ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাজু মোস্তাফিজ

রাবি’র ৩৪ ব্যাচের মিলনমেলা ॥ স্মৃতিময় একদিন

প্রকাশিত: ১১:৫৩, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

রাবি’র ৩৪ ব্যাচের মিলনমেলা ॥ স্মৃতিময় একদিন

‘হতাশায় থামা নয় সাফল্যের সঙ্গে গতিময়, মহামিলনে আমরা-আমরাই।’ এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে ৩৪ ব্যাচ (১৯৮৬-৮৭) রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে মতিহার চত্বরে ‘প্রাণের মেলা’ মহামিলনে অংশগ্রহণ করেছিল। অংশগ্রহণকারী বন্ধু-বান্ধবীরা আনন্দে আবেগাপ্লুত হয়ে ফিরে গিয়েছিল ২৫ বছর পূর্বের দুরন্ত মতিহারে। দিনভর গল্প কথা, আর জম্পেস আড্ডায় আনন্দে-আবেগে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাটিয়েছে। কনকনে ঠা-ায় কেউ কাউকে ছাড়তে চাইছিল না। এ কোন আবেগ আর ভালবাসা। সকলে যেন ফিরে পেয়েছিল ক্যাম্পাসের সেই দুরন্ত যৌবন। অধিকাংশ বন্ধু-বান্ধবীরা খুঁজে ফিরেছে নিজ হল, ডিপার্টমেন্ট, প্রিয় শিক্ষক আর স্মৃতিময় জায়গাগুলো। ঘুরে ফিরে দেখছে তারা। মেলাচ্ছে ক্যাম্পাসের সেই উত্তাল দিনগুলোর সঙ্গে। তখন সারাদেশের মতো রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলন ছিল তুঙ্গে। এখনকার মতো শান্ত মতিহার ক্যাম্পাস ছিল না সে দিনগুলো। প্রতিটি মুহূর্তে আতংকে কাটিয়েছিল সেদিনের শিক্ষার্থীরা। দেশের প্রত্যন্ত প্রান্ত থেকেও তীব্র শীত উপেক্ষা করে ছুটে এসেছিল সবাই ভালবাসার আহ্বানে...হ্রদয়ের টানে। খুঁজে পেয়েছে অতীত স্মৃতিগুলো। নিজ ব্যাচের সহপাঠীদের পেয়ে হারিয়ে গিয়েছিল তারুণ্যের সেই দিনগুলোতে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ক্লান্তহীনভাবে চলছিল আড্ডা। তাদের কথা যেন শেষ হতেই চায় না। সকলের একই কথা এই তো সেদিন গাছ-গাছালি আর সবুজ ঘাসে ঢাকা প্রাণের মতিহার ক্যাম্পাস ছেড়ে গিয়েছি। মধ্যরাতে আতশবাজি আর ফানুস উড়ানোর মাঝ দিয়ে সমাপনী অনুষ্ঠান শেষে বন্ধুদের কাছে বিদায় নেবার সময় নিজের অজান্তেই চোখের জল মুছেছিল সবাই। সবাই বলেছিল আবার যেন দেখা পাই। ৩৪ ব্যাচের মহামিলন গত ২৬ ডিসেম্বর (বৃহষ্পতিবার) সকাল ১১টায় ক্যাম্পাসের ‘সাবাস বাংলাদেশ’ চত্বরে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে মিলন মেলার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এ সময় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন সুনামগঞ্জ-৪ এর সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, বিশ^বিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন করেন বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রক্টোর ড. মোঃ লুৎফর রহমান ও প্রফেসর ড. এস এম আকরাম উল্লা। এরা সবাই একই ব্যাচের শিক্ষার্থী। এর পর শিক্ষার্থীরা শহীদ জোহার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা প্যারিস রোড থেকে বের হয়ে শহীদুল্লাহ কলা ভবন হয়ে দ্বিতীয় বিজ্ঞান ভবন পাড়ি দিয়ে টিএসসিতে গিয়ে শেষ হয়। এরপর টিএসসিতে স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা চলে এই স্মৃতিচারণ। এখানে আমতলার আনন্দ আড্ডা, অবস্থান ও বিচরণ, মুক্ত আলোচনা আনন্দ বেদনার স্মৃতিচারণ করে সবাই। এ সময় স্মৃতিচারণ করতে করতে কখন যে সকলের চোখে জল এসেছিল কেউ বুঝতে পারেনি। জীবন মনে হয় এমনই। প্রাণের মতিহারের সেই উত্তাল যৌবনের স্মৃতি বার বার ফিরে নিয়ে যায়। আজ যারা এখানে এসেছে তারা স্ব-স্ব ক্ষেত্রে সকলেই প্রতিষ্ঠিত। