ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার ধাক্কায় চীনমুখী যাত্রীর সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

করোনার ধাক্কায় চীনমুখী যাত্রীর সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে

আজাদ সুলায়মান ॥ করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ায় চীন ভ্রমণকারীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে যে হারে লোকজন নানা প্রয়োজনে চীন যেতেন, সেটা অর্ধেকে নেমে এসেছে। ভিসা লাগিয়ে পাসপোর্ট হাতে রেখে দিন তারিখ ঠিক করার পরও শেষ মুহূর্তে তারা যাত্রা বাতিল করেছেন। গত দু’সপ্তাহে কমপক্ষে ৮৭৬ জন চীন যাত্রা বাতিল করেছেন। যাদের ফ্লাইট সিডিউল ছিল ফেব্রুয়ারির প্রথম থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত। এদের মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, শিক্ষার্থী ও পর্যটক। শুধু চীন নয়- করোনার প্রভাব পড়েছে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, মিয়ানমারসহ আশপাশের অন্যান্য দেশেও। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ, দেশী বিদেশী এয়ারলাইন্স ও বেসরকারী ট্যুর অপারেটরস সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি যদি আরও ভয়াবহের দিকে যেতে থাকে, তাহলে ঢাকা থেকে চীন গমনকারীর সংখ্যা শূন্যে নেমে আসবে। এ বিষয়ে বেসরকারী এয়ারলাইন্স ইউএস বাংলার মুখপাত্র (উপ-মহাব্যবস্থাপক) কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, আপাতত কিছুটা লোড কমেছে। গত সপ্তাহে পেসেঞ্জার লোড নেমেছিল ৩০ শতাংশে। অন্যান্য এয়ারলাইন্সের মতো ইউএস বাংলারও লোড কমেছে। তবে এটা মনে হচ্ছে সাময়িক। এ প্রান্ত থেকে কমলেও ওই প্রান্ত থেকে আসছে শতভাগ। এতে গড় ঠিক থাকছে। চায়না সাউদার্ন জানিয়েছে, সব প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বে¡ও শেষ মুহূর্তে যাত্রা বাতিল করার ঘটনা ঘটছে প্রতিদিনই। গত এক সপ্তাহেই এ প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। শনিবার একটি এয়ারলাইন্সের কনফার্মড সিট বাতিল হয়েছে ৬১ শতাংশ। দিন দিনই কমছে চীনমুখী যাত্রী। বেসরকারী ট্যুর অপারেটর এ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানিয়েছে, দেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে চীন বেশ জনপ্রিয়। প্রতিদিন ঢাকা থেকে চারটি ফ্লাইট আসা যাওয়া করে। যাত্রীও থাকে যথেষ্ট। করোনা ভাইরাসের ভয়ে তাতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। এ কারণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশী তাদের চীন ভ্রমণ বাতিল করেছেন এবং অন্যরাও করার ঘোষণা দিয়েছেন। শরীয়তপুরের বাসিন্দা নাজমুল অনেকদিন ধরেই চীন থেকে তালা চাবি আমদানি করেন। এটা তার ভাল ব্যবসা। প্রায়ই তাকে চীন যেতে হয়। গত ২ ফ্রেব্রুয়ারি তার গুয়াংজু যাবার সিডিউল ছিল। কিন্তু করোনা আতঙ্কে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে এখন তিনি চীন যাত্রা বাতিল তো করছেনই এমনকি আগামী তিন মাসেও আর চীনের নাম মুখে নেবেন না বলে জানিয়েছেন। একই অবস্থা চট্টগ্রামের বাসিন্দা সাবরিনা সুলতানা চৌধুরীর। তার এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় চীনে