ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচী হরতালের মতোই ব্যর্থ

প্রকাশিত: ১১:১৩, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচী হরতালের মতোই ব্যর্থ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হরতালের মতো রাজধানীতে বিএনপির ডাকা থানায় থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচীও ব্যর্থ হয়েছে। কর্মসূচী ডেকে মাঠে ছিলেন না দলটির নেতাকর্মীরা। বিচ্ছিন্নভাবে কোথাও কোথাও স্বল্পসংখ্যক নেতাকর্মীর ঝটিকা মিছিল হলেও পুলিশের হাতে গ্রেফতারের ভয়ে দ্রুত সটকে পড়ে। কোন এলাকায় রাজপথ দখলে রেখে বিক্ষোভ প্রদর্শনের চেষ্টা করেননি তারা। ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে পরাজয়ের পর এ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে ২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। কিন্তু হরতাল চলাকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছাড়া কোথাও দলটির নেতাকর্মীদের তৎপরতা চোখে পড়েনি। সিনিয়র নেতারা মাঠে না নামায় সাধারণ নেতাকর্মীরাও ঘর থেকে বেরিয়ে আসেননি। বিএনপির নেতাকর্মীরা সাড়া না দেয়ায় ওই হরতাল ব্যর্থ হওয়ার পরও মঙ্গলবার রাজধানীতে থানায় থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা করে। কিন্তু সেটিও ব্যর্থ হয়। উল্লেখ্য, দুই সিটির নির্বাচনের আগেই বিএনপি নেতারা আন্দোলনের অংশ হিসেবে এ নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা বলায় এবং ভোটে পরাজয়ের পর হরতাল ডাকায় জনরোষে পড়ে দলটি। এ কারণে দলটির ডাকা হরতালকে কেউ সমর্থন করেনি। তারপরও হরতাল শেষে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দেয়ায় আরও বেশি ক্ষুব্ধ হয় মানুষ। এমনকি দলের সাধারণ নেতাকর্মীরাও এ কর্মসূচীকে সমর্থন করেনি। আর এ কারণেই এ কর্মসূচী পালন করতে তারা মাঠে নামেনি। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচানের আগে বিএনপির সিনিয়র নেতারা কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাহারা বসানোর কথা বলে হাঁকডাক দিলেও ১ ফেব্রুয়ারি ভোটের দিন তারা মাঠে ছিলেন না। এমনকি অনেক কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে এজেন্টও দিতে পারেননি তারা। এর ফলে বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মীরা হতাশ হয়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ নীরবে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে আসলেও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেনি। এর ফলে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে বিএনপিকে। অবশ্য পরাজয় নিশ্চিত হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণার আগেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের অন্য সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শনিবার রাতে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ঢাকায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালনের ঘোষণা দেয়। কোন রকম পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই এ হরতাল ডাক দেয়ার বিষয়টি দলটির সাধারণ নেতাকর্মীরাও মেনে নিতে পারেনি। তাই তারা এই হরতালে সাড়া দেয়নি। এমনকি দুই সিটিতে দলীয় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা হরতাল চলাকালে নিজ নিজ এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করার সিদ্ধান্ত নিলেও সাধারণ নেতাকর্মীরা সাড়া না দেয়ায় তা করতে পারেনি। তাই মুখ রক্ষা করতে বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন ও তাবিথ আউয়াল নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচের রাস্তায় বসে সরকারবিরোধী স্লোগান দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের চেষ্টা করেন। প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে শুরু করে সারাদেশে টানা ৯২ দিন সহিংস অবরোধ কর্মসূচী পালন করে দেশ-বিদেশে চরম সমালোচনার মুখে পড়ে বিএনপি। ওই আন্দোলনের সময় পেট্রোল বোমাসহ বিভিন্নভাবে জ্বালাও-পোড়াও হওয়ার কারণে শতাধিক মানুষ নিহত, কয়েক হাজার যানবাহন পুড়িয়ে দেয়াসহ ব্যাপক সহিংসতা হওয়ায় বিএনপির রাজনীতি সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয় সর্বমহলে। এ কারণে ওই কর্মসূচীর পর রাজপথে আর কোন কর্মসূচী সফল করতে পারেনি বিএনপি। দুই সিটির নির্বাচনের আগেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে এতে অংশ নিচ্ছে বলার পর নির্বাচনে হেরে গিয়ে হরতাল পালন করে সেটিই প্রমাণ করল বিএনপি। আর এ কারণে সাধারণ মানুষ চরম ক্ষুব্ধ হওয়ার পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও এ কর্মসূচী নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। আর এ কারণেই হাইকমান্ডের নির্দেশে হরতাল ঘোষণা করতে বাধ্য হলেও বিএনপি নেতাকর্মীরা তা পালন করতে মাঠে নামেনি। একই কারণে মঙ্গলবার থানায় থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করতেও তারা মাঠে নামেনি। এ কারণে দলটির ঘোষিত পরপর দুটি কর্মসূচীই ব্যর্থ হয়।
×