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে উচ্চ পদে কর্মরত। তারপর তাদের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আজও মনের মাঝে বার বার নাড়া দেয়। সতীর্থদের আগলে রাখতে চায়। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, লোকজ গান, আবৃত্তি, নাচ পরিবেশিত হয় মধ্যরাত পর্যন্ত। ৩৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী বাংলা বিভাগের প্রভাষক রেজাউল করিম রাজু, উপসচিব নজরুল ইসলাম, ইতিহাস বিভাগের কনক অভিনেত্রী সাবেরা ইয়াসমীন, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের প্রফেসর মোঃ ইলিয়াস আলী জানান আমাদের ৩৪ ব্যাচের মহামিলনে আমরা ভীষণ খুশি। প্রায় দুই যুগ পর বিভিন্ন বিভাগের সহপাঠীদের ফিরে পেয়েছি। কত স্মৃতি কত ঘটনা আজ বার বার মনে দোলা দিয়ে যাচ্ছে। এই মিলন মেলার মাধ্যমে আমাদের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট এর বন্ধুবান্ধবীদের সকলের মাঝে সেতুবন্ধন হয়েছে। রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের ‘৩৪ ব্যাচের মিলন মেলা’ প্রথমবার বিশ^ বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হলো। প্রায় সাড়ে তিন শত শিক্ষার্থী এই মিলন মেলায় অংশগ্রহণ করেছিল। অনেকেই তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে এসেছিল প্রিয় ক্যাম্পাস দেখাতে। যা সকলকে আরও বাড়তি আনন্দ দিয়েছিল। রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের প্রক্টর মোঃ লুৎফর রহমান জানান আমাদের ৩৪ ব্যাচের মিলন মেলার মাধ্যমে আমরা একটি পরিবার। আমাদের অনেক স্বপ্ন আছে এটিকে নিয়ে। আছে আকাক্সক্ষা। আর স্বপ্ন না থাকলে আকাক্সক্ষার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। নানা প্রতিকূলতা আর আকাক্সক্ষার ধরন আলাদা থাকলেও এ ক্ষেত্রে আমাদের যাত্রা অভিন্ন ও একই সূত্রে গাঁথা। ৩৪ ব্যাচের ৬৫ সদস্যবিশিষ্ট এক মহামিলন উদযাপন কমিটি গঠন করা হয়েছিল। দীর্ঘ তিন মাস ধরে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর চেষ্টায় সার্থক হয়েছে অনুষ্ঠানটি। সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সকল সদস্য তাদের আয়োজনে দারুণ খুশি। এই কমিটি কোন দিকেই ত্রুটি রাখেনি। সাধ্য মতো চেষ্টা করেছে সব কিছুতেই। তারপরও তাদের কোন ভুলের কারণে কোন বন্ধু-বান্ধবী সামান্যতম আঘাত পায় এজন্য ক্ষমা চাইতেও কার্পণ্য করেননি। ভালবাসার টানে প্রিয় বন্ধুদের ফিরে পাওয়াই ছিল সকলের কাছে মধুর। তাই তো সবাই মিলে প্রাণের টানে হ্রদয়ের চির যৌবনে অস্তিত্বের প্রগাঢ আহ্বানে ৩৪ ব্যাচের ক্ষণে ক্ষণে আমরা এক হয়ে থাকব। এই আমাদের অঙ্গীকার।
×