ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

৭ মাসে আয় এসেছে ২ হাজার ২৯১ কোটি ডলার

রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি

প্রকাশিত: ১১:৫০, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অর্থবছরের ৭ মাসে বড় ধরনের হোঁচট খেল পণ্য রফতানি আয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ২ হাজার ২৯১ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ২১ শতাংশ কম। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমেছে ১৩ শতাংশ। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) মঙ্গলবার পণ্য রফতানি আয়ের যে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসে প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করতে পারেনি দেশের তৈরি পোশাক খাত। চলতি অর্থবছরের ৭ মাসে ১ হাজার ৯০৬ কোটি ৩২ লাখ ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ কম। একইসঙ্গে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় কমেছে ১৩ দশমিক ৮১ শতাংশ। এদিকে একক মাস হিসেবে জানুয়ারিতে রফতানি আয় অর্জিত হয়েছে ৩৬১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২১ কোটি ৮ লাখ ডলার। ইপিবি’র প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সব ধরনের পণ্য রফতানিতে বৈদেশিক মুদ্রার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৫০ কোটি মার্কিন ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষ রফতানি আয় অর্জিত হয়েছে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ৫০ লাখ ৪ হাজার ডলার। চলতি অর্থবছর প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) রফতানির আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৬৩৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এই সাত মাসে রফতানি আয় এসেছে ২ হাজার ২৯১ কোটি ৯৪ লাখ মার্কিন ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৩ শতাংশ কম। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে রফতানি আয় অর্জিত হয়েছিল ২ হাজার ৪১৭ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। সে হিসেবে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৫ দশমিক ২১ শতাংশ। এদিকে একক মাস হিসেবে জানুয়ারিতে রফতানি আয় ও লক্ষ্যমাত্রা কোনটাই পূরণ হয়নি। জানুয়ারিতে মোট রফতানি আয় অর্জিত হয়েছে ৩৬১ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২১ কোটি ৮ লাখ ডলার। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। একইসঙ্গে ১ দশমিক ৭০ কম প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে জানুয়ারি মাসে। জানা যায়, দেশের রফতানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এই খাত থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রফতানি আয় এসেছিল ৩ হাজার ৪১৩ কোটি ৩২ লাখ ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে তৈরি পোশাক খাতে পণ্য রফতানি থেকে আয় অর্জিত হয়েছে ১ হাজার ৯০৬ কোটি ৩২ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে আয় এসেছিল ২ হাজার ২১ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। সে হিসেবে এ খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি কমার পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি তৈরি পোশাক খাত। লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ১৩ দশমিক ৮১ শতাংশ। জানতে চাইলে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, বর্তমানে পোশাক শিল্পকে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। আমরা এখন শতভাগ কমপ্লায়েন্স কারখানার দিকে হাঁটছি। কিন্তু এ খাতের কিছু সমস্যা বড় আকার ধারণ করছে। তিনি বলেন, ইউরোপের বাজারসহ অন্যান্য দেশের ক্রেতা এবং পণ্যের মূল্য ক্রমাগতভাবে হ্রাস পাচ্ছে। মজুরি, জ্বালানি, পরিবহন ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। মজুরি বৃদ্ধির ফলে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় ১৭ দশমিক ১১ ভাগ বেড়েছে। এছাড়া প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে অস্তিত্ব এবং আমাদের সক্ষমতা টিকিয়ে রাখা এখন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এজন্য রফতানি আয় সামান্য বাড়বে আবার কমবে। বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা ঠিকই পূরণ করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত সাত মাসে নিট পোশাক রফতানি থেকে আয় এসেছে ১ হাজার কোটি ১৪ ডলার। যা আগের বছরের একই সময়ের ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ কম। একইসঙ্গে লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ১১ দশমিক ৮৬ শতাংশ। অন্যদিকে ওভেন পোশাক রফতানি করে আয় হয়েছে ১ হাজার ৭ কোটি ৬ লাখ ডলার। যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ কম। পাশাপাশি ১৫ দশমিক ৭১ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ওভেনে। ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ২০ দশমিক ৮২ শতাংশ ও লক্ষ্যমাত্রা ২৬ দশমিক ২৮ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে এ খাত থেকে আয় এসেছে ৬০ কোটি ২৪ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের ৭ মাসে ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ কম প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে। এ খাত থেকে আয় এসেছে ৫৫ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রফতানি আয় কমেছে ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। গত অর্থবছর জুড়েও চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে আয় ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এদিকে গত সাত মাসে প্লাস্টিক পণ্যে প্রবৃদ্ধি কমেছে শূন্য দশমিক ৯৫ শতাংশ। এ সময়ে আয় হয়েছে ৫ কোটি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২৩ দশমিক ৫২ শতাংশ কম। গত ৭ মাসে হোম টেক্সটাইল খাতে প্রবৃদ্ধি ও লক্ষ্যমাত্রা দুটিই কমেছে। এ সময় আয় এসেছে ৪৪ কোটি ২৬ লাখ ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি মাস শেষে কৃষি পণ্য রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এ খাত থেকে আয় এসেছে ৬০ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রফতানি আয় কমেছে ৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ। অন্যদিকে আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছে ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ।
×