ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনৈতিক খাতে শৃঙ্খলা আনতে হবে : অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৭:৩৯, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

অর্থনৈতিক খাতে শৃঙ্খলা আনতে হবে : অর্থমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥ বিরোধী দলের প্রবল বিরোধীতার মুখে রবিবার জাতীয় সংসদে দেশের ৬১টি স্বায়ত্বশাসিত, সরকারি কর্তৃপক্ষ ও স্ব-শাসিত সংস্থার ব্যাংকে থাকা বিপুল পরিমাণ উদ্ধৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমার বিধান রেখে আনীত একটি বিল পাস হয়েছে। বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা আনীত বিলটিকে ’কালো আইন’ আখ্যা দিয়ে বিলটি প্রত্যাহারের জন্য অর্থমন্ত্রীর প্রতি দাবী জানান। পরে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় মেটাতেই অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর প্রতিবাদে বিএনপি দলীয় তিন সংসদ সদস্য সংসদ থেকে ওয়াক আউট করে। নিকট অতীতে কোন বিফ পাসে এরকম বিরোধীতার নজীর দেখা যায়নি। বুধবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে ‘স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন ফাইন্যান্সিয়াল কর্পোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থা সমুহের উদ্ধৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান আইন-২০২০’ শীর্ষক বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপনকালে মন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিপুল পরিমান অর্থের সংস্থান প্রয়োজন। যা বর্তমান সংগৃহিত রাজস্ব দ্বারা মেটানো দূরূহ হওয়ায় সংস্থা সমূহের তহবিলে রক্ষিত উদ্ধৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদানের মাধ্যমে বর্তমান সরকার কর্তৃক গৃহীত উন্নত দেশ গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই বিলটি আনা হয়েছে। ওই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধীতা করেন জাতীয় পার্টির মো. ফখরুল ইমাম, কাজী ফিরোজ রশীদ, মো. মুজিবুল হক ও ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এবং বিএনপি’র মো. হারুনুর রশীদ ও ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তারা বিলটি প্রত্যাহার এবং জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব করেন। তাঁরা বলেন, ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলো খালি হয়েছে। পূঁজিবাজারে ধস নেমেছে। আর্থিক খাতে অবাধ লুটপাট চলছে। ব্যাংক ডাকাতি ও বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে গেলেও সরকারের কোন পদক্ষেপ নেই। তাই বিলটি পাস হলে ব্যাংকখাতের মতো স্বায়ত্তশাসিতসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোও দেউলিয়া হয়ে যাবে। কারণ তালিকাভূক্ত ৬১টি প্রতিষ্ঠান নয়, নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান যুক্ত করার বিধান রাখা হয়েছে। বিরোধী দলীয় সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে অর্থমন্ত্রী আর্থিক খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে আবারো বিলটি পাসের জন্য সংসদের প্রতি আহ্বান জানান। এরপর স্পীকার জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোসহ অন্যান্য বিরোধী দলের প্রস্তাবগুলো ভোটে দেন। কণ্ঠভোটে প্রস্তাবগুলো নাকচ হয়ে যায়। এরপর স্পীকার বিরোধী দলীয় সদস্যদের দফা ওয়ারী সংশোধনী প্রস্তাবগুলো উত্থাপনের সুযোগ দিলেও তারা বিলটিকে কালো আইন আখ্যা দিয়ে সংশোধনী প্রস্তাবগুলো প্রত্যাহার করে নেন। পরে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর প্রতিবাদে বিএনপি সংসদ থেকে ওয়াকআউট করলেও প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ওয়াক আউট করেননি। বিলের বিরোধীতার জবাবে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, একমাত্র রপ্তানি বাণিজ্য নেগেটিভ, এটা ছাড়া একটা খাতও নেই অর্থনৈতিকভাবে আমরা পিছিয়ে আছি। এখানে ফিনান্সিয়াল ডিসিপ্লিন আনতে হবে। ভ্যাট আইন নিয়ে আশাবাদি ছিলাম, কিন্তু বাস্তবায়ন করতে পারিনি। আংশিক ভ্যাট মেশিন এসেছে। