ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তাদের লাথি মেরে দেশ থেকে বের করে দিতে হবে ॥ ড. কামাল

প্রকাশিত: ১১:০২, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

তাদের লাথি মেরে দেশ থেকে বের করে দিতে হবে ॥ ড. কামাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল বলেছেন, ‘সত্যিকার অর্থে একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করতে হবে। সেই সংসদে যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে তারা দেশ পরিচালনা করবে। এখন যারা আছে, তাদেরই লাথি মেরে দেশ থেকে বের করে দিতে হবে। পদত্যাগ পদত্যাগ বললে হবে না। পদত্যাগ না করলে লাথি মেরে নামাতে হবে। ওই সব ভাষায় না হলে, তাদের হাত ধরে টেনে রাস্তায় নামিয়ে দিতে হবে। সত্যিকার অর্থে আমাদের দেশের মালিকের ভূমিকায় আসতে হবে।’ শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। খালেদা জিয়ার দুই বছর কারাবাসের প্রতিবাদে তার মুক্তির দাবিতে এই সভার আয়োজন করা হয়। সভায় বিএনপিসহ ফ্রন্টের শরিক নেতারা বক্তব্য রাখেন। দেশের মানুষ এখন আগের থেকে বেশি ঐক্যবদ্ধ, তারা এই সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা ছাড়ার পরামর্শ দেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। উন্নয়নের নামে যে লুটপাট হয় এগুলো থেকে দেশকে মুক্ত করতে দেশের মালিক জনগণকে আবার দাঁড়াতে হবে এমন মন্তব্য করে সাবেক এই আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হোসেন বলেন, স্বাধীনতার ৪৮ বছরে কেউ দেশে রাজবন্দী হবে এটা শুনতে কেমন লাগে। আজ বিরোধী দলের নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সভা করতে হবে এটা অকল্পনীয় ও দুঃখের বিষয়। এখন সভা-সমাবেশে নয়, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে সামনে রেখে মাঠে নামবো। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিকে সামনে রেখে মানুষকে অনুপ্রাণিত করে মাঠে নামতে হবে। চলেন আমরা মালিক হিসেবে ভূমিকা রাখি। যারা আমাদের ক্ষমতাকে আত্মসাত করেছে তাদের চিহ্নিত করি। আমাদের রাস্তায় নেমে বলতে হবে দেশে গণতন্ত্র থাকবে, সংবিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালিত হবে। এখন সংবিধান অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে না। দেশে এখন নির্বাচনের নামে প্রহসন হয় এমন মন্তব্য করে সাবেক এই আইনমন্ত্রী কামাল হোসেন বলেন, তারা রাষ্ট্র ক্ষমতাকে জবরদখল করে চালিয়ে যাচ্ছে। আজ সব মানুষের পক্ষে বলতে হচ্ছে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশের ইতিহাসে দেখেছি, জনগণকে অধিকার বঞ্চিত করে কেউ স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। শাসকরা চেষ্টা করেছে, কিন্তু তাদের ভয়াবহ পরিণতি হয়েছে। আজ যারা স্বৈরাচার চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের সেই ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে দেখা দরকার যে বাঙালী কখনও স্বৈরাচারকে মেনে নেয়নি। আজ আমরা সবাই চাই, শান্তিপূর্ণভাবে দেশটাকে মানুষের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হোক।’ কামাল হোসেন বলেন, তারা কী কী প্রচার করছে, অমুক বর্ষ এভাবে উদ্যাপন করবে। সবাইকে একভাবে উদ্যাপন করতে হবে। দেশের মালিক হিসেবে দেশের ১৬ কোটি মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদ্যাপন করবে, এটা একটা প্রহসন। আওয়ামী লীগকে হটাতে সভা-সমাবেশ বাদ দিয়ে এখন রাজপথের আন্দোলনের বিকল্প দেখছেন না জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেন। জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ঐক্যফ্রন্ট গঠন করার আগে আমরা ৮ দফা দাবি দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন দাবিই পূরণ হয়নি। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ছিল দাবিগুলোর মধ্যে। আমি বিএনপি করি না। কিন্তু গণতন্ত্রের স্বার্থে খালেদা জিয়ার মুক্তি জরুরী। রব বলেন, শেখ হাসিনাকে বলতে চাই, আপনি কি শান্তিমতো ক্ষমতা থেকে বিদায় নেবেন, নাকি অন্যভাবে যাবেন। সিটি নির্বাচনে মানুষ ভোট না দিয়ে প্রমাণ করছে গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা পরিবর্তন হবে না। তাই তারা ভোট দিতে যায়নি। জনগণ আমাদের বলছে, রাস্তায় নামার জন্য তারা প্রস্তুত। এখনও সময় আছে, শান্তিপূর্ণভাবে বিদায় নেন। না হলে কীভাবে হবে সেটা বুঝতেও পারবেন না। প্রতিবাদ সভায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই স্বৈরাচার সরকারের হাত থেকে মুক্তি পেতে হলে ফ্রন্টের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামতে হবে। আজ না হোক, এক মাস কিংবা দুই মাস পরে হলেও কর্মসূচী ঘোষণা করতে হবে। না হলে জনগণ নিজেরাই আন্দোলনের পথ বেছে নেবে। আমাদের কথা না বলে আন্দোলনে নামতে হবে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমি নির্বাচনে যাওয়ার জন্য খালেদা জিয়াকে কিছুটা উৎসাহিত করেছিলাম। এখন আমি বলতে চাই, তার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির আর কোনও নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হবে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, এখন আর বক্তব্য দেয়ার সময় নাই, রাস্তায় নামতে হবে। আন্দোলন করে খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক নুরল আমিন ব্যাপারী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির শহীদুল্লাহ কাউসার, ফ্রন্টের দফতরের নেতা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু প্রমুখ।
×