ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অপরাধী যত শক্তিশালীই হোক না কেন তার বিচার হবেই ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

অপরাধী যত শক্তিশালীই হোক না কেন তার বিচার হবেই ॥ প্রধানমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে এবং প্রভাবমুক্ত থেকে বিচার কার্য পরিচালনা করছে। আইনের শাসন এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা বিচার বিভাগ জনগণের মাঝে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে। আমরা জনগণের মাঝে এই বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছি। অপরাধীর কোন দল নেই, তার পরিচয় কেবলই অপরাধী এবং অপরাধী যত শক্তিশালীই হোক না কেন তার বিচার হবেই। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আজ বুধবার জাতীয় সংসদে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় সংসদ গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকারের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে সরকারি সফরে ইতালিতে অবস্থান করায় তাঁর প্রশ্নোত্তর পর্বটি টেবিলে উত্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী এ প্রশ্নের লিখিত জবাবে আরও জানান, প্রকৃত আসামিরা যাতে সাজা পায় এবং নিরাপরাধ নিজেরা যাতে হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সজাগ রয়েছে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধী চিহ্নিত করে দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আমরা বিচার বিভাগে নানামুখী সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছি। প্রধানমন্ত্রী বিগত ৫ বছরে দেশের বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, সিলেটের চাঞ্চল্যকর শিশু রাজন ও খুলনার শিশু রাকিব হত্যাসহ বেশ কয়েকটি আলোচিত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব হত্যকান্ড শুধু আলোচিত ঘটনায় নয়, এসব হত্যাকাণ্ড মানুষের সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়েরই নামান্তর। কিন্তু আমরা বিচার বিভাগের মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে এসব মামলার বিচার কার্য সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি, ফলে জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। সংসদ নেতা বলেন, আদালতে মামলার বিচার নিষ্পত্তির পাশাপাশি নতুন মামলা দায়েরের হার কমাতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বিচারপ্রার্থী জনগণের ভোগান্তি লাঘবের জন্য একটি আধুনিক বিচার বিভাগ ও বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিচার বিভাগের সার্বিক উন্নয়নে ভবিষ্যতেও আমাদের সরকার কাজ করে যাবে। সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এ কে এম রহমতুল্লাহ’র প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০৩০ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৪তম অর্থনীতি হবে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা নানাবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছি। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিরলসভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়ন ভাবনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়নের ফলে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, রাজনৈতিক স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দরকার। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছাড়া স্বাধীনতা পূর্ণতা লাভ করতে পারে না। তিনি বলেন, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা এশিয়া প্যাসেফিক অঞ্চলে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ ২০১৫ সালেই নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে এবং ২০১৮ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সকল শর্ত পূরণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশে পরিণত করা আমাদের লক্ষ্য। সরকারের গৃহীত ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ক্রমান্বয়ে উন্নতি হচ্ছে। সাম্প্রতিক ওয়াল্ড ইকোনমিক ফোরামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এরই প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার জন্য ১০টি বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, ঢাকা মেট্টোরেল প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ি ও রামপাল কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, পায়রা বন্দর নির্মাণ প্রকল্প, কর্ণফুলি নদীর নিচ দিয়ে টানেল নির্মাণ, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণসহ ইত্যাদি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। সরকারি দলের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, মানসম্মত সেবা প্রদানের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসন করে সহজ উপায়ে সরকারের সেবাসমূহ জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে এবং প্রশাসনিক কাজে গতিশীলতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বর্তমান সরকার বহুবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের প্রযুক্তি নির্ভর এ সব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে সরকারের প্রশাসনিক কাজে গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে জনগণ যেমন কম সময়ে সরকারি সেবা পাচ্ছে, তেমনি সরকারের অভ্যন্তরীণ কর্মকান্ডের দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার দলীয় অপর সংসদ সদস্য বেনজীর আহমদের প্রশ্নের লিখিত জবাবে সংসদ নেতা জানান, দক্ষতার বৃদ্ধির মাধ্যমে আমাদের বিপুল জনসংখ্যাকে বোঝার বদলে সম্পদে পরিণত করতে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা, সুদূরপ্রসারী কার্যক্রম ও গঠনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বিগত ১০ বছরে সর্বক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। এ অর্জন বাংলার জনগণের অর্জন। যারা সবাই একযোগে কাজ করেছে এবং যারা উন্নয়নে অবদান রেখেছে তাদের অর্জন। এই সাফল্যের ধারাকে আমাদের ধরে রাখতে হবে। এ জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আর এরই ধারাবাহিকতায় ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ।
×