ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বেঙ্গলে দিলারা বেগম জলির একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ১১:১৫, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বেঙ্গলে দিলারা বেগম জলির একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিল্পী দিলারা বেগম জলির ‘জঠরলিপি’ শীর্ষক একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয় রাজধানীর বেঙ্গল শিল্পালয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। এ সময় প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত সিডসেল বেকেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বেঙ্গল ইনস্টিটিউটের পরিচালক স্থপতি মারিনা তাবাসসুম ও চলচ্চিত্রনির্মাতা শামিম আখতার। প্রদর্শনী উদ্বোধনের সময় নরওয়ের রাষ্ট্রদূত সিডসেল বেকেন বলেন, শিল্পের প্রসার ও মানবিক হবার প্রয়াসে এ ধরনের চর্চা যে কোন সমাজে দরকার। বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহারের মাধ্যমে শিল্পী নিপুণতার সাক্ষর রেখেছেন। স্থপতি মারিনা তাবাসসুম বলেন, এই প্রদর্শনীর কাজগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী এবং খুব সহজেই এই কাজগুলো আমাকে ভাবিয়েছে। আহী করেছে এর পেছনের যে গল্প বা ইতিহাস তা জানার। শিল্পী দিলারা বেগম জলি বলেন, বিশ্বের যুদ্ধের ইতিহাস অনুসন্ধান করে আমার উপলব্ধি এই যে, সকল যুদ্ধই জঠর বিনাশ করতে উদ্যত। জঠরবিনাশ যেন একটি জাতির সত্তা নষ্ট করার হাতিয়ার। শুধু ইতিহাসের পাতায়ই নয়, আমাদের আজকের জীবনযুদ্ধের চরিত্র প্রায় এক। নারী-নিগ্রহ ও অবমাননার যে ভুবনে আমরা বাস করছি, ‘জঠরলিপি’ যেন তারই একটি আখ্যান। ‘জঠরলিপি’ তাই আমি উৎসর্গ করি সকল নারীকে, যারা তাদের জরায়ুতে মানুষ বাঁচিয়ে রাখে যুদ্ধের উর্ধে মানবিক চেতনাকে সমুন্নত করে। প্রদর্শনী সম্পর্কে অন্যান্য অতিথিরা বলেন, জঠরলিপি সন্ধান করে যুদ্ধকালে নারীর অবস্থান এবং পাঠ করে লিঙ্গবিভাজনভিত্তিক ইতিহাসের ধারণাগত জটিলতা। ইতিহাস আমাদের জানায় যুদ্ধকালে নারীর প্রতি সহিংসতার চিত্র এবং পিতৃতান্ত্রিক কর্তৃত্বের ক্রমবৃদ্ধি। দিলারা বেগম জলি আমাদের আবার মনে করিয়ে দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের নারীরা কী নির্মম অত্যাচার ও নিগ্রহের শিকার হয়েছিলেন। এর প্রকাশ ঘটেছে আলোকচিত্র ও স্কেচের ওপর স্মৃতিজাগানিয়া সুচের কাজ এবং বীরাঙ্গনা রমা চৌধুরীর একটি মনোদৈহিক ভিডিও চিত্ররচনায়। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা চিত্রনে শিল্পীর এই কাজ এ নারীবাদী পরিপ্রেক্ষিতের পরাকাষ্ঠা রূপে দেখা দিয়েছে। শিক্ষাগ্রহণ চিত্রশিল্পী হিসেবে হলেও জলি অভিনয়, ভিডিওকর্ম, বাচিকশিল্পসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তার কাজের জন্য পরিচিত। কাগজে এবং সাম্প্রতিককালে আলোকচিত্রের ওপর সুচের সাহায্যে চিত্রকর্ম পরিস্ফুটনের নিজস্ব এক শৈলী তিনি গড়ে তুলেছেন। কষ্টকর শ্রমগ্রাসী ওই কাজ এগিয়ে নেয়ার সময় কাগজের ওপর তিনি এঁকে নেন চিত্রভাবনা, অথবা প্রতিচিহ্নিত করেন আলোকচিত্রের সেসব অংশ যেখানে সুচের কাজ করা হবে। তার এই ‘জঠরলিপি’র মাধ্যমে তিনি খুঁজে ফেরেন লিঙ্গস্বরূপ, মানসিক আঘাত ও নারীদেহের স্বরূপ। প্রদর্শনী চলবে ২৮ মার্চ পর্যন্ত এবং প্রতিদিন বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে। রবিবার বন্ধ থাকবে।
×