ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চেয়ারম্যান-সচিব দ্বন্দ্বে বেতন পাচ্ছেন না কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে অস্থিরতা

প্রকাশিত: ১১:৩৪, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে অস্থিরতা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ চেয়ারম্যান ও সচিবের দ্বন্দ্বে বেতন ভাতা পাচ্ছেন না রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ নিয়ে বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত প্রতি মাসের ২৬ থেকে ২৭ তারিখেই বেতন-ভাতা পেয়ে আসছেন রাজশাহীর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কিন্তু গত জানুয়ারি মাস পেরিয়ে ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখ পর্যন্তও বেতন-ভাতা মেলেনি এ শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। সেজন্য অনেকে অর্থকষ্টে দিনাতিপাত করছেন। এই অবস্থার জন্য ছয়জনের পদোন্নতি নিয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সচিবের মধ্যে তৈরি হওয়া দূরত্বকে দায়ী করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখনও গত জানুয়ারি মাসের বেতন-ভাতা পাননি বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অবসরোত্তর ছুটিভোগী (পিআরএল), অবসরভোগী, পারিবারিক পেনশনভোগী, চিকিৎসাভাতাভোগী, কল্যাণ ভাতাভোগীরাও পাননি তাদের প্রাপ্য। সংসার চালানোসহ যাবতীয় খরচের জন্য বেতন-ভাতার অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তিরা এক্ষেত্রে পড়েছেন চরম বেকায়দায়। বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যানসহ শিক্ষা বোর্ডে স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন ১৫২ জন। মাস্টাররোল (চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত) কর্মী রয়েছেন ৬৫ জন। এছাড়া পিআরএল ও অবসরভাতাভোগী রয়েছেন আরও দুই শতাধিক। এতদিন ধরে প্রতিমাসের ২৬-২৭ তারিখের মধ্যে বেতন-ভাতা পেয়ে এলেও জানুয়ারি শেষ হয়ে ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখ পর্যন্তও তা মেলেনি। চলতি মাসেও জানুয়ারির বেতন পাবেন কিনা এ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। সূত্র জানিয়েছে, গত ২৬ জানুয়ারি সংস্থাপন শাখা থেকে বেতন-ভাতার ফাইল ওঠে। ওই দিন বোর্ডের উপসচিব খোরশেদ আলম ও ওয়ালিদ হোসেন বেতন দেয়ার সুপারিশ করেন। পরদিন ২৭ জানুয়ারি সচিব ড. মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন পদোন্নতিপ্রাপ্ত ছয়জনকে পূর্বের পদ-পদবি অনুসারে ডিসেম্বরের তালিকায় বেতন দেয়ার পক্ষে মত দেন। এদিকে সেদিনই বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহা. মোকবুল হোসেন বেতন-ভাতা দেয়ার আদেশ দেন। একইসঙ্গে ফিকসেশন ও পদন্নোতিপ্রাপ্তদের পরবর্তী বোর্ড সভায় অন্তর্ভুক্তির নির্দেশ দেন। চেয়ারম্যানের সেই বক্তব্যের পক্ষে মত দিয়ে স্বাক্ষর করেও পরে আবার কেটে দেন সচিব। তাই ২৯ জানুয়ারি আবারও ফাইল যায় চেয়ারম্যানের দফতরে। ওইদিন চেয়ারম্যান আবারও বেতন-ভাতা দেয়ার নির্দেশ দেন। এরপর ফাইল যায় সচিবের দফতরে। তাতে আগের মতোই মত দেন সচিব। এই গড়িমসিতে চলতি সপ্তাহেও বেতন হয়নি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। এদিকে বেতন না হওয়ায় কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষা বোর্ড কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি হুমায়ুন কবীর লালু। তিনি বলেন, বর্তমান কর্মচারীরা বেতন না পাওয়ায় কষ্টে আছেন। পিআরএল ও অবসরভোগী, পারিবারিক পেনশনভোগী, চিকিৎসা ভাতাভোগীরাও রয়েছেন সঙ্কটে। জানতে চাইলে বোর্ডের সচিব ড. মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, ছয়জনের সাম্প্রতিক পদোন্নতির বিষয়ে তিনি অবগত নন। পদোন্নতির অফিস আদেশে তার স্বাক্ষর নেই। ওই পদোন্নতি নিয়ে জটিলতা থাকায় এবং সচিবের কাছে এ সংক্রান্ত নথি না থাকায় তিনি সবাইকে আগের পদ-পদবি অনুসারে বেতন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোকবুল হোসেন বলেন, কোনো বোর্ড সভার আগেই চেয়ারম্যান নিজ ক্ষমতা বলে যে কোন পদক্ষেপ নিতে পারেন। তবে পরবর্তী বোর্ড সভায় সেগুলো অনুমোদন করিয়ে নিতে হয়। তাই ছয়জনের পদোন্নতির আদেশ অবৈধ নয়। কর্মীদের বেতন-ভাতা আটকে থাকার বিষয়টি জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, কিছু জটিলতা ছিল। সেটি এখন আর নেই। দ্রুত কর্মীরা বেতন পাবেন।
×