ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নলকূপের পাইপে গ্যাস ॥ আতঙ্কে এলাকাবাসী

প্রকাশিত: ০৮:৫৪, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  নলকূপের পাইপে গ্যাস ॥  আতঙ্কে এলাকাবাসী

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ সমুদ্র অথবা নদীর স্রোতের ঘূর্ণমান দৃশ্য নয়, নলকূপ বসাতে গিয়ে বিপজ্জনক মাত্রায় গ্যাস উদগীরণের দৃশ্য। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার বায়েক ইউনিয়নের শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ে নলকূপ বসানোর সময় মাটির তলদেশ থেকে গ্যাস উদগীরণ শুরু হয় বুধবার। সে সঙ্গে উচ্চচাপে পানি বের হতে থাকে। ঘটনার পর থেকে বিদ্যালয়টি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে গ্যাস ও পানির চাপে বিদ্যালয়ের শহীদ মিনার, দেয়াল, বড় বড় গাছপালা ভূগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে। আশপাশ এলাকায় সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়েছে। চুলায় আগুন জ্বালানো বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। সাধারণ মানুষকে শুকনো খাবার খেতে হচ্ছে। ঘটনার দুদিন পেরিয়ে গেলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে তীব্র আতঙ্ক দেখা দেয়। এদিকে শুক্রবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খান ও পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। শনিবার আইনমন্ত্রীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয়রা জানায়, গত বুধবার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি টিউবওয়েল বসানোর কাজ করছিল শ্রমিকরা। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে প্রায় পাঁচশ’ চল্লিশ ফুট বোরিং করার পর বালি এবং পানির লেয়ার পাওয়ায় ফিল্টার পাইপ লাগানোর জন্য পাইপ উপরের দিকে তুলছিল। আনুমানিক দেড়শ’ ফুট উপরে তোলার পর হঠাৎ করে বিকট শব্দে গ্যাস উঠতে থাকে। এর পর ৮০/৯০ ফুট উপরে পানি ও গ্যাস উঠতে শুরু করে। বালির সঙ্গে বের হচ্ছে পুরাতন কয়লা আর পাথর। এতে আতঙ্ক সৃষ্টি হয় স্থানীয়দের মধ্যে। বাড়তে থাকে গর্তের পরিধি। প্রচন্ড ঘূর্ণিপাক সৃষ্টি হয় সেখানে। পাশর্^বতী শহীদ মিনার ও ৪০ ফুট উঁচু নারিকেল ও সুপারি গাছ ভূগর্ভে তলিয়ে যায়। বিদালয়ের মাঠ অন্তত ৪ ফুট বালির আস্তরে ঢাকা পড়ে। শ্রেণীকক্ষও বালিতে ভরে যায়। গ্যাসের উৎকট গন্ধে পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ে। গ্যাসের সঙ্গে নিচের বালু উঠে আসার কারণে দুটি ভবন এখন হুমকির মুখে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য বিদ্যালয়টি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। লাল নিশান টানিয়ে দেয়া হয় চারপাশে। খবর পেয়ে গত বৃহস্পতিবার বাপেক্সের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তারা বালু ও গ্যাসের নমুনা সংগ্রহ করে বিষয়টি ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানিয়েছেন। তবে এটাকে বন্ধ করার মতো আধুনিক কোন যন্ত্রপাতি নেই। তাই পরবর্তী সিদ্ধান্তের জন্য উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করতে হবে। এদিকে গ্যাস নির্গমনের দৃশ্য দেখতে বিদ্যালয়ের আশেপাশে ভিড় জমিয়েছে উৎসুক নারী-পুরুষ। বিদ্যালয়ের চারপাশে পুলিশ ও গ্রাম পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আল মামুন ভূইয়া বলেন, এ ঘটনায় বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিতে রয়েছে। শুক্রবার দুপুরে বিদ্যালয়ের গাছ ও সীমানা প্রাচীরের দেয়ালের একাংশ ধসে পড়ে। সময় যত যাচ্ছে বিষয়টি নিয়ে তত উদ্বেগ বাড়ছে আমাদের। কসবা উপজেলা চেয়ারম্যান ও আইনমন্ত্রীর এপিএস এ্যাডভোটেক রাশেদুল কাওসার ভূঁইয়া জীবন জানান, আইনমন্ত্রী সর্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন। বাপেক্স ঘটনাস্থলে এসে নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন। তারা আজকে জানিয়েছেন গর্তটি তাৎক্ষণিক বন্ধ করার মতো আধুনিক যন্ত্রপাতি তাদের কাছে নেই। গর্তটি ধীরে ধীরে বড় আকার ধারণ করছে। যারা আগুন জ্বালাতে পারছেন না তাদের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। বাপেক্সের জেনারেল ম্যানেজার ও ভূতত্ত্ববিদ আলমগীর হোসেন জানান, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি গ্যাস মিশ্রিত পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। কসবার সালদা গ্যাস ফিল্ডের প্লান্ট অপারেটর রেজাউল করিম বলেন, পানি ও গ্যাসের বেগ এখনও কমেনি। ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বাপেক্সের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক চলছে। শনিবার সকাল ৮টায় ৭২ ঘণ্টা পূর্ণ হবে। এর মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
×