ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মোহাঃ আসাদুজ্জামান

শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৯:১৩, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ

বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকারী শেখ হাসিনাকে আদর্শের কা-ারি হিসেবে আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হলো। তার অনুপস্থিতিতে স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ আশায় বুক বাঁধে, আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে আশার আলো প্রজ্বলিত হয়। নেতাকর্মীদের মাঝে নতুন লড়াই শেখ হাসিনাকে প্রবাস জীবন থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে মাতৃভূমিতে। সামরিক জান্তা জিয়া শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করল। অন্যদিকে প্রস্তুত আওয়ামী লীগসহ আমজনতা। শেখ হাসিনা প্রায় ৬ বছর পর নির্বাসিত জীবন শেষে প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরলেন স্বৈরশাসকের ভিত কাঁপিয়ে ১৭ মে ’৮১। বঙ্গবন্ধুকন্যা ফিরলেন জননেত্রীর বেশে ঝঞ্জা বিক্ষুব্ধ বৈরী আবহাওয়ায় অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী জিয়া সরকারের সব ব্যারিকেড ভেঙ্গে ঢাকা বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষমাণ লাখো কোটি মানুষের মাঝে। শেখ হাসিনা বিমানবন্দরের বাইরে প্রতিক্ষারত মানুষের মাঝে কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে ঘোষণা দিলেন পিতার মতো জীবন দিয়ে হলেও স্বৈরশাসকের হাতে বন্দী গণতন্ত্র উদ্ধার করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করবেন। শোকে কাতর অথচ পিতার মতো আত্মপ্রত্যয়ী ঘোষণায় জাতির মনে আশার আলোর প্রদীপ জ্বলে উঠল এই ভেবে যে, ’৭১-এ রক্তে কেনা বাংলাদেশ ’৭৫-এ পাকিস্তানী ভাবধারায় হারিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশে ফিরেছে। দেশরতœ শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তের শপথে বাংলার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে অসীম সাহসিকতায় এগিয়ে চলার পথে কমপক্ষে ২০ বার তাকে বিভিন্নভাবে হত্যা চেষ্টা করা হয়, যাতে অন্ততঃপক্ষে ৬৬ জন নেতাকর্মীর জীবন প্রদীপ নিভে গেছে ও কয়েক হাজার নেতাকর্মী আহত এবং পঙ্গুত্ববরণ করেন। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের অশেষ মেহেরবাণী ও মানুষের দোয়া আর ভালবাসায় বাররার মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়ে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে আবারও মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে তিনি বন্ধুর পথে চলতে থাকেন। কখনও পুলিশি বাধা, কখনও ক্যান্টনমেন্টে বন্দী, কখনও গৃহবন্দী, কখনও কারাগারে বন্দী সবকিছু দু’পায়ে দলে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে জনতার রায়ে সামরিক স্বৈরশাসন, সন্ত্রাসী আর জঙ্গীবাদের অভয়ারণ্য, দুর্নীতি, দুঃশাসনে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করে বঙ্গবন্ধুর শোষণমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে দেশ গড়ার কাজে তিনি নিজেকে নিয়োজিত করেন। ভেঙ্গে পড়া অর্থনীতি, কৃষি, কলকারখানা, শিক্ষা, বিদ্যুত ব্যবস্থাপনা, এক কথায় দেশ পুনর্গঠনের কাজে হাত দেন তিনি। দেশরতœ শেখ হাসিনার সততা, সাহসিকতাপূর্ণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে প্রশংসা পেল, বাংলার মানুষ ক্ষুধা-দারিদ্র্যের পথ পাড়ি দিয়ে মোটা ভাত, মোটা কাপড়ে স্বস্তির নিশ্বাস নিয়ে শান্তি ও সাম্যের বাংলাদেশে এগিয়ে চলছিল। ২০০১-এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে কারচুপির মাধ্যমে জামায়াত-বিএনপি জোটকে বিজয়ী করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করা হয়। ভোটের যোগফলে আওয়ামী লীগ বেশি পেয়ে পরাজিত আর প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী কম ভোট পেয়েও রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসে। ’৭১ আর ’৭৫-এর ঘাতকদের সর্দার খালেদা-নিজামীদের সরকার দুর্নীতির নটরাজ তারেকের হাওয়া ভবন এই দুই সরকার দেশরতœ শেখ হাসিনার উন্নয়ন, অগ্রগতি, শান্তির বাংলাদেশে লুটপাট আর সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে ধর্ষণ, হত্যা, তাদের বাড়ি লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, আওয়ামী লীগের ১৯ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা, সারের দাবি করার অপরাধে ২০ জন কৃষককে হত্যা, শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনার কথা বলার অপরাধে শ্রমিক হত্যা, বিদ্যুতের দাবি করার অপরাধে কানসাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মানুষকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা, বাংলাভাই নামে জঙ্গী সৃষ্টি করে দেশব্যাপী এক সঙ্গে সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ, আদালতে বোমা হামলা, বিদেশী রাষ্ট্রদূত হত্যার চেষ্টা, রাষ্ট্রীয় সুবিধা নিয়ে ১০ ট্রাক অবৈধ অস্ত্র আমদানি, দুর্নীতিতে খালেদা-নিজামীদের সরকার পরপর ৫ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান, ’৭১ আর ’৭৫-এর ঘাতকদের লালনকারী লুটপাট আর সন্ত্রাসীর রানী খালেদা জিয়ার পথের কাঁটা দেশরতœ শেখ হাসিনা ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে রাষ্ট্রীয় আনুকূলে গ্রেনেড হামলা থেকে আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেলেও নারী নেত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী হত্যার শিকার হন, আহত হন কয়েক হাজার নেতাকর্মী, চিরদিনের মতো পঙ্গুত্ববরণ করেন শতাধিক নেতাকর্মী। প্রিয় মাতৃভূমি যেন লুটপাট সন্ত্রাস