ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পলাশ সরকার

তরুণ কথাসাহিত্যিক রণজিৎ সরকার

প্রকাশিত: ১৩:৩৯, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

তরুণ কথাসাহিত্যিক রণজিৎ সরকার

রণজিৎ সরকার এ সময়ের তরুণ কথাসাহিত্যিক। একই সঙ্গে লিখছেন শিশু-কিশোরদের জন্য গল্প, উপন্যাস। শৈশব থেকে তিনি সাহিত্যে পদচারণা করছেন। প্রথম গল্পের বই ‘স্কুল ছুটির পর’ ২০১২ সালের বইমেলায় প্রকাশ হয়। প্রথম বই হিসেবে যতটুকু সাফল্য পাওয়া দরকার পেয়েছিল তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি। সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা গল্প- উপন্যাস মিলিয়ে ৫০টি। উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে- বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ব, ছোটদের বইয়ের বন্ধু বঙ্গবন্ধু, শিশু-কিশোরদের গল্পে গল্পে বঙ্গবন্ধু, ভাষা শহীদের গল্প, বীরশ্রেষ্ঠদের গল্প, গল্পে গল্পে জাতীয় চার নেতা, গল্পে গল্পে বর্ণমালা, প্রেমহীন ক্যাম্পাস, নায়িকার প্রেমে পড়েছি, ক্যাম্পাসের প্রিয়তমা, প্রেমজ্বলে ডুবে যাই, পরীর সঙ্গে দেশ ঘুরি, স্কুল ছুটির পর, ক্লাসরুমে যত কা-, ও প্রেমভূতির নিমন্ত্রণলিপি। রণজিৎ সরকার লেখালেখির নেশা থেকে পেশা হিসাবে নিয়েছেন সাংবাদিকতা। একটি জাতীয় দৈনিকে সম্পাদকীয় পাতায় কর্মরত আছেন। রণজিৎ সরকারের ছোটবেলায় একটা অভ্যাসটা ছিল নিজের চেহারাটা আয়নায় দেখা। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে ভুয়াইগাঁতী বাজারের সেলুনে ঢুকে নিজের চেহারাটা দেখতেন। সে সেলুনে পত্রিকা পড়তেন। প্রথম প্রথম পত্রিকার হাতে নিয়ে সাহিত্য আর বিনোদন পাতা চোখ বুলাতেন। সাহিত্য ও বিনোদন দেখে কখনও কখনও শিরোনামগুলো পড়ে রেখে দিতেন। ধীরে ধীরে পত্রিকা পড়ার প্রতি মনোযোগ দিতে লাগলেন। তারপর দেখেন পত্রিকার পাতায় অনেক মানুষের নাম ছাপা হয়। তার খুব ইচ্ছা হলো নিজের নামটা পত্রিকায় ছাপা অক্ষরে দেখার। কিন্তু কীভাবে কোথায় লেখা পাঠাবেন। তা কোন কিছুই জানেন না। একদিন দেখেন করতোয়া পত্রিকায় লেখা আহ্বান করেছে গল্প, কবিতা, ছড়া। তখন মাকে নিয়ে লেখা একটা কবিতা ডাকযোগ পাঠিয়ে দেন। পরের সপ্তাহে ছাপা হয়েছে। তিনি মহাখুশি। পত্রিকা টা নিয়ে বন্ধুদের দেখাতে লাগলেন। বন্ধুরা তাকে একটু অন্য চোখে দেখতে শুরু করল। তার বন্ধু শ্যালম লেখালেখির বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। তারপর বন্ধুরা মিলে কবিতা কম্পোজের পর প্রিন্ট করে ভুঁইয়াগাতী বাজারের প্রায় প্রতিটি দোকানে লাগাতেন। স্কুলের ওয়ালসহ বিভিন্ন জায়গায়। তারপর ধীরে ধীরে লিখতে লাগলেন। জাতীয় দৈনিকসহ স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে লেখা পাঠাতে লাগল। লেখা ছাপা হতে শুরু হলো। আত্মবিশ্বাস বাড়তে লাগল তার। তারপর থেকে নিয়মিত লিখছেন জাতীয় দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক, ছোটকাগজ, অনলাইনে। রণজিৎ সরকারের কাছে প্রথম লেখার অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার