ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যয়

প্রকাশিত: ০৭:৫৯, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যয়

মরণব্যাধি ক্যান্সারের চিকিৎসা খরচ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। রোগী একবার আক্রান্ত হলে আজীবন তাকে চিকিৎসা সেবায় থাকতে হয়। সঙ্গত কারণে এই রোগ নির্মূলের চিন্তার চাইতেও বেশি জরুরী হয়ে পড়ে যতটা সম্ভব চিকিৎসা খরচ কমানোর বিষয়টি। সম্প্রতি পালিত হলো বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। ক্যান্সার প্রতিরোধে সম্মিলিত গণসচেতনতাও অনেক বেশি প্রয়োজন। ফলে নিত্যনতুন আবিষ্কার ও গবেষণায় রোগটি প্রতিরোধ করতে প্রাসঙ্গিক সব জ্ঞান-বিজ্ঞানকে সংযুক্ত করা ক্যান্সার দিবসের মূল তাৎপর্য। শক্তিশালী গবেষণা কার্যক্রমের পাশাপাশি এর ব্যয়বহুল চিকিৎসায়ও নতুন মাত্রা আনতে হবে। অর্থাৎ রোগটির চিকিৎসা খরচের দিকেও সচেতন দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে। দিবসটি পালনের মধ্য দিয়ে এমন বার্তা সংশ্লিষ্টদের মধ্যে পৌঁছানোয় নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে। কারণ আক্রান্ত ব্যক্তি প্রথমেই আতঙ্কিত হয় শুধু মৃত্যু ভয় নয়, চিকিৎসার অতিরিক্ত ব্যয়ভারের শঙ্কায়ও। মূল ব্যাপার আরও কঠিন, অনেক টাকা খরচ করেও রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না। ক্যান্সার বিশেজ্ঞরা বলছেন- দেহ থেকে সম্পূর্ণ নিরাময় অযোগ্য এই রোগটি প্রতিরোধে নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনও বিশেষ প্রয়োজন। প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয়, আধুনিক ও উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা আর যথার্থ পরিচর্যায় রোগটির বহুল প্রকোপ কমানো খুব অসম্ভবও নয়। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই রোগ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সামান্যতম ধারণাও থাকে না। ফলে এক ধরনের ক্যান্সারভীতিও কাজ করে। এ ছাড়া দেশে সরকারী ও বেসরকারী সেবা প্রতিষ্ঠানে এই মরণব্যাধির চিকিৎসা প্রদানও এত অপ্রতুল যে সবাইকে সুচিকিৎসার আওতায় আনাও অনেক সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। এসব প্রাসঙ্গিক বিষয় আমলে নিয়ে ক্যান্সার সংশ্লিষ্ট নতুন ও সময়োপযোগী তথ্য এবং গবেষণা প্রকল্পকে জোরদার করাও অত্যন্ত জরুরী। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিবিধ আয়োজনের মধ্য দিয়ে রোগটি চিকিৎসার গুরুত্ব বিশ্লেষণ করা হয়। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে প্রধান অতিথি করে সচেতনতামূলক শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। এতে বিভিন্ন বিভাগের খ্যাতিমান চিকিৎসকরা ক্যান্সারের ভয়াবহতা ছাড়াও এর প্রতিরোধ ও স্বল্প খরচে চিকিৎসার ব্যাপারে তাদের পরামর্শ তুলে ধরেন। মানবদেহে বাসাবাঁধা প্রতিটি রোগই গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবায় চলে আসা প্রত্যেকের সচেতন দায়বদ্ধতা। বিশ্ব ক্যান্সার দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘আমি আছি আমি থাকব।’ এমন বার্তা হলো আক্রান্ত রোগীর পাশে থেকে তাদের যথাযথ চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত হওয়া। শুধু তাই নয়, এই ঘাতক রোগটির ব্যাপারে সম্মিলিতভাবে লড়াই ও আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরি করে যেতে হবে। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ও ইনস্টিটিউটও বিশ্ব ক্যান্সার দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও দৃশ্যমান ছিল আক্রান্ত রোগীদের অংশগ্রহণে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হওয়া। যা মানসিক মনোবলের সঙ্গে শারীরিক শক্তি অর্জনেও সহায়ক হতে পারে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নজর কাড়া মহাসম্মিলনে দিবসটির তাৎপর্য সর্বসমক্ষে যথার্থভাবে চলে আসে। ক্যান্সার রোগীদের উপস্থিতিও সামগ্রিক আয়োজনকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলে। রোগ প্রতিরোধ, প্রতিকার, স্বল্প খরচে আধুনিক চিকিৎসা প্রদান, জনসচেতনতা- সব মিলিয়ে ক্যান্সার দিবসকে তার যথার্থ বার্তায় মানুষের মাঝে জাগরণও তৈরি করে দেয়। ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যয় কমানোর জন্য চিকিৎসক সমাজ, ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা এবং প্যাথলজি কেন্দ্রের মালিকদের আন্তরিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। বাণিজ্যের পাশাপাশি সেবার আদর্শকেও উর্ধে তুলে ধরা চাই।
×