ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফিরে দাও সে অরণ্য

প্রকাশিত: ১০:২৯, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ফিরে দাও সে অরণ্য

প্রকৃতি দান করে খাদ্য, মানুষ সৃষ্টি করে সমস্যা। বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, শব্দ দূষণ প্রভৃতি তো মানুষই সৃষ্টি করে। প্রকৃতি মানুষকে যোগায় বাঁচার উপাদান, মানুষ তা করে ধ্বংস। খাল-বিল, নদী, নালা ভরাট করে, বন-জঙ্গল উজাড় করে, ঔষধি বৃক্ষ ধ্বংস করে, অপরিকল্পিত কালভার্ট, দুর্গন্ধময় পচা ড্রেন, নর্দমা তৈরি করে মশা, মাছি উৎপাদনের কারখানা তৈরি করে, বায়ু-পানি শব্দ দূষণ করে, ভাইরাস সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে নিজের সর্বনাশ নিজেই ডেকে আনে। তাই তো ঋষি, দার্শনিক বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লেখেন- ‘যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো, তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভাল? কলেরা-ডায়রিয়া, যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, নিপা ভাইরাস, করোনা ভাইরাস, জলাতঙ্ক, কুষ্ঠ, ক্যান্সার প্রভৃতি রোগ বায়ু-পানি দূষণ মলমূত্র ত্যাগের অপরিকল্পিত ব্যবস্থা, পরিকল্পনাহীন চলার অনুপযোগী অতিরিক্ত যানবাহন চালনা, পশুপাখির কামড়ে, পশুপাখির পরিত্যক্ত ফল মূল, খেজুর তালের রস গ্রহণ, সংক্রমিত রোগীর নিশ্বাস ত্যাগের মাধ্যমে নানা প্রকার ব্যাধিতে মানুষ পশুপাখি ও গাছপালা আক্রান্ত হয় ও হচ্ছে। রোগ সংক্রমণ থেকে সতর্ক থাকতে হবে সবাইকে, কর্তৃৃপক্ষেরও দায়িত্ব রয়েছে বিশাল। একটি বাস্তব ঘটনার উদাহরণ দেই, ফুলবাড়ী উপজেলা হাসপাতালের এক কোণে এক কক্ষে কুষ্ঠ ব্যাধির চিকিৎসা করা হতো। উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদাধিকার বলে তিনি উপজেলা পরিষদের সদস্য। তিনি পরিষদে অভিযোগ করেন, এই কুষ্ঠ নিরাময় কেন্দ্রটি থেকে হাসপাতালে আগত রোগীদের কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। অতএব কেন্দ্রটি সরাতে হবে।’ ঢাকার একটি জাতীয় দৈনিক ও জেলার একটি দৈনিক পত্রিকায় নিজস্ব সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করতাম। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে কুষ্ঠ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করলাম। তিনি আমাকে পাত্তাই দিচ্ছেন না, পরিচয় পাওয়া সত্ত্বেও। তাঁকে এক রকম জোর করেই বললাম, আপনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো, আপনারা এই কুষ্ঠ নিরাময় কেন্দ্র থেকে কুষ্ঠ রোগ ছড়াচ্ছেন। হাসপাতালে আগত রোগীদের কুষ্ঠ ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এবার ইতালিয়ান ডাক্তার সাহেব গেলেন ক্ষেপে। তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। তাঁর মুখ থেকে খই ফুটতে শুরু করল। ভদ্রলোক স্পষ্ট বাংলায় দ্রুতগতিতে আমাকে বোঝাবার জন্য বলতে শুরু করলেন ‘দেখেন কুষ্ঠ দু’রকম, এক প্রকার কুষ্ঠ সংক্রামক এবং আর এক প্রকার কুষ্ঠ অসংক্রামক। দুই-ই চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো হয়। কিন্তু সংক্রামক কুষ্ঠে আক্রান্ত রোগী যদি সমাজের ভয়ে, সৃষ্টি কর্তার অভিশাপের ফল মনে করে গোপন করে তা হলে ফল কি হবে? মনে করুন একজন ইমাম সাহেব এই রোগে আক্রান্ত। তাঁর কব্জি পর্যন্ত কাপড় দিয়ে ঢাকা। মাথায় পাগড়ি, তাঁর পেছনে শত শত লোক নামাজ পড়ছে। তিনি নিশ্বাসের মাধ্যমে হাজার হাজার, লাখ লাখ কুষ্ঠের জীবাণু ছেড়ে দিচ্ছেন বাতাসে। এই রকম ব্যক্তিদের চিকিৎসার মাধ্যমে আমরা নিরাময় করছি। এসব সংক্রমিত ব্যক্তিরা ও হাসপাতালের রোগীরা একই গেট দিয়ে তো হাসপাতালে কুষ্ঠ নিরাময় কেন্দ্রে আসছে। তা হলে এতে করে হাসপাতালে আগত রোগীরা নতুন করে আর এক মরণ ব্যাধি কুষ্ঠতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকছে, আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। এবার ডাক্তার সাহেব অসহায় একটি হাসি দিলেন। কুষ্ঠ কেন্দ্রটি উঠে গেছে। ব্র্যাক আবার চালু করেছিল যক্ষ্মা নিরাময় কেন্দ্র। বাংলাদেশকে বিভিন্ন রোগ-বালাই থেকে অনেকটা রক্ষা করতে পারেন আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুজিব শতবর্ষে তাঁর যে পরিকল্পনা সারাদেশে এক কোটি বৃক্ষরোপণ করার তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে। ১ কোটি বৃক্ষের মধ্যে ৪০ ভাগ ফলজ, ৪০ ভাগ ঔষধি ও ২০ ভাগ বনজ গাছপালা লাগাতে হবে। এই ঔষধি ৪০ ভাগ গাছপালার মধ্যে পরিকল্পনা করে লাগাতে হবে কতভাগ জাত নিম, বেল, তেঁতুল, তুলসী প্রভৃতি। জাত নিমপাতা ব্যবহারের ফলে, খাওয়ার ফলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে পারে। কারণ, জাত নিমপাতা ১২ বছর খেলে বিষধর সাপ কামড়ালেও বিষ লাগবে না। হোমিও ওষুধ লেডাম পল মশা কামড়ানোর পর সেবন করলে ডেঙ্গু থেকে রক্ষা করতে পারে। ভারতীয় হোমিও ডাক্তারগণ দাবি করেছেন যে, আর্সেনিক এ্যালবাম ৩০ শক্তি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করতে সক্ষম। সকল প্রকার রোগ সংক্রামক থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অবশ্যই স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে। প্রকৃতির বিরুদ্ধে গেলে প্রকৃতি শাস্তি দেবে। ফুলবাড়ী, দিনাজপুর থেকে
×