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পুরোমাত্রায় ভ্যাট আদায় হবে, নেগেটিভ থাকবে না। কারণ আমাদের সৎ ও শক্ত প্রধানমন্ত্রী আছেন। আর আমাদের উদ্দেশ্যে এক। পিছিয়ে পড়ে থাকা মানুষকে মুল ¯্রােতে নিয়ে আসা। সরকারের কোষাগারে অর্থ জমা না পড়লে শৃঙ্খলা আসবে না। বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে তবে যেভাবে সুনির্দিষ্ট করে সংখ্যা বলা হচ্ছে সেটা মোটেও ঠিক নয়। তবে পুঁজিবাজার যে জায়গায় থাকা উচিত সেখানে নেই। কিন্তু যারা অন্যায় করছে তাদেরকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করবো। পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, সংস্থার বাৎসরিক পরিচালনা ব্যয়, নিজস্ব অর্থায়নে অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাৎসরিক ব্যয় নির্বাহের অর্থ, আপদকালীন ব্যয়ের জন্য বাৎসরিক পরিচালনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থের অতিরিক্ত উদ্বৃত্ত্ব অর্থ প্রতি অর্থবছর শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। যা উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা যাবে। বিলের তফসিলে ৬১টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা উল্লেখ করে সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এই তফসিল সংশোধনেরও সুযোগ রাখা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হল্-ো জাতীয় কারিকুলাম এবং টেক্সবুক বোর্ড, মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড, কারিগরি শিক্ষাবোর্ড, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, ঢাকা, কুমিল্লা, যশোর, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও দিনাজপুর, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুর, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (বার্ড), পল্লী উন্নয়ন একাডেমী বগুড়া, কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট, বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, ধান গবেষণা ইনষ্টিটিউট, মান নিয়ন্ত্রণ ও পরীক্ষা ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই), ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস), কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বার্ক), জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউট, পরমাণু শক্তি কমিশন, কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ), রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ), সেরিকালচার বোর্ড, রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো, সেতু কর্তৃপক্ষ, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ, রাজশাহী), রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা), টেক্সাইল মিলস কর্পোরেশন (বিটিএমসি), চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন ও সহযোগি প্রতিষ্ঠান, কেমিক্যাল ইন্ড্রাস্ট্রিজ করপোরেশন ও সহযোগি প্রতিষ্ঠান, ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন ও সহযোগি প্রতিষ্ঠান, পেট্রেলিয়াম কর্পোরেশন, প্রেট্রোবাংলা, শিপিং কর্পোরেশন, ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ, জুট মিল কর্পোরেশন, সড়ক পরিবহণ কর্পোরেশন (বিটিআরসি) বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন, মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন, চা বোর্ড, পর্যটন কর্পোরেশন, আভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি), আভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), চট্টগ্রাম ওয়াসা, ঢাকা ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, বেসামরিক বিমানপরিবহণ কর্তৃপক্ষ, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণু কমিশন। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্ব-শাসিত প্রতিষ্ঠান সমূহ তাদের নিজস্ব আইন ও বিধি অনুযায়ী আয়-ব্যয় ও বছর সমাপনান্তে তাদের হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ করে। ব্যাংকে রক্ষিত হিসাব সমুহের স্থিতি হতে দেখা যায়, বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে বর্ণিত প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা আছে। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় ও সরকারি অর্থের সূষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে উল্লিখিত সংস্থা সমূহের তহবিলে রক্ষিত উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদানের মাধ্যমে সরকার কর্তৃক গৃহীত উন্নত দেশ গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন ফাইন্যান্সিয়াল কর্পোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থা সমুহের উদ্ধৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান আইন-২০২০ শীর্ষক বিলটি আনা হয়েছে।
×