ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জোসেফ বোরেলের সঙ্গে বৈঠকে হাসান রুহানি

পরিদর্শকদের ঢুকতে দেয়া হবে না

প্রকাশিত: ০৯:২৭, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

পরিদর্শকদের ঢুকতে দেয়া হবে না

ইরান নতুন নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হলে জাতিসংঘ পরমাণু পরিদর্শক দলকে দেশটিতে ঢুকতে দেবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। সোমবার ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেন, পশ্চিমারা নতুন কোন নিষেধাজ্ঞা অথবা সমস্যা তৈরি করলে পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে জাতিসংঘ পরিদর্শক দলের প্রবেশের বিষয়টি তেহরান পুনর্বিবেচনা করবে। খবর ইরনা ও এপির। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক নতুন প্রধান জোসেফ বোরেল সোমবার হাসান রুহানির সঙ্গে সাক্ষাতকালে রুহানি এই মন্তব্য করেন। বোরেল ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক নতুন প্রধান হওয়ার পর প্রথম সফরে তেহরান যান। তার এই সফরকে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের পরমাণু চুক্তি টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টার অংশ মনে করা হচ্ছে। ২০১৫ সালে ইরান যুক্তরাষ্ট্রসহ অপর চার শক্তিধর দেশের সঙ্গে এই চুক্তি করেছিল। চুক্তিটি এখন একেবারে নাজুক অবস্থায় পৌঁছেছে। ইরান বলেছে, পশ্চিমারা প্রতিশ্রুতি পূরণ না করলে তারা যে কোন সময় এই চুক্তি থেকে বের হয়ে যাবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বছর কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়া এই চুক্তি থেকে বের হয়ে আসেন। ইরান বারবার চুক্তি থেকে বের হয়ে এসে পূর্ণদমে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করণের হুমকি দিয়েছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক পরমাণু পরিদর্শক দলের ইরানের পরমাণু স্থাপনাসমূহ পরিদর্শনের পথ রুদ্ধ হতে চলেছে। হাসান রুহানি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক পরমাণু পরিদর্শক দলের কার্যকম সোমবার পর্যন্ত কোন প্রকার বাধা ছাড়াই অব্যাহত থাকবে। তবে ইরানকে নতুন কোন ঝামেলায় ফেলানোর চেষ্টা করা হলে তেহরান এই চুক্তি মানবে না। তখন পরিদর্শক দলের কার্যক্রম ঝুঁকিতে পড়তে পারে। অবশ্য এ বিষয়ে হাসান রুহানি আর কোন মন্তব্য করতে চাননি। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র আচমকা এই চুক্তি থেকে বের হয়ে এলে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র নতুন উত্তেজনার সূচনা হয়। ওয়াশিংটন এই চুক্তি থেকে বের হয়ে এসে তেহরানের ওপর কয়েক দফা নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ইরান ইউরোপের দেশগুলোকে বোঝানোর চেষ্টা করে এসেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র বৈরিতা অব্যাহত রাখলে তেহরান এই চুক্তির শর্ত মানবে না। যুক্তরাষ্ট্র তেহরানের অপরিশোধিত তেল রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলেও দেশটির নেতারা ইউরোপে এই তেল রফতানি অব্যাহত রাখার চেষ্টা করে আসছে। এরপর মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের ক্ষমতাধর কমান্ডার কাশেম সোলেমানি নিহত হওয়ার পর তেহরান-ওয়াশিংটন উত্তেজনা আরও তুঙ্গে ওঠে। এর প্রতিশোধ নিতে ইরান প্রতিবেশী ইরাকের অবস্থানরত মার্কিন সৈন্যদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ইরান আরও হুঁশিয়ারি দেয় যে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করণের জন্য যে পরিমাণ সেন্ট্রিফিউজ প্রতিস্থাপন জরুরী ইরান যে পরিমাণ সেন্ট্রিফিউজ প্রতিস্থাপনে পিছ পা হবে না। জোসেফ ব্যারেলের সঙ্গে বৈঠকে রুহানি বলেন, ইরান সবসময়ই ইউরোপের সঙ্গে মিলে কাজ করতে আগ্রহী। তবে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অন্যান্য দেশ চুক্তির সব শর্ত মানলে ইরানও একই পথে হাঁটবে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অপর তিন দেশ ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি ইরানকে আলোচনায় ফেরাতে তৎপর হয়। বোরেল বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের দারস্থ হওয়ার বাধ্যবাধকতাসমূহ নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি ইরানী কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেছি। দেশটিকে বুঝিয়েছি-বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তিনি বলেন, ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলো পরিদর্শনের অনুমতি দেয়ার বিষয়টি আমরা ইরানকে বুঝিয়েছি। অপরদিকে ইরান অর্থনৈতিক দিকটার কথা বলেছে। আগামী সপ্তাহগুলোতে আমরা বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করব। ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি স্থগিত হয়ে যাক ইউরোপীয় ইউনিয়ন তা চায় না। কিছু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই চুক্তি টিকিয়ে রাখা যায়। বেরেল এসব বিষয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। বর্তমানে অভিশংসন ঝুঁকিতে থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে তেহরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
×