ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যত্ন কার্যক্রম ॥ ছয় লাখ মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা

প্রকাশিত: ০৭:৩৪, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

 যত্ন কার্যক্রম ॥ ছয় লাখ মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা

যত্ন কার্যক্রম লালমনিরহাট জেলাসহ রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের হতদরিদ্র ৬ লাখ মা ও শিশুর পরিবারগুলোতে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। এই প্রকল্প মা ও শিশুর স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করেছে। হতদরিদ্র পরিবারের অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের আর্থিক সচ্ছলতা এনে দিয়েছে। এই দুই বিভাগের ৪৪৩টি ইউনিয়নের ঘরে ঘরে তাই বইছে আনন্দের বন্যা। যত্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ৫ বছর বয়সের শিশুদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হয়েছে। ফলে প্রসবজনিত কারণে মা ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস পেয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন বেড়েছে। গর্ভবতী মা ও শিশুর পরিচর্যায় পরিবারের ওপর আর্থিক নির্ভরশীলতা অনেকাংশে কমে গেছে। বেড়েছে মা ও শিশু স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা। গর্ভবতী মা ও শিশুদের নিয়ে গ্রাম্য কুসংস্কার হ্রাস পেয়েছে। গর্ভবতী মা গর্ভধারণের পর হতে প্রসবকালী সময় পর্যন্ত নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে ও তত্ত্বাবধানে থাকছে। এরপর শিশু জন্মের পর হতে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকছে। ফলে মা ও শিশু মৃত্যুর হার বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। গর্ভবর্তী মা ও শিশুদের ৫ বছর পর্যন্ত চিকিৎসা ব্যয় ও পুষ্টিকর খাবারের খরচ দিচ্ছে সরকার। গর্ভবর্তী মা ও শিশুদের যত্নে দেয়া হচ্ছে নগদ আর্থিক অনুদান। এই যত্ন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩৭৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এরমধ্যে বিশ্ব ব্যাংক ২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে। বাকি ৩৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা জিওবি তহবিল থেকে ব্যয় হবে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, দেশের হতদরিদ্র পরিবারের অন্তঃসত্ত্বা নারীর স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, শিশুর পুষ্টি এবং মনোদৈহিক বিকাশে মা ও শিশুর কল্যাণে যত্ন নামের একটি প্রকল্প কার্যক্রম ৭টি জেলার ৪৪৩টি ইউনিয়নে সরকার নিয়েছে। প্রকল্পটি রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগ দুটি ৭টি জেলার ৪৪৩টি ইউনিয়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে। এতে সুবিধাভোগী রয়েছে ৬ লাখ মা ও শিশু। গ্রামের হতদরিদ্র এই ৬ লাখ মা ও শিশুর কল্যাণে যত্ন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে রংপুর বিভাগের লালমনিরহাটের ১টি উপজেলার (হাতীবান্ধা উপজেলা) ১২টি ইউনিয়নে, গাইবান্ধা জেলার ৭টি উপজেলার ৮২টি ইউনিয়নে, কুড়িগ্রাম জেলার ৯টি উপজেলার ৭২টি ইউনিয়নে এবং নীলফামারী সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নসহ মোট ১৮টি উপজেলা এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এদিকে ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহের ১৩টি উপজেলার ১৪৬টি ইউনিয়নে, জামালপুরের ৭টি উপজেলার ৬৮টি ইউনিয়নে এবং শেরপুর জেলার ৫টি উপজেলার ৫২টি ইউনিয়নে এই প্রকল্প কার্যক্রম গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হয়েছে। যত্ন প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম জানান, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম ফর দ্য পুয়োরেস্ট (আইএসপিপি) যত্ন নামের এই প্রকল্পটি ২০১৫ সালের এপ্রিল মাস থেকে শুরু হয়েছে। চলতি সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নির্ধারিত সময়ে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। কারণ সঠিক সময়ে প্রকল্পের অধীন গ্রামগুলো হতে গর্ভবর্তী মা ও শিশুর তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি। তাই প্রকল্পের মেয়াদকালীন সময়ে তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়নি। তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৪৪৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টি ইউনিয়নে বিকল্প উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তথ্য সংগ্রহকৃত গ্রামগুলোতে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কার্যক্রম পুরোদমে চালু হয়েছে। রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের ৭টি জেলার ৪৩টি উপজেলায় অতিদরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শূন্য থেকে ৬০ মাস বয়সী শিশুদের পুষ্টি ও মনোদৈহিক বিকাশ সাধন করাই প্রকল্পের কাজ। এই যত্ন প্রকল্পের আওতায় থাকবে অতিদরিদ্র পরিবারের অন্তঃসত্ত্বা নারী। ৫ বছরের কম বয়সী প্রথম ও দ্বিতীয় শিশু। প্রকল্পের অধীনে থাকা গর্ভবতী মা ৪ বার স¦াস্থ্য পরীক্ষার জন্য প্রতিবার ২০০টাকা করে মোট ৮০০ টাকা নগদ সহায়তা পাবেন। গর্ভবতী মায়ের শিশু জন্মের পর দু’বছর পর্যন্ত ওজন ও উচ্চতা পরিমাপের জন্য প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে পাবেন। দু’বছর থেকে ৫ বছর পর্যন্ত প্রতি তিন মাস অন্তর শিশুর ওজন ও উচ্চতা মাপের জন্য ১০০০ টাকা করে দেয়া হবে বলে প্রকল্প কর্মকর্তা জানান। জেলা হাতীবান্ধা উপজেলার যত্ন প্রকল্পের সেপটিনেট প্রোগ্রাম সুপারভাইজার (এসপিএস) মোঃ মশিউর রহমান জানান, জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে যত্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এই প্রকল্পে সুবিধাভোগী মা ও শিশু রয়েছে ১৫ হাজার ১৪৮ জন। যত্ন প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি হয়েছে। প্রকল্পটি চলবে আগামী ২০২২ সাল পর্যন্ত। -জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট থেকে
×