ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-পাকিস্তান টেস্ট

প্রথমদিনেই অলআউট বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৯:০৩, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

প্রথমদিনেই অলআউট বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ দীর্ঘ ১৬ বছর পর, ২০০৩ সালের পর পাকিস্তানে টেস্ট খেলতে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। জয়ের আশা দেখা হয়। সেখানে প্রথমদিনেই বাংলাদেশ অলআউট হয়ে যায়। প্রথমদিনেই প্রথম ইনিংস খতম হয়ে যায় বাংলাদেশের। ২৩৩ রানের বেশি করতে পারেনি। ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। দুই টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হারে। ব্যাটসম্যানদের কাহিল অবস্থা হয়। সেই টেস্ট সিরিজে খেলেননি ওপেনার তামিম ইকবাল। গত বছর পাঁচ টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। সেখানে দুটি (নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে) টেস্ট খেলেন তামিম। সেই গত বছর মার্চে সর্বশেষ টেস্ট খেলেন। এরপর বাংলাদেশ দল আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একটি ও ভারতের বিরুদ্ধে দুটি টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। তামিম বিশ্রামে থাকায়, ছুটিতে থাকায় খেলতে পারেননি। প্রায় এক বছর পর টেস্ট খেলতে নামেন। নামার আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগে (বিসিএল) ট্রিপল সেঞ্চুরিও করেন। কিন্তু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে নেমে ৩ রানের বেশি করতে পারেননি। ট্রিপল সেঞ্চুরির পর ৩ রান। কী বেহাল দশা। দলের ৩ রানে তামিম আউট হওয়ার আগেই প্রথম ওভারেই জাতীয় দলের জার্সিতে প্রথম খেলতে নামা অভিষিক্ত ওপেনার সাইফ হাসান রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফিরেন। তামিমের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নামবে কে? সাদমান ইসলাম ইনজুরিতে পড়ায় এ প্রশ্নই থাকে। সেই প্রশ্নের উত্তর সাইফকে ওপেনিংয়ে নামিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু ওপেনিংয়ে খেলতে পারার সুযোগ প্রথম ইনিংসে কাজে লাগাতে পারেননি সাইফ। দ্রুতই দুই উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেই বিপদ দূর করার চেষ্টা করেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হক। প্রতিরোধ গড়েন। দুইজন মিলে ৫০ রানের জুটিও গড়েন। কিন্তু যেই ৬২ রান হয়, তখন মুমিনুল (৩০) আউট হয়ে যান। তাতে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। নাজমুল হোসেন শান্ত প্রথম সেশনে নিজেকে মেলে ধরলেও এরপর আর কুলিয়ে উঠতে পারেননি। হাফসেঞ্চুরি থেকে ৬ রান দূরে থাকতেই আউট হয়ে যান। দলের ১০০ রান হতে ৫ রান বাকি থাকে। দলকে ১০০ রানেও নিয়ে যেতে পারেননি শান্ত। মুমিনুল ও শান্তর আউটের পর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে ভরসা করা হয়। কিন্তু সেই ভরসার প্রতিদান দিতে পারছেন না রিয়াদ। দলের ১০৭ রানে রিয়াদের আউটের পর মহাবিপাকে পড়ে যায় বাংলাদেশ। প্রথমদিনেই অলআউট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়ে যায়। ২২ রানে একবার ‘নতুন জীবন’ পাওয়া মোহাম্মদ মিঠুন ও লিটন কুমার দাস হাল ধরার চেষ্টা করে যান। ৫০ রানের জুটি তারাও গড়েন। সুন্দর এগিয়েও চলতে থাকেন। কিন্তু যখনই উইকেটে সেট হয়ে যান, তখনই বিপত্তি ঘিরে ধরে। দলের ১৬১ রানের সময় যেমন এলবিডব্লিউ হয়ে যান লিটন (৩৩)। তাইজুল ইসলাম উইকেট আঁকড়ে থাকায় পারদর্শী। এর আগেও তা দেখা গেছে। মোহাম্মদ মিঠুনের সঙ্গে সেই কাজটি খুব ভালভাবেই করতে থাকেন তাইজুল। দুইজন মিলে দলকে ২০০ রানেও নিয়ে যান। যেখানে ২০০ রান করাই কঠিন ছিল, সেখানে মিঠুন ও তাইজুল মিলে সেই কাজটি করেন। নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানরা যা করতে পারেননি, তা করে দেখান তাইজুল। মিঠুনকে যোগ্য সঙ্গ দেন। দল যখন ২১৪ রানে যায়, তখন দুইজন মিলে ৫৩ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। যা সপ্তম উইকেটে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সেরা জুটি হয়ে যায়। ২০১৫ সালে খুলনায় সাকিব আল হাসান ও শুভাগত হোম মিলে এ উইকেটে ৩১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছিলেন। এটিই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সপ্তম উইকেটে বাংলাদেশের সেরা জুটি ছিল। মিঠুন ও তাইজুল মিলে সেই জুটিকে পেছনে ফেলে নতুন জুটি গড়েন। কিন্তু তাইজুল এত ভাল খেলেও আর বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারেননি। তবুও ৭২ বল খেলে ৪ চারে যে ২৪ রান করেছেন তাইজুল, তা প্রশংসা কুড়িয়েছে। আর মিঠুনতো বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে প্রথম হাফসেঞ্চুরিয়ানই হয়ে গেছেন। ধৈর্য ধরে, দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে গিয়ে ১৩৭ বলে হাফসেঞ্চুরি করেন। ৪৬ রানের সময় অবশ্য আরেকবার ক্যাচ আউট হওয়া থেকে বাঁচেন মিঠুন। তবে সুযোগ ভালভাবে কাজেও লাগান। তাইজুলের মতো কী আর রুবেল হোসেন, আবু জায়েদ রাহী, এবাদত হোসেনরা উইকেট আঁকড়ে থাকতে পারবেন। তাই ভেবে হয়ত মিঠুনও মারমুখি হয়ে খেলতে থাকেন। ইনিংসের প্রথম ছক্কাটিও হাঁকিয়ে বসেন মিঠুন। কিন্তু রুবেল, রাহী কিছুই করতে পারেননি। রুবেল আসেন আর সাজঘরে ফিরেন। রুবেলের আউটের পর অবশ্য মিঠুনও আউট হয়ে যান। নাসিম শাহর বাইরের বল খেলতে যান। তাতে ১৪০ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৬৩ রান করে ক্যাচ আউট হয়ে যান মিঠুন। রিভিউ নিয়ে মিঠুনকে আউট করে পাকিস্তান। রাহী হেলেদুলে স্ট্রাইকে যেতে থাকেন। আর তাতে করে রান আউট হয়ে যান। ২৩৩ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। আর মাত্র ৮ ওভার টিকে থাকতে পারলেই প্রথমদিনটি শেষ করতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু তা পারা যায়নি। বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হতেই আলোক স্বল্পতায় প্রথমদিন শেষ হয়ে যায়। পেস আতঙ্ক যে কতটা ঘিরে ধরেছে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের, তা বোঝা গেল। শাহিন শাহ আফ্রিদি, মোহাম্মদ আব্বাসরা যে খুব ভোগাতে পেরেছেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের এমনটি নয়। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা ঠিকই ভুল করেছেন। আউটও হয়েছেন। বাইরের বল খেলতে গিয়ে কিংবা ভেতরে আসা বল রুখতে গিয়ে আউট হয়েছেন। ব্যাটসম্যানদের ভুলের মাসুল দিতে হয়েছে দলকে। মিডলঅর্ডারে শান্ত, মুমিনুল, মিঠুন, লিটনের সঙ্গে তাইজুল যদি নিজেকে মেলে ধরতে না পারতেন, তাহলে আরও করুণ অবস্থা হতো। প্রথম দিনেই যে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ, তাতে দিনও শেষ হয়। আজ পাকিস্তান ব্যাটসম্যানরা প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নামবে।
×