ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভ্যাকসিন তৈরি করতে সময় লাগবে দেড় বছর

করোনা ভাইরাসে আতঙ্কিত নয়, হতে হবে সতর্ক

প্রকাশিত: ০৯:৫৩, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

    করোনা ভাইরাসে আতঙ্কিত নয়, হতে হবে সতর্ক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিনার সাবকমিটি আয়োজিত ‘করোনা ভাইরাস সম্পর্কে বহুল প্রচলিত ধারণাসমূহ এবং এই ভয়ঙ্কর সমস্যার সম্ভাব্য সমাধানের লক্ষ্যে পরিচালিত গবেষণার বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রগতি’ শীর্ষক সেমিনারে রবিবার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলেন, ‘করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় আরও উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। করোনা ভাইরাস রোগী শনাক্ত না হলেও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশে। ভাইরাসটি যাতে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি ভাইরাসটি মোকাবেলায় কি কি করণীয় রয়েছে তা দ্রুততার সঙ্গে নির্ধারণ করতে হবে। ভাইরাসটি মোকাবেলা করতে হলে ভাইরাসটির আচরণ থেকে শুরু করে সবকিছুই জানতে হবে। ভাইরাসটির ভ্যাকসিন তৈরি করতে আরও দেড় বছর সময় লাগবে।’ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাপানে কর্মরত বাঙালী বিজ্ঞানী ড. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর। সেমিনারে বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কনক কান্তি বড়ুয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক ডাঃ সৈয়দ মোজাফফ্র আহমেদ, ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সায়েদুর রহমান, হেপাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ মামুন-আল মাহতাব স্বপ্নীল, ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ সাইফ উল্লাহ মুন্সী প্রমুখ। উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় আরও উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস রোগী শনাক্ত না হলেও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সেমিনারে বিজ্ঞানী ড. শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর বলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে এবং খাবারের আগে কমপক্ষে আধা মিনিট ধরে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। তাছাড়া রাস্তাঘাটে থুতু ফেলা বন্ধ করতে হবে। এই ভাইরাসটির ভ্যাকসিন তৈরি করতে আরও দেড় বছর সময় লাগবে। তিনি আরও জানান, ভাইরাসটি স্পর্শ থেকেও সংক্রমিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভাইরাসটি মুরগির ফার্ম থেকেও সংক্রমিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অধ্যাপক ডাঃ মামুন-আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ঘন ঘন উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বর দেখা দেবে। জ্বরের পর দীর্ঘমেয়াদী কাশি থাকবে। শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। আতঙ্কিত নয়, হতে হবে সতর্ক এদিকে করোনা ভাইরাস নিয়ে বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আয়োজন করে ঢাকা শিশু হাসপাতাল। সেমিনারে করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্কতা অবলম্বনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন বিশেষজ্ঞরা। সেমিনারে ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক (ডাঃ) সৈয়দ সফি আহমেদ বলেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত নয়, সর্বোচ্চ মাত্রার সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এই ভাইরাসটি একজন মানুষের দেহ থেকে আরেকজন মানুষের দেহে দ্রুত ছড়াতে পারে। করোনা ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ^াসতন্ত্রের মাধ্যমেই এটি একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। রোগটির লক্ষণ সম্পর্কে পরিচালক বলেন, জ¦র এবং কাশি থাকে। শ^াসকষ্ট এবং নিউমোনিয়ায় ভুগবে। ভাইরাসটি শরীরে ঢোকার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় পাঁচ দিন লাগে। প্রথম লক্ষণ হচ্ছে জ¦র। তারপর দেখা দেয় শুকনা কাশি। এক সপ্তাহের মধ্যে দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট। এই ভাইরাস থেকে প্রতিকার সম্পর্কে পরিচালক বলেন, যেহেতু এই ভাইরাসটি নতুন, তাই এর কোন টিকা বা ভ্যাকসিন এখনও নেই এবং চিকিৎসাও লক্ষণ ভিত্তিক। তবে যারা ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছে বা এই ভাইরাস বহন করেছে- তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। বার বার হাত ধোয়া, হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করা, ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক পরতে হবে। এই মুহূর্তে আমাদের প্রয়োজন আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক হওয়া। সেমিনারের মূল প্রবন্ধে ডাঃ মির্জা মোঃ জিয়াউল ইসলাম করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বনের বিভিন্ন কৌশল আলোকচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, যত বেশি পারেন আপনার কণ্ঠনালীকে ভিজিয়ে রাখুন। কোন অবস্থাতেই শুষ্ক হতে দেয়া যাবে না। অর্থাৎ তৃষ্ণা পেলেই পানি পান করুন। কণ্ঠনালী যদি শুষ্ক থাকে তবে মাত্র দশ মিনিটেই আপনি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। চট্টগ্রামের তিন হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট এদিকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, চীনে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের সম্ভাব্য সংক্রমণ ঠেকাতে চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন। তিনটি হাসপাতালে খোলা হয়েছে আইসোলেশন ইউনিট। এছাড়া বিমানবন্দর ও সমুদ্র বন্দরেও গ্রহণ করা হয়েছে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাস শনাক্তে শাহ আমানত বিমানবন্দরে দুই চিকিৎসকের স্থলে ছয়জন করা হয়েছে। তারা প্রতিদিন দুই শিফটে দায়িত্ব পালন করছেন। সমুদ্রগামী জাহাজের মাধ্যমে যেন এই ভাইরাস ছড়াতে না পারে সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে চট্টগ্রাম কর্তৃপক্ষ। সেখানেও কাজ করছে চার চিকিৎসকের সমন্বয়ে গড়া একটি মেডিক্যাল টিম। জরুরী প্রয়োজনের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে একটি সি এ্যাম্বুলেন্স। এছাড়া খোলা হয়েছে তথ্য কেন্দ্র, যেখান থেকে করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যাবে। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডাঃ শেখ ফজলে রাব্বি জানান, এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কোন রোগী শনাক্ত না হলেও প্রয়োজনীয় সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা রয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৫টি, ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) ৫টি এবং চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৪টি বেডের ব্যবস্থা রেখে আইসোলেশন ইউনিট খোলা হয়েছে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে বিশেষভাবে সতর্কতা রয়েছে চীনা নাগরিক এবং চীন থেকে আসা নাবিকদের ওপর। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর এলাকা ও ইপিজেডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চীনা নাগরিকদের এখন দেশে যাওয়ার জন্য ছুটি দেয়া হচ্ছে না। ছুটিতে যারা গেছেন তাদের এখন না ফেরার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে চীনের কোন সরাসরি ফ্লাইট নেই। কিন্তু তারপরও কানেক্টিং ফ্লাইটে বা চীন থেকে অন্য দেশ হয়ে আসা যাত্রীদের নজরে রাখা হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম বন্দরে অনেক জাহাজের আসা যাওয়া রয়েছে, যেগুলো চীনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
×