ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সঙ্গীহারা সালাউদ্দিন পথ খুঁজছেন!

প্রকাশিত: ০৯:৪৬, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 সঙ্গীহারা সালাউদ্দিন পথ খুঁজছেন!

জাহিদুল আলম জয় ॥ ‘লজ্জা, লজ্জা, লজ্জা। এ লজ্জা রাখি কোথায়’, ‘আমাদের ফুটবল আজ বিশ্ব বেহায়ার খপ্পরে’, ‘বাফুফে পচে গেছে, ফুটবল মরে গেছে’- এরকম অসংখ্য স্লোগানের সাক্ষী বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) হয়েছিল ২০১৬ সালে। প্রায় চার বছর আগে ভুটানের কাছে হেরে বাংলাদেশের ফুটবলের ‘মৃত্যু’ হওয়ার পর ফুঁসে উঠেছিল ফুটবলাঙ্গন। ক্ষমাহীন ব্যর্থতার জন্য বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনসহ কমিটির সবাইকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছিলেন সর্বশ্রেণীর ফুটবলপ্রেমীরা। ভুটান লজ্জার পর ওই সময় প্রতিদিনই মতিঝিলে বাফুফে ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন ফুটবল পাগল জনতা। নিরাপত্তাকর্র্মীরা ভবনে ঢুকতে না দিলেও প্রধান ফটকের বাইরে বিক্ষোভ করেন সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন খেলাপ্রেমী সংগঠন। ওই লজ্জার পর গত বছর কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিল ফুটবল। কিন্তু সাময়িক সাফল্যের পর আবারও সেই ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে লাল-সবুজের ফুটবল। টানা ১২ বছর বাফুফে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করার পরও তেমন কিছুই করতে পারেননি কিংবদন্তি ফুটবলার কাজী মোঃ সালাউদ্দিন। আগামী এপ্রিলে আবারও নির্বাচন হচ্ছে বাফুফের। এবারও সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সালাউদ্দিন। তবে এবার তাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন তৃণমূলের ফুটবল উন্নয়নের রূপকার, বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব এবং বাংলাদেশ ফুটবল ক্লাবস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তরফদার মোঃ রুহুল আমিন। মৃত ফুটবলকে জাগাতে অনেকদিন ধরেই কাজ করে চলেছেন এই সংগঠক। নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে সালাউদ্দিনের বিরোধীপক্ষরা একাট্টা হয়েছেন। বিশেষ করে সত্তর-আশির দশকে তার সঙ্গে খেলা প্রায় সব তারকা ফুটবলারই সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। এমন অবস্থায় অনেকটা সঙ্গীহারা হয়ে গেছেন বাংলাদেশের ফুটবল কিংবদন্তি। এ অবস্থায় তিনিও সাবেক ফুটবলারদের পাশে ভেড়ানোর চেষ্টা করছেন। এরই অংশ হিসেবে নব্বইয়ের দশকের কিছু ফুটবলারকে নিয়ে তিনি সম্প্রতি বাফুফে ভবনে বৈঠক করেছেন। এসব ফুটবলারের মধ্যে ছিলেন মাসুদ রানা, সাবেক ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, ফিরোজ মাহমুদ টিটু, গোলাম গাউস, লম্বা থ্রোইনের জন্য নাম কামানো আলমগীর, রোকুনুজ্জামান কাঞ্চন, ইকবাল আহমেদ, ইমতিয়াজ আহমেদ নকিবসহ আরও অনেকে। এমন বৈঠকের পর অনেকে বলছেন, নিজের সময়ে খেলা সতীর্থরা এখন সবাই সালাউদ্দিনবিরোধী। তাই সঙ্গী না পেয়ে এসব ফুটবলারদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছেন তিনি। সাবেক ফুটবলারদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে কাজী সালাউদ্দিন বর্তমান জাতীয় ফুটবল দলকে ৫০ বছরের ইতিহাসে সেরা হিসেবে অ্যাখ্যা দেন। তবে এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন জাতীয় দলের সাবেক স্ট্রাইকার রোকুনুজ্জামান কাঞ্চন, ‘বর্তমান দল দেশকে কি দিয়েছে। আমরা ২০০৩ সালে দেশকে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ এনে দিয়েছি। আমরা যখন জাতীয় দলে খেলেছি সে সময়ের র‌্যাঙ্কিং দেখেন আর বর্তমানে সেটা কত! অনেক তারকা ফুটবলার বাংলাদেশের লাল-সবুজ জার্সিতে খেলেছেন, কিংবদন্তির খেতাব পেয়েছেন। কিন্তু সাফল্য আমরাই এনে দিয়েছি।’ জয়, ফিরোজ, কাঞ্চন, ইকবালদের ডেকে অনেক বিষয়ে কথা বলেছেন বাফুফে বস। এক পর্যায়ে সালাউদ্দিন বলেন, ‘বাবলু, আসলাম, জনি যারা নিয়মিত বিভিন্ন টিভি টকশোতে ফুটবলের সমালোচনা করে ওরাই কি শুধু ফুটবল খেলেছে, তোমরা খেলনি। তোমাদেরও ফুটবলের পাশে থাকা উচিত। ভালমন্দ নিয়ে কথা বলা উচিত।’ গত ১২ বছরে নব্বই দশকের ফুটবলারদের একটি বারের জন্যও মনে পড়েনি সালাউদ্দিনের। হঠাৎ তাদের কদর বেড়ে গেল কেন? এটা কি তবে নির্বাচনী হাওয়া নাকি বাবলু, আসলামদের কাউন্টার দেয়ার জন্য ডাকা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাঞ্চন বলেন, ‘না এমন কিছু না। আমরা সাবেক ফুটবলার। বাফুফের সভাপতি ডাকলে অবশ্যই আমরা তার আমন্ত্রণে যেতে পারি। আর তিনি শুধু বাফুফের সভাপতি নন, একজন সাবেক তারকা ফুটবলার, কিংবদন্তি। আমাদের সাবেক ফুটবলারদের কিছু দাবি-দাওয়া, চাওয়া, পাওয়া নিয়ে ওনার সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতি আছে। সেটার কার্যক্রমে কিভাবে গতি আনা যায় সেটা নিয়েও কথা হয়েছে। আমরা সমিতিকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে চাই। নির্বাচন করে নতুন কমিটি তৈরির পরিকল্পনা আছে। যেখানে বর্তমান কমিটির অনেকে থাকবে, নতুন অনেকে যুক্ত হবে।’ সত্তর-আশির দশকের অনেক ফুটবলারকে তরফদার রুহুল আমিনের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যায়। নব্বই দশকের সাবেক ফুটবলার অর্থাৎ যারা সালাউদ্দিনের সঙ্গে দু’দফা বাফুফে ভবনে সভায় বসেছেন তাদেরও কি অদূরে তরফদার রুহুল আমিনের সঙ্গে দেখার সম্ভাবনা আছে? এ বিষয়ে কাঞ্চন বলেন, ‘নির্বাচন সামনে রেখে যারা ফায়দা নিতে চায় তাদের অনেকে এমনটা করতে পারেন। কিন্তু তরফদার সাহেব বলুন কিংবা সালাউদ্দিন ভাই যে ডাকবে আমরা বিশেষ করে আমি ফুটবলের উন্নয়নের স্বার্থে যাব। আমিন ভাই আমাদের ডাকেন না; আমরাও যাই না।’
×