ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধ বিদেশি কর্মীরা বছরে প্রায় ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা পাচার করছেন

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

অবৈধ বিদেশি কর্মীরা বছরে প্রায় ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা পাচার করছেন

অনলাইন ডেস্ক ॥ দেশে থাকা অবৈধ বিদেশি কর্মীরা দেশের বাইরে বছরে প্রায় ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা পাচার করছেন। অবৈধভাবে দেশে বিদেশি কর্মী নিয়োগের ফলে এমনটা হচ্ছে বলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আ জবুধবার মাইডাস সেন্টারে টিআইবির এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। ‘বাংলাদেশে বিদেশিদের কর্মসংস্থান: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘একটা সময় আমরা কৃষিনির্ভর দেশ ছিলাম। সেটা রূপান্তরিত হয়ে আজ শিল্প এবং সেবা খাতের উপর আমাদের নির্ভরশীলতা বেড়েছে। যেটা আমাদের উন্নয়নের লক্ষণ। সময়ের সঙ্গে আমাদের বিনিয়োগও বেড়েছে। তবে তা আরও বেশি হতে পারতো। তবে যেটুকু হয়েছে তা লক্ষ্য করার মতো। শিল্পের প্রয়োজনেই আমাদের এখানে বিদেশি জনবলের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। কিন্তু নানা অনিয়মের কারণে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে।’ টিআইবির গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিরা ভিসা নিয়ে দেশে অবস্থান করেন। তবে সবাই অনুমতি নিয়ে কাজ করেন না। যারা অনুমতি ছাড়া কাজ করেন, তারা মূলত পর্যটক ভিসা নিয়ে অবস্থান করেন, যার মেয়াদ সর্বোচ্চ তিন মাস। এক্ষেত্রে প্রতি তিন মাস পর পর তারা নিজ দেশে ফিরে যায়। আবার দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন করে পর্যটন ভিসা নিয়ে একই কাজে বা একই ধরনের কাজে যোগদান করেন। বাংলাদেশ পর্যটন ভিসায় আসা পর্যটকদের ৫০-৭০ ভাগ কাজের উদ্দেশে আসে বলে গবেষণা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়। গবেষণা কাজ ও প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন টিআইবির প্রোগ্রাম ম্যানেজার (রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি) মনজুর-ই-খোদা। তিনি জানান, ৪৪টির বেশি দেশ থেকে আসা বিদেশিরা বাংলাদেশে বিভিন্নখাতে কর্মরত। দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে কর্মরত রয়েছেন। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বিপুল পরিমাণে অর্থ দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। রাজস্ব আয় যা হওয়ার কথা, সেটা আমরা ব্যাপকভাবে হারাচ্ছি। এতে যারা অনিয়ম করে কাজ করছেন বা কাজ দিচ্ছেন তাদের যেমন দায় আছে, একইভাবে যাদের মাধ্যমে পর্যটন ভিসা অল্প সময়ের মধ্যে একই ব্যক্তিকে দেওয়া হয় তাদেরও দায় রয়েছে।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘নূন্যতম হিসাবে আড়াই লাখ বিদেশি কর্মী বাংলাদেশে কর্মরত থাকলেও কর অঞ্চল-১১ এ কর দেওয়া বিদেশি কর্মীদের সংখ্যা মাত্র ৯ হাজার ৫০০ জন। বাকিদের আয়ের কোনও হিসাব নেই। এর মধ্যে যে ৯ হাজার ৫০০ জন কর দিচ্ছেন তারাও আয়ের সঠিক তথ্য গোপন করছেন।’ ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘যারা রিটার্ন দিচ্ছেন, তারাও মূল আয় গোপন করে অল্প পরিমাণ রিটার্নে ঘোষণা করছেন। এতে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান ও নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তি উভয়ই লাভবান হচ্ছেন। তবে এতে রাষ্ট্র রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’ যে পরিমাণ রেমিটেন্স বিদেশ থেকে বাংলাদেশে আসে তার তুলনায় বেশি পরিমাণ অর্থ দেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন টিআইবির এ নির্বাহী পরিচালক। সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার (রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি) শাহজাদা এম আকরামসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
×