ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তৃতীয় দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট হারিয়ে ১২৬ রান করেছে বাংলাদেশ, এখনও ৮৬ রানে পিছিয়ে

নাসিমের হ্যাটট্রিকে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৯:৪৮, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

নাসিমের হ্যাটট্রিকে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে গড়া ২৩৩ রানের জবাবে যখন পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে ৪৪৫ রান করেছে, তখনই আসলে ম্যাচের গতিবিধির আভাস মিলে গেছে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে সবচেয়ে কম বয়সে হ্যাটট্রিক করা নাসিম শাহ’র অসাধারণ বোলিংয়ে ম্যাচ যে পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণেই চলে গেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ২১২ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমেও ব্যাটিং ধস হয়েছে। তৃতীয়দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট হারিয়ে ১২৬ রান করেছে বাংলাদেশ। এখনও ৮৬ রানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। ৪ উইকেট আছে হাতে। ম্যাচের ফল যে পাকিস্তানের পক্ষেই যাচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে। রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে এখন ইনিংস হার এড়াতে পারবে কিনা বাংলাদেশ, সেদিকেই নজর থাকছে। ম্যাচ আবার আজ শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। মুমিনুল হক (৩৭*) আছেন ব্যাটিংয়ে। মুমিনুলের সঙ্গে লিটন কুমার দাস, রুবেল হোসেন, আবু জায়েদ রাহী, এবাদত হোসেন ব্যাটিংয়ে রয়েছেন। দিনের প্রথম সেশনটি যে কতটা কঠিন তা তো প্রথম তিনদিনেই বোঝা গেছে। চতুর্থদিনের প্রথম সেশনে ব্যাটিং করা তো আরও কঠিন ব্যাপার। মুমিনুল আর লিটন যদি এখন হাল ধরতে না পারেন তাহলে ইনিংস হার এড়ানো অসম্ভবই। যদি তারা দুইজন ভাল কিছু করতে পারেন, বড় জুটি গড়তে পারেন, তাহলে ইনিংস হার এড়ানো যাবে। পাকিস্তানের দুই ব্যাটসম্যান আউট হওয়া থেকে বেঁচে নিজেদের ইনিংসকে সেঞ্চুরিতে পরিণত করেছেন। বাবর আজম (১৪৩) ও শান মাসুদ (১০০) বড় ইনিংস খেলেছেন। হারিস সোহেলের ব্যাট থেকে আসে ৭৫ রান। আসাদ শফিক ৬৫ রান করেন। দ্বিতীয়দিন ৩ উইকেটে ৩৪২ রান করে পাকিস্তান। তৃতীয়দিন ৭ উইকেট হারিয়ে আরও ১০৩ রান যোগ করে পাকিস্তান। তাতে ৪৪৫ রান স্কোরবোর্ডে জমা হয়। রানের পাহাড় গড়ে পাকিস্তান। বাবর আজমকে দিনের দ্বিতীয় বলেই আউট করে দেন আবু জায়েদ রাহী। আর একটি রানও করতে দেননি। এবাদত হোসেনও দ্রুতই আটকে দেন আসাদকে। এরপর হারিস সোহেল হাল ধরেন। তবে অপরপ্রান্তে টপাটপ উইকেট পড়তে থাকে। ৩ উইকেট পাওয়া রাহীর সঙ্গে ৩ উইকেট শিকার করে নেয়া রুবেল হোসেনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে দ্বিতীয় সেশনের প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যে অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান। বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল (৩৪) ও সাইফ হাসান (১৬) সেই ব্যর্থতার বৃত্তেই আটকে থাকেন। শুরুটা ভাল করলেও দলের ৩৯ রানে সাইফ আউটের পর দলের ৫৩ রানে গিয়ে তামিমও সাজঘরে ফিরেন। এরপর নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হক মিলে আবার হাল ধরেন। দুইজন দলকে শতরানেও নিয়ে যান। ৫০ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। সাবলীলভাবেই ব্যাটিং করতে থাকেন। আশা জাগে এ দুইজনই দিন শেষ করে ফেলবেন। কিন্তু বিপদ ঘটে যখন দলের ১২৪ রান হয়। শান্তকে (৩৮) আউট করে দেন নাসিম শাহ। ৪১তম ওভারের চতুর্থ বলে নাসিমের লাইনের বল ডিফেন্স করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে যান শান্ত। রিভিউ নিয়ে শান্তকে আউট করে পাকিস্তান। মুমিনুলের সঙ্গে ৭১ রানের জুটি গড়ে আউট হন শান্ত। বিপত্তি ঘাড়ে চেপে বসে। টপাটপ আরও দুটি উইকেট পড়ে যায়। পরের দুই বলেও দুটি উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিক করে ফেলেন নাসিম। নাইটওয়াচম্যান হিসেবে ব্যাটিংয়ে নামা তাইজুল ইসলামকেও ইয়র্কার বলে এলবিডব্লিউ করে দেন নাসিম। আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ব্যাট হাতে নামেন। অফস্টাম্পের বাইরের বল খোঁচা দিতে গিয়ে ক্যাচ আউট হয়ে যান। নাসিম হ্যাটট্রিক করেন। পাকিস্তানের কোন বোলার প্রায় ১৮ বছর পর হ্যাটট্রিক করে দেখালেন। ২০০২ সালে সর্বশেষ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে লাহোরে মোহাম্মদ শামি হ্যাটট্রিক করেছিলেন। এরপর নাসিম করলেন। সবচেয়ে কম বয়সে টেস্টে হ্যাটট্রিক করার রেকর্ডও গড়েন। ১৬ বছর ৩৫৯ দিনে হ্যাটট্রিক করেন নাসিম। এর আগে ২০০৩ সালে পেশোয়ারে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে বাংলাদেশ স্পিনার অলক কাপালী ১৯ বছর বয়সে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে হ্যাটট্রিক করার রেকর্ড ছিল এটিই। নাসিম সেই রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন রেকর্ড গড়লেন। ১৯৯৯ সালে ওয়াসিম আকরাম, ২০০০ সালে আব্দুল রাজ্জাক, ২০০২ সালে মোহাম্মদ শামির পর টেস্টে চতুর্থ পাকিস্তানী বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করেন নাসিম। এর আগে ওয়াসিম, রাজ্জাক ও শামি যে হ্যাটট্রিক করেন তা একটি দলের বিরুদ্ধেই, শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। এবার নাসির শ্রীলঙ্কার বাইরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করেন। শুধু কি হ্যাটট্রিকই করেন। এর আগে সাইফের উইকেটটি নিয়ে দিনটিতে ৪ উইকেট শিকার করেন নাসিম। নাসিমের বোলিং গতির সামনেই হঠাৎ করে তছনছ হয়ে যায় বাংলাদেশের ব্যাটিং। শেষ বিকেলে, পাঁচ ওভারের কম বাকি থাকতেই সব ওলট-পালট হয়ে যায়। মোহাম্মদ মিঠুনও রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফিরেন। শেষদিকে ২ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। ১২৪ রান পর্যন্ত ২ উইকেট ছিল। এই সময় শান্ত আউটের পর আরও ৩টি উইকেট ১২৬ রানেই খতম হয়। মুমিনুল হক (৩৭*) এখনও ব্যাটিংয়ে আছেন। তার সঙ্গে লিটনও রয়েছেন। কিন্তু এরপর আর বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান নাই। তিন পেসার রুবেল, রাহী ও এবাদত আর কতটা দূর এগিয়ে নিতে পারবেন। আর তাই মুমিনুল ও লিটন যদি দ্রুত আউট হয়ে যান তাহলেই ইনিংস হারের বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে।
×