ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দিনাজপুরে চার কোটি টাকার সেতু কালভার্ট দুর্ভোগ বাড়িয়েছে

প্রকাশিত: ০৮:২১, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

দিনাজপুরে চার কোটি টাকার সেতু কালভার্ট দুর্ভোগ বাড়িয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ দিনাজপুরে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ছয়টি সেতু ও একটি কালভার্ট কোন কাজে আসছে না। খানসামা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের বেলান ও ভূল্লি নদীর ওপর এই ছয়টি সেতু ও একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। অপরিকল্পিত ও রাজনৈতিক বিবেচনায় তৈরি করা সেতুগুলোর কারণে ২৫টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কৃষকদের উৎপাদিত ফসল বাজারে নিতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। অপরদিকে মাঝখানে মাটি দিয়ে জোড়া সেতুর সংযোগ দেয়ায় নদীর পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জানা গেছে, ২০১৭ সালে খানসামা উপজেলার খামারপাড়া ইউপির আদর্শ গ্রামের পাশের বেলান নদীতে ৮০ ফুট সেতু ভেঙ্গে ৩৬ ফুট নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুটির দুই পাশে যানবাহন যাওয়ার কোন রাস্তা নেই। একটি চিকন আইল রয়েছে। সেখান দিয়ে মানুষ হেঁটে চলাচল করে। এতে ওই ইউনিয়নের গারপাড়া গ্রামের হাটপুকুরপাড়া ও নাপিতপাড়ার কাছে আঙ্গারপাড়ার হাজারো মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে। সাথে ২ নং ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের ভূল্লি নদীর ওপর সংযোগ সড়ক ছাড়াই পাশাপাশি দুটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। একটিতে নেমপ্লেট আছে। অপরটিতে নেই। ২০১৫-২০১৬ সালে এই সেতু দুটি নির্মাণ করা হয়েছে। সেতু দুটির মাঝখানে নদীর ওপর দুই পাশে প্রাচীর দিয়ে মাটি ফেলা হয়েছে। এতে নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সেতু দুটির সংযোগ সড়ক না থাকায় দুই পাড়ের মানুষকে তিন কিলোমিটার ঘুরে চলাচল করতে হয়। আলোকঝাড়ি ইউনিয়নের শুশুলী তালেপাড়া ৪নং ওয়ার্ড এবং বাসুলী হাজীপাড়া ৬নং ওয়ার্ডে যাতায়াতে রাস্তার পাশে ডারার ওপর ফুটব্রিজ তিনমাস আগে নির্মাণ করা হয়েছে। সংযোগ রাস্তায় সাঁকো দিয়ে ফুটব্রিজ পেরিয়ে শুশুলী-২ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেতে হয় শিশুদের। দুই পাশে সংযোগ না থাকায় সংযোগ সিঁড়ি বানিয়ে চলাচল করছে এলাকার মানুষ। খানসামা উপজেলায় সবচেয়ে আলোচিত সেতু হচ্ছে ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের খামার বিষ্ণুগঞ্জ গ্রামের দয়ারাম বাবুপাড়া এবং নাপিতপাড়ার কাছে বেলান নদীতে নির্মাণ করা সেতুটি। এখানে অর্ধেক সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এলাকার মানুষ বাঁশ দিয়ে অর্ধেক সাঁকো বানিয়ে চলাচল করে আসছেন। ৪০ ফুট এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে। সেতু পেরিয়ে নদীর পশ্চিম পাশে আধা কিলোমিটারের মধ্যে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এইচ এম মাহমুদ আলীর বাড়ি। ২নং ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের নিতাই বাজার হতে বালাডাঙ্গী যাওয়ার রাস্তায় বেলান নদীর ওপরে ৩৬ ফুট করে দুটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। মাঝখানে নদীতে প্রাচীর দিয়ে মাটি ফেলে সেতু দুটির সংযোগ করা হয়েছে। এতে নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের দয়ারামপাড়া গ্রামের চিত্রমোহন গলিয়া ও ম-লপাড়া গ্রামের সাত্তার আলী বলেন, নদীতে অর্ধেক সেতু হয় এটা আমরা জীবনে দেখিনি বা শুনিনি। বাধ্য হয়ে বাঁশের সাঁকো বানিয়ে চলাচল করছি। যারা কোনো দিন এই রাস্তায় চলাচল করেনি তারা রাতের আঁধারে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়তে পারেন। এ ব্যাপারে খানসামা উপজেলার ২নং ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ হাফিজুল হক জানান, সেতুগুলো যখন নির্মাণ করা হয় তখন রাস্তার কাজও ধরা ছিল। কিন্তু ঠিকাদাররা কাজ না করে টাকা নিয়ে পালিয়েছে। তাই এই অবস্থা। এখন নতুন করে কাজ করার জন্য বরাদ্দ পাওয়া গেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের অধীনে সেতুগুলো বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মাজাহারুল ইসলাম বলেন, কাজগুলো আমার সময়ের নয়, তবে এই কাজগুলো শেষ করার জন্য স্থানীয় এমপির কাছে ডিও নিয়ে বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে সমস্যাগুলো সামাধান করা হবে। কাজগুলো অপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, স্থানীয় নেতাকর্মী ও মন্ত্রী-এমপিদের চাহিদার ওপর কাজগুলো করা হয়ে থাকে। তবে অর্ধেক ও মাঝখানে মাটি ভরাট করে সেতুর সংযোগ দেয়ার ব্যাপারে পিআইও বলেন, আমরা ৫০ থেকে ৬০ ফুটের বেশি বড় সেতু তৈরি করতে পারি না। তাই হয়তো এ অবস্থা হয়েছে।
×