করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এখন হিমশিম খাচ্ছে। এই ভাইরাসে এ পর্যন্ত ৪৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ২৪ হাজার ৩শ’রও বেশি লোক আক্রান্ত হয়েছে। তবে এই অসুস্থতা সম্পর্কে কী গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে এবং কিভাবে এটি ছড়াচ্ছে তা এখনও অজানা, যা নিয়ে কর্মকর্তা এবং চিকিৎসকরা সংগ্রাম করছেন। এপি।
বিভিন্ন দেশের সরকারগুলো দ্রুত তাদের নাগরিকের চীন থেকে সরিয়ে নিচ্ছে, একই সঙ্গে চীনে ভ্রমণকারী তাদের দেশে ঢুকতে দিচ্ছে না। চীন ৫ কোটি লোককে উহান ও এর আশপাশে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। এটি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভাইরাস প্রতিরোধী ব্যবস্থা। উহান থেকেই করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে। চীনা শহরগুলোর একটি ক্রমবর্ধমান সংখ্যক মানুষকে এমনকি তাদের এ্যাপার্টমেন্টগুলো ছেড়ে যাওয়াকেও নিরুৎসাহিত করছে। গ্রামগুলো ময়লা এবং ধ্বংস স্তূপের প্রবেশ পয়েন্টগুলো অবরুদ্ধ করেছে এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিসগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে। সংক্রমণের বিস্তার শুরু হওয়ার আগে কয়েক সপ্তাহ ধরে নাগরিকদের অন্ধকারে রেখেছিল সরকার- বেজিংয়ের কর্তৃত্ববাদী নেতৃত্ব যখন এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছে, তখন অন্য দেশগুলো সম্ভাব্য মহামারী বন্ধ করতে কার্যকর কোয়ারেন্টিন স্থাপনের চেষ্টা করছে। এই প্রচেষ্টা সর্বদা মসৃণ নয়। এর মধ্যে রয়েছে কোয়ারেন্টিন সেন্টারগুলোর নিকটে সহিংস বিক্ষোভ, প্রত্যন্ত দ্বীপগুলো সমালোচনা, ক্রুজ জাহাজে কয়েক হাজার লোকের বন্দীদশা এবং কিছু নাগরিককে প্রথম দিকে পৃথক পৃথকীকরণের অনুমতি দেয়া।
দক্ষিণ কোরিয়া ॥ দক্ষিণ কোরিয়া করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ১৮টি ঘটনা নিশ্চিত করেছে। দেশটি ২১ জানুয়ারির পর হুবেই প্রদেশ ভ্রমণ করা সব বিদেশী নাগরিকদের সে দেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। এই প্রদেশের রাজধানীই হচ্ছে উহান। সরকার জানিয়েছে যদি প্রাদুর্ভাবের আরও অবনতি ঘটে তারা দক্ষিণ কোরীয় পর্যটকদের চীন ভ্রমণ বন্ধ করার বিষয়টি বিবেচনা করবে। মুভি থিয়েটার, রেস্তরাঁ ও শপিংমল বন্ধ রয়েছে। পিতা-মাতারা স্কুলগামী শিশুদের বাড়িতে রেখেছেন। দোকানগুলোই ফেসমাস্ক ও স্যানিটাইজার শেষ হয়ে গেছে।
অস্ট্রেলিয়া ॥ উহান থেকে ফেরা প্রায় ৩০০ নাগরিককে অতীতে অভিবাসন আটক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত একটি দ্বীপে কোয়ারেন্টিনের সিদ্ধান্তের জন্য অস্ট্রেলীয় সরকার সমালোচিত হচ্ছে। সমালোচকরা ক্রিসমাস দ্বীপের চেয়ে অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ডে কোয়ারেন্টিন সেন্টার বানানোটাকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। দ্বীপটির কিছু অধিবাসী বলছেন, সরকার তাদের বাড়িকে কুষ্ঠরোগের ঔপনিবেশে পরিণত করছে। সরকার বলছে, বেশি সংখ্যক নাগরিককে সংক্রমণ থেকে বাঁচাতেই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
দেশটিতে ১৩ জন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা চলছে। গত সপ্তায় অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়া চীনের মহিলা ফুটবল দলকে ব্রিসবেনের একটি হোটেলে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে।
