ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণমেরুতে উষ্ণ পানির স্রোত

প্রকাশিত: ০৯:০০, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

দক্ষিণমেরুতে উষ্ণ  পানির স্রোত

বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি দক্ষিণমেরুর তলদেশে একটি ভগ্নদশা হিমবাহের নিচে গরম পানির স্রোত আবিষ্কার করেছেন। তারা ওই হিমবাহটির নাম দিয়েছেন ‘ডুমসডে গ্লাসিয়ার’ বা ভগ্নদশা হিমবাহ। এই নাম দেয়ার পেছনে তাদের যুক্তি হলো, ওই হিমবাহটি এন্টার্কটিকার সবচেয়ে ক্ষয়িষ্ণু হিমবাহের একটি। সিবিসি নিউজ। গবেষকরা প্রায় এক দশক ধরে দক্ষিণমেরুতে হিমবাহটি প্রত্যক্ষ করছিলেন, তবে অতি সম্প্রতি সেখানে তারা গরম পানির স্রোত দেখতে পান এবং সেটা হিমবাহের ঠিক মাঝামঝি এলাকা দিয়েই প্রবাহিত। নিউইয়র্ক ইউভার্সিটির এনভায়রনমেন্টাল ফ্লুয়েড ডায়নামিকস ল্যাবরেটরি ও নিউইয়র্ক ভিত্তিক আবু ধাবির সেন্টার ফর গ্লোবাল সি লেভেল চেঞ্জ’র পরিচালক ডেভিড হল্যান্ড বলেন, ‘বাস্তবতা হলো ওই ধরনের গরম পানির স্রোত আমাদের দল রেকর্ড করেছে। তবে আমরা জানতে পেরেছি যে, হিমবাহটি গলতে শুরু করেছে। আর এ কারণে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধিতে প্রভাব পড়তে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বের এই অংশের গরম পানি আমাদের দেখা সবচয়ে দূরের ঘটনা এবং এটি আমাদের সকলকে বৈশ্বিক উষ্ণতার বিষয়ে সতর্ক করে দিচ্ছে।’ তিনি জানান, ভগ্নদশাটি প্রায় ৭৪ হাজার স্কয়ার মাইল এলাকা নিয়ে বিস্তৃত। অনেক বিজ্ঞানী বিষয়টিকে মানুষ ও পৃথিবীর জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও ভঙ্গুর বলে মনে করছেন। তারা এটি ভেবে শঙ্কিত যে, হিমবাহটি এভাবে গলতে থাকলে যে পরিমাণ পানি বাড়বে তা যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্য বা গ্রেট ব্রিটেনের সমপরিমাণ জায়গা তলিয়ে দিতে সক্ষম। এছাড়া এই অতিরিক্ত পানির কারণে সমুদ্র উচ্চতা তিন ফিটের চেয়েও বেড়ে যাবে। এর ফলে বিপুল পরিমাণ সম্পদ ও মানুষের ক্ষতি হবে বলেও জানান গবেষকরা। অভূতপূর্ব গবেষণাটি করতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের শত শত কোটি ডলাব ব্যয় হয়েছে। গবেষণাটির গবেষক দল হিমবাহটির অন্তত দু’হাজার ফিট গভীরে গরম পানির ওই স্রোত আবিষ্কার করেন। দলটি গত জানুয়ারির শুরু দিকে হিমবাহের কন্টাকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে ওই স্থানে পৌঁছেন এবং এরপর তারা পানির প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য সমুদ্র সংবেদনশীল ডিভাইস পেতে রাখেন। নিউইয়র্ক ইউভার্সিটির শিক্ষার্থী অরোরা বাসিনস্কি বলেন, ‘আমরা কেবল সমুদ্রের গভীরতাই দেখিনি, বরং পানির স্রোতও পর্যবেক্ষণ করেছি। আমরা সেখানে হিমবাহের বরফ গলতে দেখেছি।’ আন্তর্জাতিক থোয়েটস গ্লাসিয়ার কোলাবরেশনের তথ্য মতে, এন্টার্কটিকায় হিমবাহ ও বরফ গলা গত ত্রিশ বছরে দ্বিগুণ হয়েছে। গত জানুয়ারিতেই ম্যানহাটন শহরের সমপরিমাণ প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ভূমি হিমবাহের দ্রুত ক্ষয়ের জন্য তলিয়ে গেছে। এদিকে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, আগামী এক শ’ বছরের মধ্যে পুরো পশ্চিম এন্টার্কটিকার বরফ গলতে শুরু করবে এবং এটি হলে সমুদ্র উচ্চতা আরও ১০ ফুট বৃদ্ধি পাবে।
×