যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন না। ফেসবুক মেসেঞ্জারে নিজেদের খোলামেলা ছবি বন্ধু বা প্রেমিক-প্রেমিকার কাছে আদান-প্রদান করে থাকেন। হ্যাকাররা সহজেই ওইসব আইডি হ্যাক করে খোলামেলা ছবিগুলো ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেল করে থাকে। এছাড়া, বিভিন্ন সময়ে সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট হ্যাক করেও অর্থ আদায় করে হ্যাকাররা। সাইবার সিকিউরিটি এ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধের প্যাটার্নও পরিবর্তন হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার যত বাড়বে, অপরাধের সংখ্যাও তত বাড়বে। তবে আমরা প্রতিনিয়ত সাইবার ক্রিমিনালদের নজরদারি করছি। অভিযোগ পেলেই আমরা তদন্তকপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। যদিও সাইবার ক্রাইমের শিকার হওয়া অনেকেই অসেচতনতার কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাকমেল বা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সাইবার ক্রাইমের একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, হ্যাকিংয়ের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ‘ফিশিং এ্যাপ’ ব্যবহার করে হ্যাকাররা। এ কারণে অপরিচিতদের পাঠানো যে কোন লিংকে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে বিরত থাকা এবং কোনভাবেই পাসওয়ার্ড ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটগুলোও যথাযথ সাইবার নিরাপত্তার মাধ্যমে সুরক্ষিত রাখতে হবে। সরকার যে হারে সবকিছু ডিজিটালাইজেশন এবং ইন্টারনেট সহজলভ্য করছে, সে হারে সাইবার অপরাধ ঠেকাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেনি। সাইবার অপরাধ ঠেকাতে যে ধরনের ফরেনসিক ল্যাবরেটরি প্রয়োজন, সে রকম ফরেনসিক ল্যাবরেটরি এখনও স্থাপন করা যায়নি। মামলার তদন্তে ও বিচারিক পর্যায়ে ডিজিটাল সাক্ষ্য উপস্থাপনেও দুর্বলতা রয়েছে। ফলে সাইবার ক্রিমিনালদের আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়াটাও কঠিন হয়ে পড়েছে।
×