ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রুমাতে ২০ একর পপি খেত ধ্বংস

বান্দরবানে বাড়ছে নিষিদ্ধ পপির আবাদ

প্রকাশিত: ১১:৩১, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বান্দরবানে বাড়ছে নিষিদ্ধ পপির আবাদ

এস বাসু দাশ, বান্দরবান ॥ বান্দরবানের দুর্গম এলাকাগুলোতে আগের যে কোন বছরের তুলনায় এ বছর নিষিদ্ধ পপি চাষ বাড়ছে। চলতি বছরে জেলার রুমা উপজেলার দুর্গম এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ২০ একর পপি খেত ধ্বংস করা হলেও জেলার থানচি ও আলীকদম উপজেলায় পপি খেত ধ্বংস করতে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। সম্প্রতি রুমা জোন (২৭ ইবি) এর ক্যাপ্টেন মোঃ আশিকুর রহমান এর নেতৃত্বে একটি স্পেশাল যৌথ বাহিনীর টহল দল রুমার সাইকট পাড়া ও খুলেন খুমি পাড়ার পাশে রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ১০ একর জায়গার ওপর চাষ করা ১২টি পপি খেত ধ্বংস করা হয়। এ সময় একটি জুম ঘরে থাকা বিপুল পরিমাণ পপির বীজ উদ্ধার ও ধ্বংস করা হয়। যৌথবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে পপি চাষীরা পালিয়ে যায়। রুমা জোন কমান্ডার লেফটেনেন্ট কর্নেল মোহাম্মদ গোলাম আকবর পিএসসি, বলেন, পপি চাষ হচ্ছে একটি বিষাক্ত নেশা জাতীয় গাছ, যা থেকে আফিম ও হিরোইন তৈরি করা হয়। তাই রুমার যেখানেই চাষ করা হোক না কেন ভবিষ্যতে এর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। আরও জানা গেছে, গত ২৪ জানুয়ারি জেলার রুমা উপজেলার কেওক্রাডং পাহাড় এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে ৪টি পপি খেত ধ্বংস ও প্রায় ৬০ কেজি পপির রস উদ্ধার করে র‌্যাব-৭। গত ২৮ জানুয়ারি ম্রোক্ষিয়াং ঝিড়ি এলাকায় ৫ একর পপি খেত ধ্বংস করেছে সেনাবাহিনী। এই ঘটনায় পেইন খুমি (৩৫) নামের এক পপি চাষীকে আটক করা হয়। ৩১ জানুয়ারি তংগ্রী পাড়া ও শৈরাতাং পাড়ায় অভিযান চালিয়ে এক একর জমি ওপর করা ৩টি পপি খেত ধ্বংস ও আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়। সর্বশেষ একই উপজেলায় ১০ একর পপি বাগান ধ্বংস করে যৌথ বাহিনী। রুমা উপজেলা চেয়ারম্যান উহ্লাচিং মারমা বলেন, নিষিদ্ধ পপি চাষে নিরুৎসাহিত করতে কয়েকদিনের মধ্যে পাড়া প্রধানদের ডেকে মিটিং করে জনসচেতনতা বাড়ানো হবে। পপি ফুলের গাছ থেকে যেমন ওষুধ তৈরির নানা উপাদান পাওয়া যায়, তেমনি এ গাছের ফল থেকেই তৈরি হয় সর্বনাশা মাদক ‘আফিম ও হেরোইন’। পপি গাছের কাঁচা ফলের খোসা কাটলে যে সাদা রস পাওয়া যায় তা ২৪ ঘণ্টা রোদে শুকালে পাওয়া যায় মরণ নেশা আফিম। স্থানীয়দের সূত্র মতে, রুমা উপজেলার ৩৫৩নং কোলাদি মৌজায় নাইতং পাড়ার ক্যংম্র্র ঝিরিতে বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি স্থানে ১০ শতক, ৫ শতক করে পপি চাষ করা হয়েছে। তবে এসব এলাকায় এখনও অভিযানের কোন খবর পাওয়া যায়নি। জেলার আলীকদম উপজেলার পোয়ামুহুরী ও থানচি উপজেলার তিন্দু ইউনিয়নের মিয়ানমার সীমান্তবর্তী মুরুক্ষ্যং ঝিরি এলাকায় স্থানীয় পাহাড়ীদের সহযোগিতায় নিষিদ্ধ পপি (আফিম) চাষ করছে মিয়ানমারের শসস্ত্র সংগঠন আরকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি) ও আরকান আর্মি (এএ)। পপির রস সংগ্রহ করে তারা মিয়ানমারে পাচার করে। মিয়ানমারের সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামকারী সংগঠনগুলোর অর্থের বড় উৎস এই পপি চাষ। রুমা উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, অভিযানে রুমায় একের পর এক পপি খেত খুঁজে পাওয়ায় খোদ স্থানীয়রা বিস্ময় প্রকাশ করেছে। পাহাড়ের পপি চাষীদের পপি চাষ পরিহার করে আয়বর্ধনমূলক কি কাজে উৎসাহ করানো যায়, তা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপির সঙ্গে কথা বলে উন্নয়নমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শামসুল আলন, আমরা মাসিক মিটিং-এ পপি চাষ না করার জন্য বলি, জনপ্রতিনিধিদেরও নির্দেশনা দেয়া আছে, তারপরও যারা পপি চাষ করছেন তারা অবশ্যই আইনের আওতায় আসবে। প্রসঙ্গত, বান্দরবানের রুমা, থানচি ও আলীকদম উপজেলার বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় সীমান্ত অরক্ষিত থাকার কারণে মিয়ানমারের বিভিন্ন বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী পপি চাষ করে থাকে। আর পপি থেকে মাদক আফিম তৈরি করে বিভিন্ন দেশে পাচার করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
×