ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাতজন হাসপাতালে বাকিরা হজ ক্যাম্পে

উহান থেকে ৩১২ জনকে বিমানে ফেরত আনা হলো

প্রকাশিত: ১০:৪১, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

উহান থেকে ৩১২ জনকে বিমানে ফেরত আনা হলো

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কঠোর নিরাপত্তা ও সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে উহান থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে ৩১২ বাংলাদেশীকে। তাদের মধ্যে শরীরে তাপমাত্রা কিছুটা বেশি থাকায় ৭ জনকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের নেয়া হয়েছে আশকোনা হজক্যাম্পের কোয়ারাইন্টানে। অবশ্য এদের ছয় জনের এই মুহূর্তে জ্বর নেই বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। শুধু একজনের কাশি রয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় বিমানবন্দর স্বাস্থ্য ইউনিট জানিয়েছে, সকালের দিকে তাদের শরীরে সামান্য জ্বর থাকলেও সন্ধ্যার দিকে সেটাও কমে আসে। তারপরও তাদের হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমদও একই তথ্য জানিয়েছেন। ছয় জনের জ্বর না থাকলে তাদের কেন ভর্তি করা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন এদের জ্বরের হিস্ট্রি রয়েছে। একই ফ্লাইটে আসা গর্ভবতী এক নারীকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ শাহরিয়ার সাজ্জাদ। তিনি বলেন, একজন নারীকে ভর্তি করা হয়েছে। তার সঙ্গে স্বামী ও সন্তান রয়েছে। এ সম্পর্কে শাহজালাল বিমানবন্দরের এভসেক পরিচালক উইং কমান্ডার ওবায়দুর রহমান জানিয়েছেন, শনিবার বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটে ৩১২ বাংলাদেশীকে বহনকারী উড়োজাহাজটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ওই ফ্লাইটটি আউটার বে -তে রাখা হয়। সেখান থেকে সরাসরি আটটি বাসে করে তাদের হজক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাদের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা হয়েছে। এবং লাগেজ বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। বিমানবন্দরে অবতরণের পর পর তাদের কাছাকাছি কাউকে যেতে দেয়া হয়নি। কমপক্ষে দুহাত দূরে অবস্থান করে তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা দেয়া হয়েছে। তারা সবাই ভাল আছেন। এদিকে হজক্যাম্প অফিস সূত্র জানিয়েছে, উহান থেকে ফেরা শিক্ষার্থীরা আপাতত স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন না। বিমানবন্দর থেকে অত্যন্ত সতর্কতা ও কঠোর নজরদারিতে তাদের আশকোনা হজক্যাম্পে আনা হয়। সেখানে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থায় তাদের রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্যগত পরীক্ষার জন্য ১৪ দিন পর্যন্ত তাদের সেখানে রাখা হতে পারে। চীন থেকে ফেরত আসাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা প্রসঙ্গে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরের পরিচালক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আমরা আশা করছি ফেরত আসা বাংলাদেশীদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত কেউ নেই। তারপরও আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। হজ ক্যাম্পে তাদের রাখা হবে। সেখানে আমাদের চারটি মেডিক্যাল টিম থাকবে। তাদের সেখানে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা ও নির্ধারিত ১৪ দিনের মতো পর্যবেক্ষণে রাখার পর ফেরত আসা বাংলাদেশীরা বাড়ি ফিরতে পারবেন। এ সম্পর্কে বিমানের উপ-মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার জানান, উহান শহরের তিয়ানহি ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দর থেকে শনিবার সকাল পৌনে ১০টায় (বাংলাদেশ সময় সকাল পৌনে ৮টায়) ৩১২ জন বাংলাদেশীকে নিয়ে বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইট রওনা দেয়। বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজটি বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। বিমানবন্দরে ‘হেলথ স্ক্রিনিংয়ের পর ৭ জনকে পাঠিয়ে দেয়া হয় হাসপাতালে। বাকি ৩০৪ জনকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তত্ত্বাবধানে আশকোনা হজক্যাম্পে সদ্য স্থাপিত আইসোলেশন ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে দেশে ফেরার কথা থাকলেও দুজন বাংলাদেশীকে নিয়ে আসা যায়নি বিমানের বিশেষ এই ফ্লাইটে। শরীরে জ্বর থাকায় তাদের চীনেই রেখে আসা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুশতাক হোসেন। আশকোনা হজ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার পর স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, দেশে ফিরিয়ে আনা ৩১২ জনের ৭ জনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা আগামী দুই সপ্তাহ হজক্যাম্পে থাকবেন। সেখানে ‘আইসোলেশন ইউনিটে’ তাদের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে ৩১২ জন আজ এসেছেন, তাদের মধ্যে ২৯০ জন পুরুষ, ১০ জন নারী, বাকি ১২টি শিশু। শিশুদের মধ্যে তিন জনের বয়স এক বছরেরও কম। তিনি বলেন, উহান থেকে ফিরে আসা ৩১২ জনের মধ্যে বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর তিনজনের গায়ে ১০০ ডিগ্রী জ্বর পাওয়া যায়। বাকি পাঁচজনের ঠা-া ও কাশি রয়েছে। তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাদের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ চিকিৎসা প্রদান করা হবে। ৭ জনের মধ্যে একজন নারী থাকায় তার স্বামী ও সন্তান স্বেচ্ছায় হাসপাতালে গেছেন। ৮ জনের মধ্যে একজনের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তির কথা রয়েছে। আশকোনা হজ ক্যাম্পে নেয়া ৩০২ জনকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে হজ ক্যাম্প ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় বিভিন্ন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। তারা সকলেই সুস্থ রয়েছেন।
×