ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানপন্থীদের এদেশে ঠাঁই হবে না

প্রকাশিত: ১০:১৭, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

পাকিস্তানপন্থীদের এদেশে ঠাঁই হবে না

সংসদ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের কঠোর সমালোচনা করে সরকারী দলের সংসদ সদস্যরা বলেছেন, দেশদ্রোহী, জাতিদ্রোহী, অগ্নিসন্ত্রাসী, জঙ্গীদের দল বিএনপি-জামায়াতকে দেশের জনগণ আর কোনদিন মেনে নেবে না। আগামীতে সরকারী দল ও বিরোধী দলেও থাকবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি- পাকিস্তানপন্থীদের এ দেশের জনগণ আর বিশ্বাস করবে না। ১৯টি ক্যুর মাধ্যমে হাজার হাজার সামরিক-বেসামরিক মানুষকে হত্যাকারী অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচারও দাবি করেন তারা। প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে রবিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, সরকারী দলের এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, মকবুল হোসেন, এ্যারোমা দত্ত, বেগম শাহীন আক্তার, কবিরুল হক মুক্তি, মোহাম্মদ হাছান ইমাম খান ও জাতীয় পার্টির পনির উদ্দিন আহমেদ। আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস বিএনপি-জামায়াত জোটের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, এতিমের টাকা আত্মসাতকারী খালেদা জিয়া এখন আদালতের রায়ে দন্ডিত হয়ে কারাগারে। তিনি ক্ষমতায় থেকে অসংখ্য মানুষকে হত্যা, আগুনসন্ত্রাস চালিয়ে শত শত নারীকে বিধবা এবং সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছেন। তার জন্য এত মায়াকান্না কেন? চরম নিষ্ঠুর শাসক হিসেবে খালেদা জিয়া পরিচিত। তাকে মুক্তি দিতে হবে কেন? তিনি কী রানী ভিক্টোরিয়া যে, তাকে আইনও ছুঁতে পারবে না? এরা ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকারী, সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টার, মমতাজ উদ্দিনসহ ২১ হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর হত্যাকারী। ওদের বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা ও পৈশাচিকতায় দেশের মানুষ এখনও কাঁদে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী দাউদ ইব্রাহিমের সহযোগী তারেক জিয়া বিপুল অর্থ পাচার করে লন্ডনে বসে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে। এরা (বিএনপি-জামায়াত) দেশদ্রোহী, জাতিদ্রোহী, সন্ত্রাসী-জঙ্গী, মানুষ হত্যাকারী, স্বাধীনতাবিরোধী। এদের জাতি আর কোনদিন ক্ষমা করবে না। পাকিস্তানীপ্রেমী, টিক্কা খান-ইয়াহিয়া-গোলাম আযমদের যারা ভালবাসে তাদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না। ২১টি সামরিক ক্যুর মাধ্যমে জিয়াউর রহমান যে হাজার হাজার সামরিক অফিসার হত্যা করেছে, একটি বিশেষ কমিশন গঠনের মাধ্যমে তদন্ত করে তার (জিয়াউর রহমান) মরণোত্তর বিচার করতে হবে। দেশে আগামীতে সরকারী দলের পাশাপাশি বিরোধী দলও হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তির, কোন স্বাধীনতাবিরোধী আর কোনদিন সরকার ও বিরোধী দলের আসনে বসতে পারবে না। পাকিস্তানপন্থীদের আর কোন দিন এ দেশের মানুষ বিশ্বাস করবে না। যারা পাকিস্তানে বিশ্বাস করে, পাকিস্তানীদের পা চাটা তাদের ঠাঁই বাংলাদেশে হবে না। এদেশের মানুষ তাদের আর বিশ্বাস করবে বলে আমি মনে করি না। সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মের মধ্যেই রয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশ। গত ১১ বছরে তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনা দক্ষ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। সব সূচকেই বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য গতিতে অগ্রযাত্রার চিত্র। আগে মানুষ ভাতের ফ্যান ভিক্ষা করত, সেই চিত্র এখন আর নেই। দেশের একটি মানুষেরও আজ খাবার কোন অভাব নেই। গোটা দেশের চিত্রই আজ পাল্টে গেছে। মানুষের ঘরে ঘরে এখন বিদ্যুতের আলো। ’৭৫-এর পর দীর্ঘ ২১ বছর এবং পরবর্তী বিএনপি-জামায়াতের ৫ বছরে দেশের সংখ্যালঘুরা বারবার নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এখন সব ধর্মের মানুষ পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে। জাতীয় পার্টির পনির উদ্দিন আহমেদ বলেন, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ সরকারের গৃহীত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশের চিত্রই পাল্টে যাবে, দেশ অর্থনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী হবে। তিনি কুড়িগ্রামে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং কৃষিভিত্তিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে বলেন, যেভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে খুব দ্রুতই বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে। সাবেক উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের ওপর ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, আমাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে চোখ বেঁধে দিনের পর দিন নির্যাতন করেছে। আমার স্ত্রী-মা খাবার নিয়ে থানার সামনে দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকত কিন্তু দেখা করতে দেয়া হয়নি। বহুদিন গেছে আমাকে খাবার পর্যন্ত দেয়া হয়নি। দেশের মানুষ বিএনপি-জামায়াতের সেই দুঃশাসনের কথা স্মরণ করলে এখনও আঁতকে ওঠে। সরকারী দলের মোহাম্মদ হাছান ইমাম খাঁন বলেন, হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের রাজনীতির মধ্যেই জন্ম বিএনপির। এরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেনি, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা পুরো আওয়ামী লীগকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল কিন্তু শত ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১১ বছরেই দেশকে অপ্রতিরোধ্য গতিতে নিয়ে যাচ্ছে। কবিরুল হক মুক্তি বলেন, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি যে দেশেই বিদ্যমান, তারা কখনও সামনের দিকে এগোতে পারে না। ভারতেও সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক শাসনের কারণে দেশটি গণতন্ত্র আজ হুমকির মুখে। গত ১১ বছরে দেশ আজ সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু দেখনো পথে হেঁটেই আমরা তাঁর স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলতে পারব। তবে রাষ্ট্রকে মানবিক করতে না পারলে মঙ্গলজনক রাষ্ট্র হবে না। মকবুল হোসেন বলেন, দেশের হাজার হাজার ঋণখেলাপী রয়েছে। তারা দেশে বিপুল অর্থ নিয়ে ফেরত দিচ্ছে না কিন্তু দেশের কোন কৃষক ঋণখেলাপী নেই। তাই কৃষিকে দ্রুত যান্ত্রিকীকরণের জন্য কৃষকদের বিনাসুদে ঋণ দিতে হবে। কৃষকরা কখনও ঋণ নিয়ে মেরে খাবে না। দুগ্ধ খামারীরা নিঃস্ব হয়ে গেছে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার কারণে। আরমা দত্ত বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনী-কুলাঙ্গাররা জিয়াউর রহমানের হাত ধরে দেশকে অন্ধকারের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত করেছিল আর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী এই জিয়ার হাতেই তৈরি বিএনপি। অবৈধভাবে জন্ম নেয়া এই দলটির কাছে দেশবাসী কিছু আশা করে না, করবেও না।
×