ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবন্ধীদের জ্ঞানের বাতিঘর শিশু বিকাশ কেন্দ্র

প্রকাশিত: ০৭:৩৬, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

    প্রতিবন্ধীদের জ্ঞানের বাতিঘর শিশু বিকাশ কেন্দ্র

আমার মেয়ে এখন ইশারায় কথা বলতে পারে। এখানে এসে অনেক কিছু শিখেছে। নিজের ও বাবা মায়ের নামসহ বিভিন্ন পশু পাখির নামও সে এখন লিখতে পারে। কথাগুলো বলছিলেন বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী বাবলির (৮) মা মালেকা বেগম। একইভাবে প্রতিবন্ধী শিশু মুয়াজ (৯) এর মা মনসুরা বেগম বলেন, আমার ছেলে এখন ইশারায় পুরো জাতীয় সঙ্গীত পাঠ করতে পারে। আর এর জন্য প্রতিদিন ১০ মাইল পেরিয়ে নিয়মিত তাকে স্কুলে নিয়ে যাই। সে কিছু করতে না পারুক। অত্যন্ত বেঁচে থাকার জন্য মনের সকলের কাছে স্পষ্টভাবে মনের ভাব করতে পারবে। এটাই আমার চাওয়া। শুধু মুয়াজ নয় তার সহপাঠী সাহেব, সাজিয়া, দিপু, রাজ, কনা, বর্ষা, ইমরান, আমান, নিশা, রাশিদা, রিপা, হাসেম, আলিফ, মাসুদসহ আরও অনেক প্রতিবন্ধী শিশু এখানে এসে ইশরায় কথা বলতে এবং প্রাথমিকভাবে সবকিছু লিখতে পারছে। আর প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে হতাশ অভিভাবকদের এভাবে আশার আলো দেখাচ্ছে ‘শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশু বিকাশ কেন্দ্র’ নামে সৈয়দপুরের শ্রবণ প্রতিবন্ধী এই বিদ্যালয়টি। সৈয়দপুর পৌর এলাকার অফিসার্স কলোনি শহীদ ক্যাপ্টেন মীর শামসুল হুদা সড়ক (পাঁচমাথা মোড়) ঘেঁষে এ ‘শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশু বিকাশ কেন্দ্র।’ জানা যায়, প্রায় ৮ বছর ধরে এ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিবন্ধী শিশুদের বাতিঘর’ হয়ে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। বেসরকারী এনজিও শার্পের উদ্যোগে ২০১২ সালে এই স্কুলটির পথচলা শুরু হয়। প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে বিপদগ্রস্ত পরিবারগুলো ভরসাস্থল হিসেবে এ স্কুল খ্যাতি ছড়িয়েছে। আর ব্যতিক্রমী এ স্কুলে বর্তমান শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৩ জন। এর আগে অনেক বাক প্রতিবন্ধী শিশু এই প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে। সৈয়দপুর উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকেও প্রতিবন্ধী শিশুরা এখানে আসে। এদের মধ্যে কেউ বাক, কেউবা বুদ্ধি আবার কেউবা শারীরিক প্রতিবন্ধী। শিক্ষার্থীরা সবাই সৈয়দপুর উপজেলার সোনাখুলী, ঢেলাপীর, বোতলাগাড়ী শ্বাসকান্দর, ইসলামবাগ, নতুন বাবুপাড়া, কামারপুকুর, কদমতলী, রাবেয়া কুন্দল, মুন্সিপাড়া, হানিফ মোড়, ধলাগাছ, নয়াটোলাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। বিদ্যালয়টির শিক্ষক রুমা বেগম, জানান, প্রতিদিন সকাল ৯ থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এই শিশুদের পাঠদান করানো হয়। এর মধ্যে দেওয়া হয় খাবারের বিরতি। শিশুরা যাতে সহজে সব কিছু শিখতে ও লিখতে পারে এজন্য আমরা একটি কাগজে দোয়েল পাখির ছবি এবং তার বিপরীত পাশে সেই দোয়েলকে চিনতে থাকে ইশারার অঙ্গভঙ্গি। এতে শিশুরা সহজে সব কিছু চিনতে ও বলতে পারে। আর লেখার জন্য সেই দোয়েল পাখির চিত্রের সঙ্গে দোয়েল লেখার কপি দেয় এতে শিশুরা যেমন দোয়েল পাখি চিনতে পারে ঠিক তেমনি ইশারায় দোয়েল পাখির উচ্চারণ করে এবং লিখতেও পারে। শিশুদের পাশাপাশি তাদের সঙ্গে আসা অভিভাবকদেরও দেখানো হয় এই পদ্ধতি যাতে বাসায় গিয়ে তারা তাদের শিশুদের শিক্ষা দিতে পারেন। প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা ও সুবিধা প্রদান বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ নাসিম আহমেদ বলেন, শহরে প্রতিবন্ধী ওই স্কুল সম্পর্কে জেনেছি। বর্তমান বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাই প্রতিবন্ধী এইসব শিক্ষার্থীদের কল্যাণে সৈয়দপুর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে যা করার দরকার আমরা করব। -এম আর মহসিন, সৈয়দপুর থেকে
×