জঙ্গীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়, বিদেশীদের কাছে বাংলাদেশ জঙ্গী ও সন্ত্রাসী রাষ্ট্র নামে পরিচিতি পায়, বিদেশীরা দেশকে সন্ত্রাসীর কালো তালিকাভুক্ত করে এমন এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া তার তল্পিবাহক তত্ত্বাবধায়ক সরকার, জি হুজুরমার্কা নির্বাচন কমিশন দিয়ে আবার ক্ষমতায় আসার অপচেষ্টাকে প্রতিহত করার ডাক দিলেন শেখ হাসিনা। আন্দোলনে টলমল খালেদা-নিজামীরা রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিন আহম্মদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করে জনতার রোষানল থেকে নিজেদের রক্ষার চেষ্টা করেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিনকে বলেন, আপনার অধীনে কোন নির্বাচন মানুষ মেনে নেবে না। এবার খালেদা-ইয়াজ উদ্দিনের ষড়যন্ত্রে সেনাপ্রধান মঈন উ আহমেদের সমর্থনে ফখরুদ্দিন আহমেদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করে অলিখিত সামরিক শাসন জারি করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ও পরিচ্ছন্ন নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেন, সেইসঙ্গে রাজনৈতিক কর্মকা-ও নিষিদ্ধ করেন। কিন্তু জরুরী অবস্থা ঘোষণার কিছু দিনের মধ্যেই সেই সময়ের সরকার দুর্নীতির মহারানী খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের পূর্বে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নেত্রী শেখ হাসিনাকে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেফতার করল, তারপর গ্রেফতার করল খালেদা জিয়াকে। তাদের এই কর্মকা-ে মানুষের মনে প্রশ্ন দেখা দিল। জনতার দাবির মুখে শেখ হাসিনা প্রায় ১ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পান। প্রায় একই সময়ে খালেদা জিয়াও মুক্তি পান। শেখ হাসিনা মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনকে সাফ জানিয়ে দেন রাজনীতির অবাধ সুযোগ দিতে হবে, সেইসঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে এবং সংসদ নির্বাচনের আগে অন্য কোন নির্বাচন হবে না। অতঃপর বাংলাদেশের মানুষের কাছে তাদের বহুল কাক্সিক্ষত জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে মহাজোট সরকার গঠন করে জনগণের প্রত্যাশিত উন্নয়ন আর মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথে অগ্রসর হন। ২০০৮ থেকে ২০২০ টানা তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রনায়ক দেশরতœ শেখ হাসিনার সরকার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, নিরক্ষরতামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় অবিরাম গতিতে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে এখন রোল মডেল। মুজিব শতবর্ষের শুরুতে মাথা উঁচু করে বলা যেতে পারে জীবিত মুজিবের চেয়ে আদর্শিক মুজিব অনেক বেশি শক্তিশালী। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তের পথে এগিয়ে চলেছেন। স্বৈরশাসকদের হৃৎপি- কাঁপানো নাম বঙ্গবন্ধু নিষিদ্ধ ছিলেন, কিন্তু বিবিসি’র জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই স্বৈরশাসকদের কারণে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ২১ বছর রেডিও-টেলিভিশনে সম্প্রচার বন্ধ করে তারা ক্ষান্ত হয়নি, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচীতে এবং জাতীয় দিবসে এই ভাষণ বাজালে গ্রেফতার, হয়রানি ও নির্মম অত্যাচার করা হয়েছে। এই ঐতিহাসিক ভাষণ আজ বিশ্ব সভ্যতার অংশ। মুজিববিহীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করে পাকিস্তানী ভাবধারার ধারক-বাহক আস্ফালনকারীদের বিষদাঁত ভেঙ্গে দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনা ’৭১ ও ’৭৫-এর খুনীদের বিচারের কাঠগাড়ায় দাঁড় করিয়ে জাতির সামনে বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে তাদের কলঙ্কিত ইতিহাস উন্মোচন করে শাস্তি প্রদান করে, জাতিকে কলঙ্কের অভিশাপ থেকে মুক্ত করেন। বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লালিত স্বপ্ন কৃষক-শ্রমিক-মেহনতী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, বাংলাদেশকে দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্ত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবে বাংলার জনপদ। গ্রাম আর শহরের মধ্যে থাকবে না কোন পার্থক্য। বৈষম্যহীন ও শোষণমুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তবে রূপ লাভ করেছে। আন্তর্জাতিক নেতার মর্যাদায় অভিষিক্ত দেশরতœ শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। লাল-সবুজের পতাকা আজ মহাসড়ক থেকে মহাকাশে বিস্তার লাভ করেছে। উন্নয়নের দশদিগন্তে আজ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রযাত্রা। ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকীতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল। সেইসঙ্গে বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নয়নের পাশাপাশি শেখ হাসিনার ঝুলিতে জমা হয়েছে প্রায় ৪১টি আন্তর্জাতিক সম্মাননা ও পুরস্কার। এই অর্জিত সম্মান শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে পাকিস্তানী ভাবধারার অত্যাচারী আর স্বৈরাচারীদের সমস্ত ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে ’৭৫-এর হারিয়ে যাওয়া স্বাধীনতার মূল্যবোধ আবার ফিরিয়ে এনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে পরিচালিত করছেন। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায় ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশরতœ শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ ফিরে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়। লেখক : রাজনীতিক
×