প্রথম লেখাটা ছিল কবিতা। কবিতাটা ছিল মাকে নিয়ে লেখা। কবিতার নাম ছিল ‘মা’। আমি একদিন পড়তে বসে মাকে কাছে ডাক দিলাম। মা আমার কাছে এলেন। মাকে বললাম, তোমাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখেছি মা। তুমি শুনবে? মা রাজি হয়ে গেলেন। আমি কবিতাটা পড়ে শুনালাম। কবিতাটা পড়া শেষ হলে মায়ের চোখের জল টপটপ করে পড়তে লাগল। আমিও কেঁদে ফেললাম। মা আমরা মাথা হাত রাখলেন। মাকে জড়িয়ে ধরলাম। ওই কবিতাটাই পত্রিকায় পাঠিয়েছিলাম। কয়েকদিন পর ছাপা হলো। এইটা আমার প্রথম প্রকাশিত লেখা।’ এবার বইমেলায় রণজিৎ সরকারে ১০টা বই প্রকাশ হচ্ছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বইগুলো ছোটদের বইয়ের বন্ধু বঙ্গবন্ধু, শিশু-কিশোরদের গল্পে গল্পে বঙ্গবন্ধু, স্কুলে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে সুমনা ও ইংরেজীতে প্রকাশ হচ্ছে একটি বই মায়ের সঙ্গে স্কুলে এবং প্রেমভূমির নিমন্ত্রণলিপি। আপনার এই বয়সে অনেকগুলো বই বের হয়েছে এবং অনেকে জনপ্রিয়ও বটে। এত সময় আপনি কি করে বের করেন, এ প্রসঙ্গে রণজিৎ সরকার বলেন, আমি নিয়ম করে প্রতিদিন লিখি। প্রতিদিন কিছু না কিছু না লিখে থাকতে পারি না। লেখালেখিটা আমার মজ্জাগত। আমার ভেতরে সব সময় লেখালেখির ভাঙা গড়ার ভাবনার কাজ করে। লেখালেখির ভাবনা ছাড়া আমি অন্য কোন কিছু অতি সহজে ভাবতে পারি না। যেমন বিশ্ববিখ্যাত লেখক গ্যাব্রিয়াল গার্সিয়া মার্কেজ বলেছেন, ‘লেখকের ২৪ ঘণ্টার চাকরি হলো, লেখালেখি করা।’ আমি লেখার কোন বিষয় পেলে, বিষয়টা নিয়ে ভাবতে থাকি লিখব কী লিখব না। যদি দেখি আমি লিখতে পারব, তাহলে ভাবতে থাকি, কীভাবে শুরু করব। চরিত্রগুলোর বৈশিষ্ট্য, সংলাপ নিয়ে ভাবি, বিভিন্নভাবে তারপর লেখা শুরু করি। আমি জনপ্রিয় কী না, তা জানি না। আমার ভেতর থেকে লেখার তাড়া দেয়, আমি লিখি। আমার দায়িত্ব লেখা, আমি লিখি। বাকিটা সময় বলে দেবে।’ আপনি ছোটদের জন্য লিখতে ভালবাসেন না, বড়দের জন্য তিনি বলেন, আমি লিখি পাঠকদের জন্য। পাঠক যে ছোট-বড় হয় তা তো কখনো ভাবিনি। তবে হ্যাঁ, যে পাঠক আজ শিশু আগামীতে পিতা। তাই আমি শিশু ও পিতার জন্য সব শ্রেণীর লেখা লিখতে চাই। আমি চাই এক পাঠকের সারা জীবন।’ লেখালেখির ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে রণজিৎ সরকার বলেন, ‘লেখালেখি করতে ভাল লাগে তাই লিখি। নেশারমতো প্রতিদিন না লিখে থাকতে পারি না। স্কুলজীবনে পরীক্ষার খাতায় জীবনের লক্ষ্য রচনাতে লিখেছিলাম ‘আমি লেখক হব।’ সে কথা মনে পড়লে আমার এখন নিজের হাসি পায়। মাঝে মাঝে ভাবি ছেলেবেলায় এত বড় দুঃসাহস ছিল আমার। এখন তো এ কথা ভেবে ভয় পাই। কারণ আমি এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি লেখক হওয়া কতো বড় কঠিন কাজ। আর ভাল মানুষ হিসেবে সৎ থেকে নিয়মিত লিখে যেতে চাই।’ আশা করি আপনার এই নিয়মিত লেখার চর্চার মাধ্যমে বাংলাসাহিত্যে ভাল কিছু সৃষ্টি হবে। যা কালজয়ী বই হিসেবে আমাদের পাঠক শ্রেণী যুগ যুগ পড়ে যাবে। আপনার সাহিত্যচর্চা অব্যাহত থাক।
×