থাকেন। তাদের দেখতে যাওয়ার ইচ্ছা ও পরিকল্পনা ছিল। সেখানে পড়ারও ইচ্ছা ছিল। একইসঙ্গে দেশটি ঘুরেফিরে দেখারও উদ্দেশ্য ছিল। গত ডিসেম্বরেই তিনি সেভাবে প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন। কিন্তু করোনার ভয়ে সবই ভেস্তে গেছে। ইমিগ্রেশন পুলিশ জানিয়েছে, গত কয়েক বছর ধরেই দেশের বাইরে ভ্রমণে ভ্রমণ পিপাসুদের অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য ছিল চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনাম। প্রতিদিনই অন্তত হাজার দুয়েক লোক এসব দেশে পাড়ি জমাতেন। এজন্য শুধু রাজধানীতেই এখন বেশকিছু বেসরকারী ট্যুর অপারেটর আছে যারা চীনে ট্যুর প্যাকেজ পরিচালনা করে। চীনে ভিসা আবেদনে সহায়তা থেকে শুরু করে হোটেল বুকিং এবং বিমানের টিকেটও বুকিং দেয় তারা। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আকাশবাড়ি হলিডেজ। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার মাহমুদুল হাসান তুহিন বলেন, হঠাৎ উহানে করোনা ছড়িয়ে পড়ায় একের পর চীন ভ্রমণ বাতিল করছেন বাংলাদেশের যাত্রীরা। শুধু তাই নয় চীনের পাশাপাশি থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম ভ্রমণের পরিকল্পনাও বাতিল করছেন অনেকে। বাংলাদেশ থেকে চীনে ভ্রমণের জন্য বেশিরভাগ যায় বেজিং, কুনমিং এবং সাংহাইয়ে। যাদের টিকেট করা ছিল- আমাদের মাধ্যমে তারা টিকেট বাতিল করছেন। এটা দিন দিনই বাড়ছে। সামনের দিনগুলোতে কেমন হয় সেটাই এখন দেখতে হবে। একটি ট্রাভেল এজেন্সির মালিক হাসান বলেন, পরিস্থিতি দিন দিনই মন্দার দিকে যাচ্ছে। শুধু বাণিজ্যিক ভ্রমণের পরিসংখ্যান থেকে বলা যায়, গত দুই সপ্তাহে ব্যবসা এবং পর্যটন মিলিয়ে দুই শতাধিক যাত্রী ভ্রমণ স্থগিত করেছেন। এখান থেকে চীনে যারা ব্যবসায়িক কাজে যান, তাদের বেশিরভাগই কাজ শেষ করে অতিরিক্ত কয়েকদিন পর্যটনের জন্য অবস্থান করেন। এছাড়া শুধু পর্যটন ভিসায়ও অনেকে যাচ্ছেন। একই সুরে কথা বলেন, বেসরকারী জ্যাস ট্যুর অপারেটর-এর সাগর আহমেদ। তিনি জানান, করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে গত দুই সপ্তাহে পর্যটক এবং ব্যবসায়ীরা চীন ভ্রমণ বাতিল করেছেন। গতবছরের জানুয়ারি মাসের সঙ্গে তুলনা করলে চলতি বছর চীনের ভিসা এবং টিকেটের চাহিদা অর্ধেকে নেমে এসেছে। টোয়াব জানিয়েছে, তাদের বেশিরভাগ ট্যুর প্যাকেজ চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। করোনা ভাইরাসের যদি আরও বিস্তার ঘটে কিংবা পরিস্থিতি যদি দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে তা বাংলাদেশের ট্যুর অপারেটরদের জন্য বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনবে। জানতে চাইলে দেশের শীর্ষ পর্যটন বিশেষজ্ঞ হাকিম আলী বলেন, করোনা এখন আর শুধু চীনের সঙ্কট নয়, এটা বৈশ্বিক। যে হারে এ ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে তাতে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। বিশেষ করে পর্যটন ব্যবসায়ী বা ট্যুর অপারেটরদের জন্য এই ভাইরাস চতুমুর্খী সঙ্কট ডেকে আনবে। চীন ছাড়াও অন্যান্য দেশেও পর্যটকদের জন্য হুমকিস্বরুপ হবে। এখন এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার উপায় বের করতে হবে।
×