ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল কম

প্রকাশিত: ১০:৪৫, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

নির্বাচনে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল কম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শান্তিপূর্ণ ভোটেও এবার ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নারী ভোটারের উপস্থিতি কম ছিল। তবে যারা ভোট দিতে এসেছেন তারা নির্বিঘেœ ভোট দিয়ে বাসায় ফিরে গেছেন। সকালের দিকে নারী ভোটারের উপস্থিতি তেমন চোখে পড়েনি। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুপুরের পর বেশিরভাগ কেন্দ্রে কিছুসংখ্যক নারী ভোটার দেখা গেছে। অনেক নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের পক্ষে বাসায় গিয়ে ক্যাম্পেন হয়নি বললেই চলে। বেশিরভাগ নারীর কাছে ঢাকার প্রার্থীরা ভোট চাননি। শুধু মেয়র নয়, কাউন্সিলর প্রার্থীদের গণসংযোগ ছিল অনলাইন কেন্দ্রিক। প্রার্থীদের সঙ্গে এবার ভোটারদের কোন আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়নি। এই কারণে নারীদের কোন আগ্রহও ছিল না। এদিকে, পুরান ঢাকার নারিন্দা স্কুলে ভোট দিতে এসেছিলেন সালমা আক্তার। তিনি জানান, এই ওয়ার্ডের একজন কাউন্সিলর প্রার্থী তার আত্মীয়, এ কারণেই তিনি ভোট দিতে এসেছেন। তার বাসায় আরও দুজন নারী ভোটার আছেন, তারা ভোট দিতে আসবেন না। তিনি জানান, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচার ছিল রাস্তাঘাটে। সরাসরি নারীদের কাছে গিয়ে ভোট চায়নি বেশিরভাগ প্রার্থী। আর এ কারণে নারীদের মধ্যে ভোট নিয়ে কোন আগ্রহ তৈরি হয়নি। অন্যদিকে, কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই সিটি নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন খিলগাঁও, শাজাহানপুর এবং রামপুরার বাসিন্দারা। তবে এই অঞ্চলের নারী ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি সবচেয়ে কম দেখা গেছে। শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন ভোটাররা। এ আট ঘণ্টায় একটি নারীকেন্দ্রে ভোট পড়েছে মাত্র ১২ শতাংশ। অঞ্চলটির আরও দুটি কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ২০ শতাংশের কম। তবে ভোটারদের উপস্থিতি কম হলেও দিনভর ভোটের পরিবেশ ছিল বেশ ভাল। ভোটের পরিবেশ নিয়ে প্রার্থীদের পক্ষ থেকে যেমন কোন অভিযোগ আসেনি তেমনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন অঞ্চলটির বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসাররা। রামপুরার একটি নারী ভোটকেন্দ্র হলো গ্রীন গার্ডেন। কেন্দ্রটির মোট ভোটার সংখ্যা এক হাজার ৫৮৯ জন। এর মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন ১৯০ জন। অর্থাৎ কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ১১ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এ ভোটের মধ্যে নৌকার প্রার্থী আতিকুল ইসলাম পেয়েছেন ৯৩ ভোট। ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল পেয়েছেন ৮৬ ভোট। এছাড়া পূর্ব রামপুরা হাইস্কুল কেন্দ্রের মোট ভোটার দুই হাজার ২৯৭ জন। এর মধ্যে ভোট পড়েছে ৩৮৫টি। অর্থাৎ ১৭ শতাংশ ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এর মধ্যে নৌকার প্রার্থী আতিকুল ইসলাম পেয়েছেন ১৭১ ভোট। ধানের শীষের তাবিথ আউয়াল পেয়েছেন ১৮২ ভোট। রামপুরার অপর নারী ভোটকেন্দ্র আম্বার প্রিপারেটরি স্কুল। কেন্দ্রটির এক হাজার ৬৮৪ ভোটারের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ২৪১ জন। অর্থাৎ মোট ভোটারের ১৪ শতাংশ ভোট দিয়েছেন। এর মধ্যে নৌকার প্রার্থী পেয়েছেন ১২৯ ভোট এবং ধানের শীষের প্রার্থী পেয়েছেন ৮০ ভোট। পূর্ব রামপুরা হাইস্কুল ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মামুন মোল্যা বলেন, ভোটারদের উপস্থিতি কম হলেও ভোটের পরিবেশ ছিল খুব ভাল। এখানে কারও কোন অভিযোগ নেই। ভোটাররা এসে সুন্দর পরিবেশে ভোট দিয়ে গেছেন। রেডলিফ ইন্টারন্যাশনাল ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার সাজেদুল ইসলাম বলেন, আমাদের কেন্দ্রে সব প্রার্থীর এজেন্ট ছিল। ভোটাররা নির্বিঘেœ ভোট দিয়েছেন। এদিকে, ভোটের দিন নগরীতে যেন ছুটির আমেজ বিরাজ করছিল। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় বাড়ির গৃহকর্তারাও ছিলেন ছুটির আমেজে। অনেকে ভোট দিতে না গিয়ে বাসায় ভাল রান্নাবান্না করে উৎসব করেছেন। কেউ বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। খিলগাঁও তিলপাপাড়ার বাসিন্দা কামরুন নাহার জানান, ভোটের বিষয়টি তিনি গুরুত্বের সঙ্গে নেননি। তার স্বামীও তাকে ভোট দিতে যেতে উৎসাহ দেখায়নি। তিনি বলেন, ভোট না দিয়ে বাসায় ভাল রান্নাবান্না করা হয়েছে। বাচ্চাদের সঙ্গে টিভি দেখে ভাল সময় কাটানো হয়েছে। তিনি বলেন, মশার ওষুধ ছিটানো, ময়লা আবর্জনা, স্যুয়ারেজ লাইনের অব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন কারণে সিটি কর্পোরেশনের ওপর নগরবাসী বিরক্ত। নগরবাসী মৌলিক সেবা পাচ্ছে না। ডেঙ্গুসহ নানা রোগে ভুগছে নগরবাসী। অথচ সিটি কর্পোরেশন থেকে ওষুধ ছিটানো হয় না। আর এসব কারণে নারীরা এই নির্বাচনে ভোট নিয়ে আগ্রহ দেখায়নি।
×