ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইভিএমে আতিক তাপসের সন্তোষ, শঙ্কা তাবিথ ইশরাকের

প্রকাশিত: ১০:৪৩, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ইভিএমে আতিক তাপসের সন্তোষ, শঙ্কা তাবিথ ইশরাকের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা দিনের শুরুতেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন স্ব স্ব কেন্দ্রে। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা জয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করলেও বিএনপির প্রার্থী প্রকাশ করেন শঙ্কার কথা। ইভিএম নিয়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা সন্তোষ প্রকাশ করলেও সেখানেও নানা শঙ্কার কথা বলেন বিএনপির দুই প্রার্থী। শনিবার সকাল আটটার একটু পরই উত্তরা-৪ নম্বর সেক্টরে নওয়াব হাবিবুল্লাহ স্কুল এ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেন আতিকুল ইসলাম। এ সময় তার সঙ্গে পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন। এছাড়া সকাল ৮টা ৫ মিনিটে গুলশান-২ নম্বরে আল মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল কেন্দ্রে ভোট দেন তাবিথ আউয়াল। আতিকুল ইসলাম তার কেন্দ্রের প্রথম ভোটটিই দেন। এরপর তিনি বলেন, আমার ইচ্ছা ছিল এই কেন্দ্রের প্রথম ভোটটি আমি দেব। ইভিএমে ভোট দেয়া খুবই সহজ। ইভিএমে ভোট দিতে পেরে আমি সন্তুষ্ট। হাতে কোন কালি লাগেনি। আশা করি, জনগণ আওয়ামী লীগকে নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। জনগণ নৌকায় ভোট দিলে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সাধ্যমতো সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়ে তুলব। নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আতিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনে এক পক্ষ জিতবে আর এক পক্ষ হারবে। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। ফলাফল যাই হোক তা আমি মেনে নেব। যদি জনগণ ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করে তবে আমি চেষ্টা করব প্রতিপক্ষের ইশতেহারে যদি ভাল কিছু থাকে তা নিয়েও কাজ করে যাওয়ার। আর যদি আমি নির্বাচনে নাও জিততে পারি তবে সেক্ষেত্রেও আমি আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করব জয়ী প্রার্থীর সঙ্গে। এদিকে, ভোট দেয়ার পর প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, আমার মা যে ইভিএম মেশিনটিতে ভোট দিতে গিয়েছিলেন সেটি ব্রেকডাউন হয়ে গেছে। কোন এক কারণে সেটা এখনও ঠিক করতে পারেনি। এছাড়া দিনের শুরুতেই বিভিন্ন কেন্দ্রে আমাদের পোলিং এজেন্টদের ঢুকতে দেয়া হয়নি বলে শুনেছি। আমি সেগুলো কেন্দ্রে যাব। তিনি আরও বলেন, প্রতিটি এলাকায় নির্বাচন কমিশনের ম্যাজিস্ট্রেট থাকার কথা। কিন্তু আমি কোন ম্যাজিস্ট্রেট দেখিনি। মেশিন ব্রেকডাউন হয়েছে এখনও ঠিক হয়নি। সার্বিক পরিস্থিতি যা দেখছি, সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে আমরা হয়ত যাচ্ছি না। তারপরও আমি ভোটারদের আহ্বান জানাচ্ছি যে, আপনার ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিন। যেভাবেই হোক ভোটের মাধ্যমে আজ আমরা জয়লাভ করব। এদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের শেষে শনিবার বিকেলে ভোটগ্রহণ শেষে গ্রীন রোডে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তাপস বলেন, আমরা গণসংযোগে যখন গিয়েছি আশা করেছিলাম যে আরও ভোটার উপস্থিতি থাকবে। কারণ যে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পেয়েছিলাম এবং আশা করেছিলাম সকলে এসে ভোট দেবে। তবুও যারা ভোট দিতে এসেছেন তাদের কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। এক বছর আগেই একটা জাতীয় নির্বাচন হলো। ওই নির্বাচনে সবার আগ্রহ থাকে। এখানে যেহেতু স্থানীয় সরকার নির্বাচন, এজন্য আগ্রহ কম হতে পারে। আবার ছুটির সময়ে অনেকে ঢাকা ও দেশের বাইরে যেতে পারেন। তবুও সব মিলিয়ে ৪০ শতাংশ ভোট হতে পারে, যেমনটা আমি দেখেছি বলেন তিনি। ভোটের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ জানিয়ে তিনি সুষ্ঠু ও সন্ত্রাসমুক্ত নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ধন্যবাদ জানান। তিনি আরও বলেন, ঢাকাবাসীকেও ধন্যবাদ জানাব তারা অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। আমি আশাবাদী আমরা উন্নত ঢাকা গড়ার যে রূপরেখা দিয়েছি সেটা ঢাকাবাসী সাদরে গ্রহণ করেছে এবং তারই প্রতিফলন হিসেবে নৌকা মার্কাকে বিজয়ী করে তারা সেবক হিসেবে আমাকে নির্বাচিত করবে। নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে তিনি বলেন, খুব সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন হয়েছে। আমরা কিছুটা আশঙ্কা করেছিলাম যে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ হতে পারে, সহিংস ঘটনা ঘটতে পারে। একদমই সহিংস ঘটনা ঘটেনি। সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ছাড়াই একটি সুন্দর, উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এজন্য সকল সংস্থাকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কয়েক জায়গায় ইভিএমে সমস্যার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শেখ তাপস বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এই প্রথম ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে। এটি খুবই সহজ পদ্ধতি ভোট দেয়ার। আমি নিজেও প্রথম দিলাম, খুবই ভাল লেগেছে। কিছু অভিযোগ আমরা পেয়েছি। যেহেতু এটি যান্ত্রিক এবং তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর একটি যন্ত্র সেখানে অনেক সময় হ্যাং হয়ে যায়। এ কারণে অনেকে সঠিক সময়ে ভোট প্রদান করতে পারেনি। এ রকম কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সার্বিকভাবে এটার ভাল দিকও রয়েছে। কারণ ভোটার শনাক্তকরণের বিষয়টি খুব ভাল। এখানে জাল ভোট দেয়ার কোন সুযোগ নেই। ব্যালট পেপার ছিনতাই, ব্যালট বাক্স নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে অনেক সময়। ইভিএমে এমন কোন সুযোগ নেই। সুতরাং এটা ভাল। দায়িত্ব পেলে ঢাকাবাসীকে দেয়া প্রতিশ্রুতি যথাযথভাবে পালনের কথা জানান ফজলে নূর তাপস। এর আগে শনিবার সকালে ধানম-ি কামরুন্নেসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। ভোট শেষে তিনি বলেন, জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী। জনগণ যে রায় দেবে সেই রায় মেনে নিতে আমি প্রস্তুত। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইভিএমকে একটি সহজ ও আধুনিক পদ্ধতি বলেন তিনি। তাপস বলেন, আমি সকালেই বেশ কিছু কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট প্রয়োগ করছেন। কোথাও কোন অঘটন এখনও ঘটেনি। আশা করছি, সারাদিনই মানুষ শান্তিপূূর্ণ পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। জনগণ আমাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে এই আশা করি। ইভিএম প্রসঙ্গে তাপস বলেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) খুব সহজভাবেই ভোট দিলাম। এই প্রথম আমি ইভিএমে ভোট দিলাম। তিনি আরও বলেন, যখন গণসংযোগ করেছি। তখন দেখেছি ঢাকাবাসীকে ইভিএম নিয়ে তাদের মধ্যে কোন শঙ্কা ছিল না। এটাকে ঢাকাবাসী সাদরে গ্রহণ করবে এবং উন্নত নগরী করার জন্য নৌকায় ভোট দেবে। বিরোধী প্রার্থীরা অভিযোগ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তাপস বলেন, আমি মনে করি তাদের সেই সাংগঠনিক শক্তি, কাঠামো নেই বলেই তারা আমাদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। এটি সম্পূর্ণ অমূলক একটি অভিযোগ। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) তাপসের ব্যবস্থা ভাল সুন্দর মনে হলেও বিষয়টি নিয়ে অনাস্থার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। সকাল ৯টার দিকে ছোট ভাই ইশফাক হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে গোপীবাগের শহীদ শাহজাহান প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জীবনের প্রথম ভোট দেন ধানের শীষের প্রার্থী। ইশরাকের মা ঢাকার প্রয়াত মেয়র সাদেক হোসেন খোকার স্ত্রী ইসমত আরা খোকা সকাল ৯টায় ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব কেন্দ্রে ভোট দেন। ভোট দিয়ে বেরিয়ে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের ইশরাক বলেন, আমি আজকে আমার জীবনের প্রথম ভোট দিলাম। এর আগে আমার ভোট দেয়ার সুযোগ হয়নি। ইভিএমের ভোট নিয়ে জানতে চাইলে ইশরাক বলেন, আমি ইভিএমে ভোট দিতে পেরেছি। কিন্তু কিভাবে ভোট দিতে হয় তা আমাকে তিনবার কমিশনে গিয়ে বুঝে আসতে হয়েছে। তাহলে আমাদের যে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, সাধারণ মানুষ যারা কোন দিন এই মেশিন দেখেনি তারা কিভাবে ভোটটা দেবে? মানুষকে তো অভ্যস্ত হতে হবে, সেটা তো তৈরি হয়নি। জোর-জবরদস্তিমূলক ইভিএমে ভোট হচ্ছে। আমাদের অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়ে এসেছি, এখন দেখা যাক কী হয়। আজকের দিনটা তো একটা পরীক্ষা। ইশরাক আরও বলেন, আমরা যে আশঙ্কাগুলো প্রকাশ করে আসছিলাম, ইভিএমের ভেতরে ত্রুটিযুক্ত প্রোগ্রামিং করা হয়ে থাকতে পারে যাতে পক্ষপাতিত্বমূলক ভোটগ্রহণ হয়।
×