ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশফেরত সব ফ্লাইটের যাত্রী স্ক্রীনিংয়ের আওতায়

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বিদেশফেরত সব ফ্লাইটের যাত্রী স্ক্রীনিংয়ের আওতায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার বিদেশ থেকে আসা সব ফ্লাইটের যাত্রীদের বিমানবন্দরে স্ক্রীনিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দেশে আসার পর সব বিমানের যাত্রীদের স্ক্রীনিংয়ের আওতায় নিয়ে এসেছি। গত বৃহস্পতিবার সব এয়ারলাইন্সের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাদের চিঠি দেয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী শনিবার থেকে আমরা কার্যক্রম শুরু করেছি। শনিবার দুপুরে আইইডিসিআর’র সভাকক্ষে আয়োজিত নতুন করোনা ভাইরাস (২০১৯-এনসিওভি) নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই কথা জানান পরিচালক। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডাঃ এএসএম আলমগীর। এদিকে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে চীন ফেরত এক ছাত্রকে রংপুর মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে। আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ডাঃ ফ্লোরা বলেন, অত্যন্ত জোরালোভাবে বলতে চাই, এটা নিয়ে ভীত বা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। অতিরিক্ত সতর্কতার অংশ হিসেবে এটা করা হচ্ছে। আসলে চীন এবং অন্যকিছু দেশের যাত্রীদের স্ক্রীনিং করলেই যথেষ্ট। তবে আমরা সতর্কতার জন্য এটি করছি। বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখা হবে এই কার্যক্রম কতদিন অব্যাহত রাখব। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে প্রতিদিন ২৫ ফ্লাইটে গড়ে সাড়ে ১২ হাজার যাত্রী বাংলাদেশে আসেন। বৈশ্বিক করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনায় অধিকতর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে রোগতত্ত্ববিদদের পরামর্শে এখন থেকে ২৫ ফ্লাইটে আসা সব যাত্রীকে মনিটর করা হবে। বাংলাদেশের সব বন্দরে আসা যাত্রীদের স্ক্রীনিং করার সক্ষমতা স্বাস্থ্য অধিদফতরের আছে কিনা এমন প্রশ্নে অধ্যাপক ডাঃ ফ্লোরা বলেন, আমরা এয়ারলাইন্সগুলোর সহযোগিতা নিচ্ছি। ফ্লাইটের মধ্যে যে ডিক্লারেশন ফর্ম দেয়া হয় তাতে এয়ারলাইন্সগুলো সহায়তা করে। আমরা সম্মিলিতভাবেই কাজ করছি। এখানে এয়ারলাইন্সগুলোর সহযোগিতা খুবই জরুরী। যেসব বন্দরে থার্মাল স্ক্যানার নেই, সেখানে আমরা হ্যান্ডহেল্ড স্ক্যানার দিয়েছি। থার্মাল স্ক্যানার এবং হাত দিয়ে যেটা করা হয়- দুটোর কাজ একই। দেশে করোনা ভাইরাস নেই জানিয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ৫৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এই ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি, এখন পর্যন্ত দেশে করোনা ভাইরাসের রোগী নেই। কোয়ারেন্টাইনে হজ ক্যাম্পে ছিলেন ৩১২ জন। এখন হজ ক্যাম্পে অবস্থান করছেন ৩০১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় তাদের মধ্যে রোগের কোন ধরনের লক্ষণ ছিল না। তারা ভাল আছেন। এছাড়া সিএমএইচে আছেন এক শিশুসহ ১১ জন। তারাও কেউ রোগী নন। বাচ্চা থাকার কারণে সেখানে রাখা হয়েছে। তারা সবাই সুস্থ আছে। চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিমানবন্দরে চীন থেকে আগত স্ক্রীনিংকৃত মোট যাত্রীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৪৮৪ জন এবং ৭ ফেব্রুয়ারি স্ক্রীনিং করা হয়েছে ১৪১ জনকে। এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করা মোট নমুনার সংখ্যা ৫৩। ভাইরাসটির সংক্রমণের ধরন সম্পর্কে অধ্যাপক ডাঃ ফ্লোরা বলেন, মানুষের দেহে প্রবেশের পর লক্ষণ দেখা দেয়ার আগে মানুষ থেকে মানুষে করোনা ভাইরাসটি ছড়ায় না। এর আগে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন যে, লক্ষণ দেখা দেয়ার আগে ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি অন্য মানুষের দেহে ভাইরাস ছড়াতে পারে। কিন্তু সর্বশেষ বৈজ্ঞানিক গবেষণা সে ধারণাকে বদলে দিয়েছে। মাস্ক