ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

৫ মার্চ ঢাকায় টিকফা বৈঠক

যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ ॥ সমুদ্র সম্পদ আহরণ

প্রকাশিত: ১১:০০, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ ॥ সমুদ্র সম্পদ আহরণ

এম শাহজাহান ॥ সমুদ্র সম্পদ আহরণে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ। এছাড়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধিতে এদেশ থেকে ন্যায্যমূল্যে আরও পণ্যসামগ্রী কেনার অনুরোধ করা হবে। বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতিতে বিনিয়োগ, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও বাজার সুবিধা ও কাস্টমস এ্যান্ড সম্পূরক শুল্ক ডিউটিসহ একগুচ্ছ সহায়তা প্রস্তাব দেয়া হয়েছে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টকে। আগামী ৫ মার্চ ঢাকায় টিকফার পঞ্চম বৈঠক সামনে রেখে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাবে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। দেশটির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, টিকফা বৈঠকে বাংলাদেশের প্রস্তাবগুলো গুরুত্ব সহকারে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার আলোচনা করতে প্রস্তুত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা চুক্তি (টিকফা) কার্যকর করতে এবারের বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে মাার্কিন ট্রেড প্রতিনিধি দল। জানা গেছে, মিয়ানমার ও ভারতের কাছ থেকে বিশাল সমুদ্র জয় করা গেলেও প্রযুক্তি ও বিনিয়োগের অভাবে ‘ব্লু-ইকোনমি’র সুবিধা নিতে পারছে না বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশের অর্থনীতির ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে। মাছের খনি রয়েছে বঙ্গোপসাগরে। এছাড়া সাগরের তলদেশে বাংলাদেশ সীমানায় বিপুল পরিমাণ তেলগ্যাসের মজুদ রয়েছে। যা উত্তোলন করা গেলে দেশের জ্বালানি সঙ্কট দূর করে রফতানিকারক দেশ হিসেবে আবির্ভূত হবে বাংলাদেশ। এছাড়া সমুদ্র ঘিরে বন্দর, বিদ্যুতকেন্দ্র, অর্থনৈতিক অঞ্চল, পর্যটন, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণসহ কয়েক শ’ প্রকল্প গ্রহণ করা সম্ভব। ইতোমধ্যে পায়রাবন্দর ও মাতারবাড়ি বিদ্যুতকেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে বঙ্গোসাগরকে ঘিরে। এ রকম বহু অবকাঠামো নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে টিকফা ফোরামের এবারের বৈঠকে সমুদ্র সম্পদ আহরণে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাবে বাংলাদেশ। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সেলের মহাপরিচালক মোঃ কামাল হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার আগামী ৫ মার্চ টিকফা ফোরামের বৈঠক করার কথা জানিয়ে দিয়েছে। ওই বৈঠক সামনে রেখে বাংলাদেশের এজেন্ডা যুক্তরাষ্ট্রকে দেয়া হয়। তিনি বলেন, টিকফার মূল উদ্দেশ্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানো। বাংলাদেশের সমুদ্রসম্পদ আহরণে যুক্তরাষ্ট্রের বড় অঙ্কের বিনিয়োগ প্রয়োজন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তাদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, বাংলাদেশের প্রস্তাবগুলো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহী। আগামী বৈঠকেই এ বিষয়ে ভাল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী এ বছর ঢাকায় বৈঠক হওয়ার কথা, কিন্তু বড়দিন ও নববর্ষ সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র এক দফা সময় পিছিয়ে দেয়। এবার তাদের আগ্রহে নতুন সময় চূড়ান্ত করা হয়েছে। ওই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করবে। জানা গেছে, একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি পোশাক রফতানি হয় বাংলাদেশ থেকে। বাণিজ্য ঘাটতি বরাবরই বাংলাদেশের অনুকূলে। তবে জিএসপি সুবিধা বাতিল, পোশাকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত না করা, তৈরি পোশাক রফতানিতে উচ্চহারে শুল্ক আরোপসহ নানা কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাধার মুখে পড়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাক্ষরিত ট্রেড এ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট টিকফার পঞ্চম সভা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। যদিও পাঁচ বছর আগে করা এ ফোরামের অগ্রগতি নিয়ে হতাশাও রয়েছে সংশ্লিষ্টদের। কারণ এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য কোন বিনিয়োগ পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বেশি আগ্রহ বাংলাদেশ ঘিরে। এত কম পয়সায় পৃথিবীর আর কোন দেশ পোশাক দিতে পারছে না। শুধু তাই নয়, বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণেও বাংলাদেশ এখন অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে। টিকফা বৈঠকে এবার এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। ডব্লিউটিও সেলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছেÑ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করা টিকফা একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি যা দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্য সহযোগিতা, সম্প্রসারণ বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ বাণিজ্য বাধাসমূহ নিয়ে আলোচনার উত্তম ফোরাম। এদিকে এবারের বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বিনিয়োগ পরিবেশ, ব্যবসা সহজীকরণ, মার্কেট এক্সেস, ট্যারিফ পুনর্নির্ধারণ মেধাস্বত্ব, ডিজিটাল ইকোনমি, আঞ্চলিক যোগাযোগ, জ্বালানি ও অবকাঠামো উন্নয়ন, সরকারী ক্রয়ে স্বচ্ছতা এবং শ্রমসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হবে। এছাড়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ সভায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের প্রবেশাধিকার সম্প্রসারিত করার বিষয়ে অনুরোধ জানানো হবে। বিশেষ করে নার্স, মিডওয়াইফসহ অন্যান্য সেবা খাতে মোড-৪ এর আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ সহজীকরণে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। এছাড়া বাংলাদেশে বিরাজমান বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্যাদি তুলে ধরে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন চুক্তি বাস্তবায়নে সহায়তার জন্য অনুরোধ করা হবে। বাংলাদেশী পণ্য বিশেষ করে গার্মেন্টস পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার ওপর জোর দেবে বাংলাদেশ।
×