ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অনুকূল পরিবেশ দাবি

মীরসরাইয়ে মহিষ কমছে

প্রকাশিত: ০৭:৩৬, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

মীরসরাইয়ে মহিষ কমছে

এক সময় মীরসরাই চরাঞ্চলের বিভিন্ন চারণভূমিতে হাজার হাজার মহিষের দেখা মিললেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা কমতে শুরু করেছে। এখানে খাদ্য, বাসস্থান ও প্রতিকূল পরিবেশের কারণে এ অঞ্চল থেকে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে মহিষের সংখ্যা। গত ৩০ বছরের ব্যবধানে এ অঞ্চলে মহিষের সংখ্যা কমে ২-৩ হাজার মহিষে এসে দাঁড়িয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কমবে মহিষের আবাস। মীরসরাই থেকে মহিষের অভয়ারণ্য রক্ষায় দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল। এই এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে অনেক চর রয়েছে। নদীর মাঝখানে এসব চরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে সবুজ ঘাসের বিপুল সমারোহ। আর এসব চরে এক সময় পালন করা হতো হাজার হাজার মহিষ। যুগ যুগ ধরে বংশপরম্পরায় বহু পরিবার এখানে মহিষের মাংস ও দুধ ও দধি বিক্রি সংসার চালাতেন। অনেকে আবার নিজস্ব মহিষের মাধ্যমে দুধ উৎপাদন করে দধি তৈরি করতেন। দধির ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গড়ে উঠেছিল শত শত মহিষ নিয়ে বাথান। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব বাথান থেকে মণে মণে দুধ আসতে শুরু করত বাজারগুলোতে। গ্রামাঞ্চলে হাটের দিনে দধির টালির পসরা সাজিয়ে বসতেন বিক্রেতারা। বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হয় মহিষের দুধের দধি। মীরসরাইয়ের ইছাখালীর চরশরৎ এলাকার মহিষ বাথানের মালিক মোঃ কাশেম জানান, তার কাছে ১৫ বছর আগেও ৫০০টির বেশি মহিষ ছিল। মহিষের দুধ ও মাংস বিক্রি করে যে টাকা আসতো তাতে অনেক আরামেই তার সংসার চলত। কিন্তু বর্তমানে ইকোনমিক জোন হওয়াতে খাদ্য, চারণভূমি ও বাসস্থানের অভাব এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে মহিষগুলো বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছি। মহিষের পালক মোঃ ইকবাল বলেন, ইছাখালির এই চরে তাদের বাথানে প্রায় আড়াইশ মহিষ ছিল। যা তারা চার পুরুষ ধরে লালন করে আসছিলেন। যেখান থেকে দৈনিক ১৩০ থেকে ১৫০ কেজি দুধ পাওয়া যেত। মীরসরাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র পোদ্দার জানান, মীরসরাইয়ের বিশাল চরাঞ্চলে বাংলাদেশের বৃহত্তম মীরসরাই ইকোনমিক জোন হওয়ার কারণে মহিষের অভয়ারণ্য করছে। আমরা বিভিন্ন সভা সমাবেশে মহিষের অভয়ারণ্য সংরক্ষণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। খাদ্য বিশেষজ্ঞের মতে, গরুর তুলনায় মহিষের মাংসে ক্যালসিয়াম, আয়রণ ও ফসফরাস বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। তাছাড়া মহিষের মাংস গরুর তুলনায় কম চর্বিযুক্ত। মহিষের মাংস গরুর তুলনায় কিছুটা শক্ত, তবে বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। উভয় মাংসের স্বাদ প্রায় একই রকম হলেও মহিষের মাংসে তুলনামূলক অনেক বেশি প্রোটিন থাকে। মহিষের মাংসে কোলেস্টেরলের পরিমাণ মুরগির চেয়েও কম। গরুর মাংসে চর্বির পরিমাণ ১৫-২০ শতাংশ হলেও মহিষের মাংসে মাত্র ২ শতাংশ। অপরদিকে, মহিষের দুধে কোলেস্টেরল কম, ক্যালরি বেশি, শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় চর্বি জাতীয় উপাদানও গরুর দুধের তুলনায় মহিষে শতভাগ বেশি। কম কোলেস্টেরল, অধিক প্রোটিন, অধিক গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও ভিটামিনের উপস্থিতি থাকায় মহিষের দুধ, গরুর দুধের তুলনায় বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। -রাজিব মজুমদার, মীরসরাই, চট্টগ্রাম থেকে
×