ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা ভাইরাস রোধে প্রস্তুত চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ

প্রকাশিত: ০৯:৫৭, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

করোনা ভাইরাস রোধে প্রস্তুত চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সমুদ্র পথে দেশের আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যের দ্বার চট্টগ্রাম বন্দর। আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়ে থাকে এ বন্দর দিয়ে। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় চীনা পণ্য। এ কারণে, প্রতিদিন চীনা পণ্য বোঝাই হয়ে বিভিন্ন দেশের পতাকাবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসছে, যার মধ্যে চীনা পতাকাবাহী জাহাজও রয়েছে। চীনের করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ^ব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে চীনে দুশ’র বেশি লোকের মৃত্যুর কারণে আতঙ্ক দিন দিন বাড়ছে। তাই সমুদ্রগামী জাহাজের মাধ্যমে মরণঘাতী এই ভাইরাস যাতে ছড়াতে না পারে, সে লক্ষে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নাবিকের পরির্চযায় বন্দর মেডিক্যাল বিভাগের বিশেষ টিমকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতালের উদ্যোগে ভাইরাসটির সংক্রমণ প্রতিরোধের লক্ষ্য মৌলিক সুস্থতা অনুশীলনের নানাবিধ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বন্দরের হারবার ও মেরিন দফতরে ইতোমধ্যে এক জরুরী সভায় সমুদ্রপথে করোনা ভাইরাস প্রবেশ প্রতিরোধে জাহাজের ক্যাপ্টেন এবং এজেন্টের মাধ্যমে জাহাজ বহির্নোঙরে আসার সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ে যথাযথ ঘোষণা দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বন্দরে আসা জাহাজের মাস্টারকে পোর্ট লিমিটে আসার সঙ্গে সঙ্গে ঘোষণা দিতে হবে যে, ওই জাহাজে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত নাবিক নেই। এছাড়া পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো থেকে আসা জাহাজগুলোতে শতভাগ নাবিকের পোর্ট হেলথ অফিসার স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে নিরাপদ ঘোষণা করলেই বন্দরে ঢোকার অনুমতি দেয়া হবে। করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, নোংরা হাত দিয়ে নাক, কান ও মুখম-ল স্পর্শ না করা, আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে দূরে থাকা ইত্যাদি বিষয়ে সতর্কীকরণ প্রচরের জন্য নৌ, ট্রাফিক, নিরাপত্তা বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত নিজ কক্ষে বা ঘরে অবস্থান, অন্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ পরিহার, সংক্রমণ প্রতিরোধ মাস্ক ব্যবহার এবং কর্মক্ষেত্র পরিষ্কার রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। জাহাজ থেকে হাসপাতালে দ্রুত রোগী স্থানান্তরের জন্য বন্দরের এ্যাম্বুলেন্স শিপ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বন্দর ইমিগ্রেশন ডেস্কে পোর্ট হেলথ অফিসারের তত্ত্বাবধানে একটি মেডিক্যাল টিম সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে। কোন নাবিক বাইরে যেতে চাইলে মেডিক্যাল স্ক্রিনিংয়ে সুস্থতা সাপেক্ষেই শুধু অনুমতি দেয়া হবে। এছাড়া সতর্কতামূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে মাস্ক ও অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সবাইকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। থার্মাল স্ক্যানার নেই লালমনিরহাট ॥ এদিকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরে করোনা ভাইরাস বিষয়ে সতর্কতা জারির পরও স্বাস্থ্য কর্মীরা খালি চোখে ও হাত দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন। এখানে করোনা ভাইরাস শনাক্তের থার্মাল স্ক্যানার বসানো হয়নি। করোনা ভাইরাসে চীনে মহামারী আকার ধারণ করেছে। ভারত ও নেপালে করোনা ভাইরাস রোগ শনাক্ত হয়েছে। এ পথে ভারত, নেপাল ও ভুটানের যাত্রীরা বাংলাদেশে যাতায়াত করে। জানা গেছে, চীনের প্রতিবেশী দেশ ভারত ছাড়াও নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের ত্রিদেশীয় বাণিজ্যিক সম্পর্কের প্রাণকেন্দ্র লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর। শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যই নয়, এ স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন ব্যবহার করে প্রতিদিন প্রায় অর্ধসহস্রাধিক পাসপোর্টধারী যাত্রী ভারত, নেপাল ও ভুটানে যাওয়া আসা করে। যার বেশিরভাগই চিকিৎসা করাতে ও শিক্ষার্থী হিসেবে যাতায়াত করেন। এছাড়াও এসব দেশের শত শত পণ্যবাহী ট্রাকের চালক সহকারী চালক প্রতিদিন বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। দেশের চালকরাও ভারতে প্রবেশ করছে। সবমিলে ত্রিদেশীয় প্রবেশ পথও ধরা হয় বাংলাদেশের বুড়িমারী ও ভারতের চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দরকে। এমন গুরুত্বপূর্ণ এ প্রবেশ পথে স্বাস্থ্যকর্মীরাই হাত দিয়ে ও খালি চোখে প্রাথমিক পরীক্ষা করেই যাত্রীদের ছেড়ে দিচ্ছেন। চিকিৎসকদের ভাষ্য মতে, করোনা ভাইরাস শরীরের প্রবেশের দুই সপ্তাহ পরে লক্ষণ বা প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায়। ভাইরাস প্রবেশের ১৪ দিন আগে কোনো লক্ষণ বোঝার উপায় নেই। এক্ষেত্রে ভাইরাস শনাক্তে থার্মাল স্ক্যানারে স্ক্যানিংয়ের বিকল্প নেই। কিন্তু এমন গুরুত্বপূর্ণ পথে কোনো থার্মাল স্ক্যানার বসানো হয়নি। জরুরী ভিত্তিতে থার্মাল স্ক্যানার বসানোর দাবি উঠেছে। সরকারীভাবে বুড়িমারী স্থলবন্দরে করোনা ভাইরাসের সতর্কতা জারি করে স্বাস্থ্যকর্মীদের চার সদস্যের একটি দল নিয়ে মেডিক্যাল টিম বসানো হয়েছে। সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীরা যাত্রীদের জ্বর, সর্দি হয়েছে কী না? এবং স¤প্রতি সময় চীনে সফর করেছেন কিনা? এসব প্রশ্ন করে থাকে। এরপর তারা যাত্রীদের শরীরের বাহ্যিক অবস্থা দেখেই স্বাস্থ্য বিষয়ে ছাড়পত্র দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছেন। তবে দেশে ভিতরে পণ্য বোঝাই ট্রাক প্রবেশ ও বাইর হওয়া ট্রাকচালক এবং শ্রমিকদের কোন রকম পরীক্ষা করা হচ্ছে না। ফলে বাংলাদেশে এ ভাইরাস বহনকারী মানুষ প্রবেশের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। লালমনিরহাটের সিভিল সার্জন ডাঃ কাসেম আলী জানান, বুড়িমারী ও ভারতের চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দর চেকপোস্ট দিয়ে চীনা নাগরিক আসার যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। সে কারণে শরীর স্ক্রিনিং যন্ত্রপাতি বসানো হয়নি। দেয়া হয়নি থার্মাল স্ক্যানার। ৪ সদস্যের মেডিক্যাল টিম স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ করছে। তবে প্রয়োজন হলে অবশ্যই থার্মাল স্ক্যানার বসানো হবে।
×