পরার বিষয়ে তিনি বলেন, যারা সুস্থ আছেন তাদের মাস্ক পরা দরকার নেই। যারা সর্দি-কাশিতে ভুগছেন শুধু তারাই ঘরের বাইরে বের হলে মাস্ক পরবেন। তবে ঘরে ফেরার আগে ব্যবহৃত মাস্কটি মুখ ঢাকা বিনে ফেলবেন, যেন কেউ কুড়িয়ে আবার তুলে নিতে না পারে। বিশ্ব পরিস্থিতি করোনা ভাইরাসে চীনে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। শনিবার দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মোট ৭২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া নতুন করে ৩ হাজার ৩৯৯ জন আক্রান্ত হওয়ায় দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৩৪ হাজার ৫৪৬ জনে। চীনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শনিবার পর্যন্ত নতুন করে ৮৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, যাদের ৮১ জনেই হুবেই প্রদেশের। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে উহানে এক মার্কিন ও জাপানী নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। সংক্রামক ভাইরাসটি এরই মধ্যে আরও অন্তত ২৫টি দেশে ছড়িয়ে পড়ে তিন শতাধিক মানুষকে আক্রান্ত করেছে। রংপুর নিজস্ব সংবাদদাতা রংপুর থেকে জানায়, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে চীন ফেরত সেখানে প্রকৌশল বিভাগে অধ্যয়নরত এক ছাত্রকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে ভর্তির পরপরই তাকে সংক্রামক রোগ বিভাগের আইসোলেশন ওয়ার্ডে নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক ডাঃ মোকাদ্দেম হোসেন জানান, গত ২৯ জানুয়ারি চীন থেকে বাংলাদেশে আসেন তাজবিদ হোসেন। বিমানবন্দরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তিনি নীলফামারীর ডোমারের বাড়িতে যান। হঠাৎ করে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হলে শনিবার দুপুরে তাকে রংপুর মেডিক্যালে নিয়ে আসা হয়। তিনি আরও বলেন, তাজবিদ হোসেন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কিনা চিকিৎসকরা এখনও নিশ্চিত নন। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় ঢাকার রোগতত্ত্ব ও রোগ নির্ণয় ইনস্টিটিউটকে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে জরুরী বার্তা পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে বিশেষজ্ঞরা এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করা পর্যন্ত বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারছে না মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ। তার দেহ থেকে রক্ত, কফসহ বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে এরই মধ্যে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সন্দেহভাজন রোগীকে বিশেষ ব্যবস্থায় একটি আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। চিকিৎসক ও নার্স ছাড়া কাউকেই সেখানে যেতে দেয়া হচ্ছে না। হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোন ব্যবস্থা না থাকায় বিষয়টি ঢাকায় আইইডিসিআরকে জানানো হয়েছে বলে জানান রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক ডাঃ মোকাদ্দেম হোসেন। নীলফামারীর ডোমার উপজেলার জোড়াবাড়ি ইউনিয়নের মির্জাগঞ্জের আলতাব হোসেনের ছেলে তাজবিদ হোসেন চীনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল বিভাগে লেখাপড়া করতেন। করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর গত ২৯ জানুয়ারি শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আসেন। কিন্তু সেখানকার মেডিক্যাল পরীক্ষায় তার দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া না গেলেও নীলফামারীর সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে তার বাড়িতে রাখা হয়। কিন্তু শনিবার সকালে হঠাৎ করে জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হলে শনিবার দুপুরে তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। আইইডিসিআর-এর নির্দেশ পেলে তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হতে পারে বলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
×