ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাসুদ ও বাবরের সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় দিন শেষে পাকিস্তান ৩৪২/৩, বাংলাদেশ পিছিয়ে ১০৯ রানে ;###;বাংলাদেশ-পাকিস্তান টেস্ট

পিন্ডি টেস্টে বড় সংগ্রহের পথে পাকিস্তান

প্রকাশিত: ১১:৪৯, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

পিন্ডি টেস্টে বড় সংগ্রহের পথে পাকিস্তান

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ক্যাচ ধরতে না পারা এবং ক্যাচ হয়েছে, তা বুঝতে না পারার ভুলের মাসুল দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। ২ রানে ক্যাচ থেকে বাঁচেন সেঞ্চুরিয়ান বাবর আজম (১৪৩*)। আর ৮৬ রানে ‘নতুন জীবন’ পান আরেক সেঞ্চুরিয়ান ওপেনার শান মাসুদ (১০০)। ক্যাচ হয়েছে তা বুঝতেই পারা যায়নি। এই দুইজনের সেঞ্চুরিতে রানের পাহাড় গড়ছে পাকিস্তান। দ্বিতীয়দিন শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে ৩৪২ রান করে ফেলেছে স্বাগতিকরা। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ২৩৩ রানে থামায় ১০৯ রানে এগিয়েও গেছে পাকিস্তান। রানের পাহাড়ে চাপাও পড়তে চলেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা যে ভুল করেছেন, পাকিস্তান ব্যাটসম্যানরা সেই ভুল করেননি। নিজেদের মেলে ধরেছেন খুব ভালভাবে। বাইরের বল খেলতে গিয়ে পাকিস্তান ব্যাটসম্যানরাও আউট হয়েছেন। তবে যখন ‘নতুন জীবন’ পেয়েছেন, সেঞ্চুরি করেই মাঠ ছেড়েছেন। তাদের এই মেলে ধরার পেছনে বাংলাদেশ ফিল্ডারদেরই বিশেষ কৃতিত্ব রয়েছে। পাকিস্তানের ইনিংসের শুরুতেই আবু জায়েদ রাহীর অসাধারণ ডেলিভারিতে ওপেনার আবিদ আলী সাজঘরে ফিরেন। নিজের প্রথম ওভারেই ওপেনিং জুটি ভাঙ্গেন রাহী। এরপর ওপেনার মাসুদ ও আজহার আলী মিলে সেই ধাক্কা সামাল দেন। খুব স্বাচ্ছন্দ্যেই খেলতে থাকেন। ব্যাটিং করতে থাকেন। দুইজন মিলে দলকে শতরানের কাছেও নিয়ে যেতে থাকেন। যখন দলের ৯৩ রান হয় তখন আবার রাহী ত্রাতা হয়ে ফিরে আসেন। আজহারকে (৩৪) আউট করে দেন। ৯১ রানের জুটি ভাঙ্গেন রাহী। কাটা হয়ে ধরা দেয়া জুটি ভেঙ্গে দেন। দুই উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও মাসুদ দাপটের সঙ্গেই ব্যাটিং করতে থাকেন। ৫৪ বলেই অর্ধশতক করে ফেলেন মাসুদ। বোঝাই যাচ্ছে, বাংলাদেশ বোলারদের ওপর কতটা চড়াও হয়ে খেলেছেন। মাসুদ একদিক সামলান। আরেকদিকে বাবর আজম ব্যাটিংয়ে নেমে মারমুখী হয়ে খেলতে থাকেন। তবে ভাল বলে কখনই শট নিতে যাননি। খারাপ বল পেলেই, খেলার বল হলেই খেলেছেন। তাতে রানও দ্রুত বাড়তে থাকে। তবে শুরুতে বাবর একটু চাপে থাকেন। ডট বল বেশি খেলে ফেলেন। তাতে বড় শট খেলে চাপ সারাতে চান। দলের ১০৭ রানে নিজের ২ রানের সময় ভুল করে বসেন বাবর। তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণি বলটিতে মিড অফে শট খেলেন। এবাদত হোসেন বলটিতে হাত লাগাতে পারলেও মুঠোয় জমা করতে পারেননি। বাবর ‘নতুন জীবন’ পেয়ে নতুনরূপে যেন হাজির হন। দুর্দান্ত ব্যাটিং করতে থাকেন। আর কোন সুযোগ দেননি। ব্যাট হাতে এগিয়ে যেতেই থাকেন। মাসুদকে সঙ্গে নিয়ে বড় জুটি গড়ার দিকে এগিয়ে যান। দলকে ২০০ রানেও নিয়ে যান। ৭৯ বলে অর্ধশতকও করে ফেলেন। দলের স্কোরবোর্ডে ২০০ রান জমা হওয়ার আগেই ৪৫তম ওভারে মাসুদকেও আউট করার সুযোগ ধরা দেয়। যখন ১৭০ রানে থাকে পাকিস্তান, তখন ক্যাচ আউট হয়েও বেঁচে যান মাসুদ। তিনি ৮৬ রানে থাকেন। রুবেলের বল যে ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষক লিটন কুমার দাসের হাতে জমা হয়েছে তা লিটন কিংবা বোলার রুবেল এবং ফিল্ডাররাও বুঝতে পারেননি। বেঁচে গিয়ে শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরিই করে বসেন মাসুদ। ১৫৭ বলে সেঞ্চুরি করেন। বাবরের সঙ্গে শতরানের জুটিও গড়েন। যখন ১০০ রান করেন তখন তাইজুলের বলে বোল্ড হয়ে মাঠ ছাড়েন। ১৬০ বলে ১১ চারে ১০০ রান করেন মাসুদ। তবে ততক্ষণে দল ২০৫ রানে চলে যায়। প্রথম সেশনে ২ উইকেটে ৯৫ রান করে পাকিস্তান। দ্বিতীয় সেশনে মাসুদ আউট হন। তবে দলের রান দ্বিতীয় সেশনে দাঁড়ায় ২০৬ রান। এই সেশনে ১১১ রান যোগ হয়। মাসুদ আউট হলেও বাবরের সঙ্গে ১১২ রানের জুটি গড়েন। দলও বড় রানের দিকেই এগিয়ে যেতে থাকে। তৃতীয় সেশনে আর কোন উইকেট না হারিয়ে আরও ১৩৬ রান যোগ করে পাকিস্তান। মাসুদ আউটের পর আসাদ শফিককে নিয়ে পথ চলতে থাকেন বাবর। যিনি ২ রানেই আউট হতে পারতেন, তিনিও সেঞ্চুরি করে বসেন। ১৩৪ বলে সেঞ্চুরি করেন বাবর। দলও ধীরে ধীরে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে গড়া ২৩৩ রানকে টপকে গিয়ে ৩০০ রানেও চলে যায়। রানের পাহাড় গড়ার দিকেই এগিয়ে যায় পাকিস্তান। আসাদকে সঙ্গে নিয়ে শত রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। আসাদও স্বাচ্ছন্দ্যেই অর্ধশতক করে ফেলেন। শেষ পর্যন্ত আর কোন উইকেট হারায়নি পাকিস্তান। বাবর ও আসাদ মিলে চতুর্থ উইকেটে ১৩৭ রানের জুটি গড়ে দলকে ৩৪২ রানে নিয়ে যান। তখন আলো স্বল্পতায় ২ ওভার বাকি থাকতেই দ্বিতীয়দিনের খেলা শেষ হয়। বাবর ১৯২ বলে ১৯ চার ও ১ ছক্কায় ১৪৩ রান ও আসাদ ১১১ বলে ৮ চারে ৬০ রান করে অপরাজিত থাকেন। আজ দুইজনই তৃতীয়দিনের খেলা শুরু করবেন। যে বাবর ২ রানেই আউট হতে পারতেন, তিনি ডাবল শতকের দিকে এগিয়ে চলেছেন। পাকিস্তানও রানের পাহাড় গড়ছে। তা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশ ফিল্ডারদের ভুলে। সেই ভুলের মাসুলই দিতে হচ্ছে।
×