জাপান ॥ উহান থেকে ফেরা দুজনকে একটি হোটেলে কোয়ারেন্টিন করে রাখার পর তাদের তাড়াতাড়ি চলে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার ঘটনায় কর্মকর্তারা সমালোচনার মুখে পড়ায় জাপান কোয়ারেন্টিনের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দেশটিতে ভাইরাস সংক্রান্ত ৩৩টি ঘটনা ধরা পড়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, টোকিওর নিকটে একটি হোটেল এবং তিনটি সরকারী সুযোগ-সুবিধা কেন্দ্রে ৫১৮ জনকে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টিনের জন্য রাখা হয়েছে। যাদের লক্ষণ রয়েছে তাদের হাসপাতালের বিচ্ছিন্ন কক্ষে চিকিৎসা করা হয়েছে। সরকার মঙ্গলবার একটি ক্রুজ জাহাজে কমপক্ষে ১০টি ঘটনা নিশ্চিত করেছে এবং জাহাজটিতে ক্রু এবং যাত্রীসহ ৩,৭০০ জনকেই কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উত্তর কোরিয়া ॥ এই ভাইরাসে এখনও কারও আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে দেশটি ভাইরাস প্রতিরোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। তারা পর্যটক প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে, ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। সীমান্ত, পোতাশ্রয় ও বিমানবন্দরে পরীক্ষা কার্যক্রম শক্তিশালী করেছে। ভাইরাস প্রতিরোধ কার্যক্রমের জন্য দেশজুড়ে ৩০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী প্রস্তুত রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ॥ ক্যালিফোর্নিয়ার রিভারসাইড কাউন্টিতে মার্চ এয়ার রিজার্ভ বেসে উহান থেকে ফেরা ১৯৫ জনকে রাখা হয়েছে । তারা এখন ফেডারেল কোয়ারেন্টিনের আওতায় রয়েছেন। এখানে অবস্থানরত কারও মধ্যে অসুস্থতার লক্ষণ দেখা যায়নি। আবহাওয়া বা অন্যান্য কারণে উহান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলাচলকারী অন্য ফ্লাইটগুলো বেসে সরিয়ে নেয়া হলে যাত্রীদের স্ক্রীনিংয়ে সহায়তা করার জন্য তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে।
লাতিন আমেরিকা ॥ মেক্সিকো বলছে, চীন থেকে ফেরা তাদের ১০ নাগরিক ফ্রান্সে পৌঁছেছে। তারা ভাল আছেন। সরকার নাগরিকদের উহান ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয়নি, তবে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে। ভেনিজুয়েলা তাদের দেশে বিমানবন্দরগুলো নামা যাত্রীদের ওপর নজর রাখছে। আর্জেন্টিনায় চীন থেকে আসা ভ্রমণকারীদের ওপর কোন বিধিনিষেধ দেয়নি। তবে সম্ভাব্য সঙ্কট মোকাবেলায় দুটি হাসপাতাল প্রস্তুত রেখেছে।
দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ॥ ১০৭ জন মালয়েশীয় ও তাদের অমালয়েশীয় স্ত্রী-সন্তানরা মঙ্গলবার কুয়ালালামপুরে পৌঁছেছে। তাদের দুই সপ্তাহের জন্য কোয়ারেন্টিন করা হবে। ইন্দোনেশিয়া উহান থেকে ফেরা ২৪০ জনকে কোয়ারেন্টিনের জন্য নাতুনা দ্বীপে পাঠিয়েছে।
ইউরোপ ॥ ব্রিটেন চীন থেকে ফেরা বেশকিছু লোককে উত্তরপশ্চিম ইংল্যান্ডের এ্যারো পার্কে কোয়ারেন্টিন করেছে। ফ্রান্স দুটি ফ্লাইটে চীন থেকে ৪০০ জনকে ফিরিয়ে নিয়েছে। দক্ষিণ ফ্রান্সের দুটি জায়গায় তাদের কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। ইতালি ও স্পেন বেশ কিছু চীন ফেরত লোককে সামরিক ঘাঁটিতে কোয়ারেন্টিন করেছে।
আফ্রিকা ॥ কোয়ারেন্টিন প্রক্রিয়া আফ্রিকায় উদ্বেগজনক একটি বিষয়। ৫৪ দেশের মহাদেশটিতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নাটকীয়ভাবে ভিন্ন ভিন্ন। মাহাদেশটিতে চীন ফেরত অনেককে স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিনে থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অনেক দেশের পর্যাপ্ত চিকিৎসা সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি নেই। সুতরাং এ মাহাদেশ কিছুটা নাজুক অবস্থায় রয়েছে।
করোনা ভাইরাসে মৃত ৪৯২, আক্রান্ত ২৪ হাজার ৩শ’
কোয়ারেন্টাইনে বন্দী বিশ্ব
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: