ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খালেদার মুক্তি আন্দোলনের নামে সহিংসতা হলে দাঁতভাঙ্গা জবাব ॥ কাদের

প্রকাশিত: ১১:০৩, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

খালেদার মুক্তি আন্দোলনের নামে সহিংসতা হলে দাঁতভাঙ্গা জবাব ॥ কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের নামে আগামীতে কোন ধরনের সহিংসতার চেষ্টা করা হলে কঠোরভাবে তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে বলে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ কোন সমাবেশে আমরা বাধা দেব না। কিন্তু যদি সেখানে সহিংসতার উপাদান যুক্ত হয় আন্দোলন-সমাবেশ কিংবা বিক্ষোভের মাধ্যমে, তাহলে তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে। শনিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢাকা মহানগরের অন্তর্গত দলীয় এমপি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে নির্বাচিত মেয়রদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে করে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা আন্দোলনের ডাক দিতে পারেন। আমরাও বলটি রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, তারা আন্দোলন করতে চান করবেন। সরকার হিসেবে জনগণের জানমাল রক্ষার দায়দায়িত্ব আছে আমাদের। রাজনৈতিকভাবে যদি কোন আন্দোলন হয়, আমরা তা রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করব। কিন্তু আন্দোলনের নামে যদি সহিংসতার উপাদান যুক্ত হয়, যা তারা বার বার করে আসছে। আদালত প্রাঙ্গণকেও তারা কলুষিত করেছে। সেরকম আন্দোলন যদি করতে চান সেটা কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলন করে তারা করুক। কিন্তু বিএনপি কার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে? আমি নীতিগতভাবে প্রশ্ন করছি, যাদের বিবেক আছে তাদের কাছে আমি আপীল করছি, আন্দোলনটা বিএনপি কার বিরুদ্ধে করছে? বেগম জিয়াকে তো সরকার কারান্তরীণ করেনি? এই সরকার (শেখ হাসিনার সরকার) মামলাও দেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে মামলা হয়েছে, ওই মামলার বিচারও উচ্চ আদালতে হচ্ছে। সরকার যদি রাজনৈতিক কারণে তাঁকে জেলে দিত, তবে কথা ছিল। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এটা রাজনৈতিক মামলা নয়, এটা করাপশনের মামলা। এ মামলাটা সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার করেছে। রাজনৈতিক কারণে সরকার যদি বেগম জিয়াকে গ্রেফতার করত তাহলে রাজনৈতিক কারণে মুক্তি দেয়ার প্রশ্ন আসতে পারত। কিন্তু এটা রাজনৈতিক কারণে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি, কাজেই সরকারের রাজনৈতিক বিবেচনা করার কোন সুযোগ নেই। ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামালের এ প্রসঙ্গে হুমকির জবাবে কাদের বলেন, তারা যদি মনে করেন, আন্দোলন করে সরকারকে বাধ্য করবেন বেগম জিয়াকে মুক্তি দিতে, তাহলে তারা বাধ্য করতে পারে আদালতকে। সেটা কতটা সমীচীন ও যুক্তিযুক্ত-বিচার ব্যবস্থার দিক থেকে কিংবা আদালতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা, আন্দোলনের ঘোষণা তারা কেন দিচ্ছে? এটা কোন গণতন্ত্র এটা আমি ড. কামালকে জিজ্ঞাসা করতে চাই। তিনি বলেন, ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট জালিয়াতির কোন সুযোগ ছিল না। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। ছোটখাটো ভুল-ত্রুটি বাদ দিলে একটি ভাল নির্বাচন হয়েছে। একমাত্র বিএনপি ছাড়া যারা পর্যবেক্ষক ছিল তারাও কিন্তু বিরূপ মন্তব্য করেনি। বিএনপি বিষোদ্গার করছে কারণ তারা হেরে গেছে। তাদের বিষোদ্গার এত বেড়ে গেছে যে, এখন আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। কিন্তু বিএনপির আন্দোলনের হুমকি দেখে আমরা অভ্যস্ত। এগুলো আমরা বার বার শুনে আসছি। বিএনপির নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি প্রসঙ্গে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে কাদের বলেন, তাদের ভোটার কোথায় ছিল নির্বাচনের দিন? নির্বাচনের আগে দুই সিটির মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে যে জমায়েত, মিছিল আপনারা করেছেন, এজেন্ট পর্যন্ত অনেক কেন্দ্রে আসেনি। তাহলে ভোট কেন্দ্র পাহারা দিলেন কিভাবে? ভোট পাহারার লোকজন কই? আপনাদের যে ভোট সেটাও কেন পড়ল না? সেই ভোট কেন তারা দিল না, বাধা কোথায় পেয়েছে? আমি তো মনে করি নির্বাচন হয়েছে এটা অনেক স্বস্তিদায়ক। ঢাকার দুই সিটির নবনির্বাচিত মেয়র ও ঢাকা মহানগরের দলীয় এমপিদের নিয়ে মতবিনিময় সভার সিদ্ধান্ত তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ঢাকা মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা জমা দেয়ার পর তৃণমূলের মূল পর্যায় থেকে সংগঠন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিপক্ষের আন্দোলন ঠেকানোর জন্য আমাদের সংগঠনকে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী করা দরকার। সংগঠনের বিরুদ্ধে, দলের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে আজকে যে ষড়যন্ত্র, সেটা প্রতিরোধ করতে হলে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। এ বিষয়ে আমরা সবাই একমত। এই লক্ষ্যেই আমরা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেখান থেকে কিছু সিদ্ধান্ত আমরা কার্যনির্বাহী সভায় রিকমেন্ডেশন আকারে পাঠাব। ঢাকা সিটি নির্বাচনে ভোটার কম আসা প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখানে একটা বিষয় হলো ছুটির কারণে অনেক ভোটার গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। পরিবহনের একটি বিষয় আছে। আর আমাদের সংগঠনেও কিছু দুর্বলতা আছে, যার কারণে ভোটার নিয়ে আসার বিষয়টা যতটা গুরুত্ব দেয়ার দরকার ছিল তা দেয়া হয়নি। সবাই ভেবেছে ভোটাররা তো আসবেই, তাদের যে নিয়ে আসতে হবে সেখানে কিছুটা কম গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা মুকুল বোস, মাহবুব-উল আলম হানিফ, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, সুজিত রায় নন্দী, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, মেহের আফরোজ চুমকি, সায়েম খান, আমিরুল আলম মিলন, শাহাবুদ্দিন ফরাজী, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম, দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসসহ দলীয় সংসদ সদস্যরা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা। তিন শূন্য আসনে তিন নেতার ফরম সংগ্রহ জাতীয় সংসদের শূন্য ঘোষিত তিনটি আসনের উপনির্বাচনের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। গাইবান্ধা-৩, ঢাকা-১০ ও বাগেরহাট-৪ আসনের জন্য শনিবার প্রথম দিন তিন মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দফতর সেলে যোগাযোগ করে জানা গেছে, দলের মনোনয়ন বিতরণের প্রথম দিন শনিবার ধানম-ির দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে তিন মনোনয়ন প্রত্যাশী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তারা হলেন- বাগেরহাট-৪ আসনে বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আবদুর রহিম খান ও সাবেক উপ কমিটির সহ সম্পাদক মিজানুর রহমান জনি। এছাড়া গাইবান্ধা-৩ আসনের জন্য দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি। তবে প্রথম দিন ঢাকা-১০ আসন থেকে কেউ দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি।
×