ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অভিশংসন থেকে রেহাই পাওয়ার পর ট্রাম্প, ডেমোক্র্যাটদের তুলাধুনা করলেন

জীবনে অন্যায় করিনি

প্রকাশিত: ০৭:৪২, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

জীবনে অন্যায় করিনি

অভিশংসন বিচারে টিকে যাওয়ার পর উৎফুল্লিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন যে, তিনি জীবনে কোন অন্যায় কাজ করেননি। বুধবার মার্কিন সিনেট অভিশংসন প্রক্রিয়া থেকে ট্রাম্পকে খালাস দেয়। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের ইস্ট রুমে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ট্রাম্প শিবির। অনুষ্ঠানের পাশাপাশি একটি প্রার্থনা সভারও আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠজনরা উপস্থিত ছিলেন। সিনেটে খালাসের পর মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন-এখন ডেমোক্র্যাট শিবিরের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈরিতা আরও বাড়তে পারে। পাশাপাশি প্রখ্যাত রিপাবলিকান সিনেটর মিট রমনিসহ দলটির যেসব নেতা ট্রাম্পের বিপক্ষে কাজ করেছেন তারা ট্রাম্পের বিরাগভাজন হতে পারেন। খবর বিবিসি, ওয়াশিংটন পোস্ট ও নিউইয়র্ক টাইমস অনলাইনের। ট্রাম্প শিবিরের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, এখন ট্রাম্প তার বিরোধীদের আর ছেড়ে কথা বলবেন না। হোয়াইট হাউসের এক প্রেস সেক্রেটারি ইঙ্গিত করেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অভিশংসন প্রক্রিয়ার জন্য ডোমোক্র্যাটদের চড়া মাশুল গুনতে হবে। বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে ট্রাম্প ডেমোক্র্যাট শিবিরের নেতাদের তুলোধুনো করেন। এ সময় স্পীকার ন্যান্সি পেলোসিসহ ও রিপাবলিকান নেতা মিট রমনির কঠোর সমালোচনা করেন তিনি। ট্রাম্প বলেন, আমরা কোন অন্যায় করিনি। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। তবে সব কিছুর শেষ আছে। এ সময় সংবাদপত্রে তিনি তার খালাসের বিষয়টি সবাইকে দেখিয়ে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভুল ছিল। এ সময় এই অভিশংসন প্রক্রিয়ায় জড়িতদের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ট্রাম্প। বুধবার রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ দুটি থেকে তাকে রেহাই দেয়। দুটো অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরাতে ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদ দেড় মাস আগে সিনেটে বিলটি পাঠিয়েছিল। শুনানি শেষে বুধবার সিনেটে যে ভোটাভুটি হয়, তাতেই যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প অন্তত এক বছরের জন্য টিকে গেলেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে ইউক্রেনকে চাপ দিয়েছিলেন। আর অভিশংসন তদন্তে সহযোগিতা করতে অস্বীকার করে কংগ্রেসের কাজে বাধা দিয়েছেন। প্রথম অভিযোগ ৫২-৪৮ ভোটে এবং দ্বিতীয় অভিযোগ ৫৩-৪৮ ভোটে নাকচ হয়। কোন একটি অভিযোগে দুই তৃতীয়াংশ ভোটে দোষী সাব্যস্ত হলেই ট্রাম্পকে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হতো ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের কাছে। তবে সিনেটে ট্রাম্পের নিজের দল রিপাবলিকান পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় তেমন কিছু যে ঘটবে না সেটা অনুমিতই ছিল। ট্রাম্পের আগে এন্ড্রু জনসন এবং বিল ক্লিনটনকে ইমপিচমেন্টের প্রস্তাব সিনেটে পাঠিয়েছিল প্রতিনিধি পরিষদ। তবে সিনেট তাদের কাউকে পদচ্যুত করেনি। তবে ট্রাম্পই হতে যাচ্ছেন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি অভিশংসন ফাঁড়া কাটিয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ভোটের লড়াইয়ে নামতে যাচ্ছেন। নির্বাচনের বছরে গুরুতর অভিযোগে প্রেসিডেন্টের এই অভিশংসন প্রক্রিয়া দ্বিধাবিভক্ত করে রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্রকে। তবে ট্রাম্প বরাবরই তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন। তার প্রচার শিবিরের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রেসিডেন্ট পুরোপুরি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। এখন আমেরিকানদের জন্য কাজে মন দেয়ার সময়। অকর্মা ডেমোক্র্যাটরা ভাল করেই জানে, তারা তাকে হটাতে পারবে না, সে কারণেই তারা অভিশংসনের পথে গেছে।’ এদিকে গ্যালপের জনমত জরিপে এ সপ্তাহে ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা উঠে এসেছে ৪৯ শতাংশে, যা তার জন্য এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। উটাহর সিনেটর মিট রমনি ছিলেন একমাত্র রিপাবলিকান যিনি দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে ট্রাম্পের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। তবে ডেমোক্র্যাটদের নিরাশ করেছেন অন্য দুইজন মধ্যপন্থী রিপাবলিকান সিনেটর-মেইনের সুসান কলিনস এবং আলাস্কার লিসা মারকাওস্কি। প্রতিশ্রুতি দিয়েও তারা নিজের পক্ষ ত্যাগ করেননি। কয়েকজন রিপাবলিকান সিনেটর সাম্প্রতিক সময় ট্রাম্পের আচরণের সমালোচনা করলেও, তাদের বক্তব্য হচ্ছে সেটা ইমপিচ করার পর্যায়ে যায়নি। প্রেসিডেন্টকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেবার জন্য সিনেটের ১শ’ আসনের মধ্য থেকে দুই তৃতীয়াংশ ভোট পড়ার দরকার হতো। ভোটাভুটিতে হেরে যাওয়ার পর ডেমোক্র্যাট সদস্যরা বলেছেন, এর ফলে ট্রাম্প আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবেন। প্রতিনিধি পরিষদের স্পীকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, ‘ট্রাম্প আমেরিকার গণতন্ত্রের জন্য সব সময় একটি ‘হুমকি’ হিসেবে বিবেচিত হবেন এবং রিপাবলিকান সিনেটররা আইন না থাকার বিষয়টিকে সাধারণ বিষয় বানিয়েছেন ফেলেছেন।’ সিনেটে ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার বলেছেন, প্রেসিডেন্ট এ যাত্রা রেহাই পেলেও সবাই জানেন তার ত্রুটিসমূহ।
×